শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ঘিরে ক্রমশ নাটকীয় মোড় নিচ্ছে রাজ্য রাজনীতি। শোভন তৃণমূলে ফিরলে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতেও রাজি রত্না চট্টোপাধ্যায়। বুধবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে এমনটাই জানিয়েছেন শোভন-পত্নী। এ প্রসঙ্গে বেহালা পূর্ব ও ১৩১নং ওয়ার্ডের তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর রত্না বলেছেন, ‘‘শোভনবাবু যদি তৃণমূলে ফিরে এসে বলেন রত্নাকে সরিয়ে দাও, আমিই দেখব। তাহলে আমি হাসিমুখে ফিরে আসব। শোভনবাবু দায়িত্ব নিক আমরা সকলে চাই’’। একইসঙ্গে রত্না বলেছেন, ‘‘আলোচনার জন্য শোভনকেই কথা বলতে হবে। বৈশাখীর কথা দল শুনবে না’’।
ঠিক কী বলেছেন রত্না চট্টোপাধ্যায়?
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে এ প্রসঙ্গে রত্না বলেন, ‘‘শোভনবাবুকে সরিয়ে আমাকে তো তৃণমূল বিধায়ক বানায়নি, আমাকে শুধু পর্যবেক্ষক হিসেবে রাখা হয়েছে। দলের কাজ ঠিক হচ্ছে কিনা, সেটা দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দল আমায় দায়িত্ব দিয়েছে আমি তা পালন করব’’। এরপরই শোভন-পত্নী বলেন, ‘‘শোভনবাবু যদি ফিরে এসে বলেন, আমিই করব, রত্নাকে সরিয়ে দাও, আমি হাসিমুখে ফিরে আসব। শোভনবাবু দায়িত্ব নিক আমরা সকলে চাই। দল তো ওঁকে তাড়ায়নি। উনি স্বেচ্ছায় বিজেপিতে গেলেন। বিজেপিতে যাওয়ার পরও দল ওঁকে বহিষ্কার করেনি। তৃণমূল ওঁকে অনেক সুযোগ দিয়েছে’’।
আরও পড়ুন: ‘করোনায় কানন যেন সাবধানে থাকে’, বৈশাখীকে পরামর্শ উদ্বিগ্ন মমতার
এ প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে আমরা কোনও প্রতিক্রিয়া দেব না। শোভনও বলেছেন, রত্নার কথায় কোনও প্রতিক্রিয়া দেব না। যা সিদ্ধান্ত নেব তা উচ্চনেতৃত্বকে জানাব’’।
আরও পড়ুন: শোভন একদমই নিস্তেজ নয়, মনে হয় না রাজনৈতিক শোকবার্তা লেখার সময় এসেছে: বৈশাখী
উল্লেখ্য, পুরভোটের আগে গত শনিবার শোভনের ওয়ার্ড ও কেন্দ্র দেখভালের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় রত্নার হাতে। এর জেরে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন কার্যত অনিশ্চিত হয়ে গেল বলে ব্যাখ্যা রাজনীতির কারবারিদের একাংশের। এরপরই মঙ্গলবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়ে ঘণ্টা দুয়েক বৈঠক করেন শোভন-বান্ধবী তথা বিজেপির সদস্য বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘রত্না তৃণমূলে থাকলে শোভন ফিরবে না’, এ বার্তাই ফের তৃণমূল মহাসচিবকে জানানো হয় বলে খবর। পরে সংবাদমাধ্যমে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘শোভন তো এখনও বলেনি যে রত্না থাকলে ও থাকবে না, আগে বলুক তারপর দেখব’’। এই প্রেক্ষিতে রত্না চট্টোপাধ্যায়ের এহেন মন্তব্য এ পর্বে নয়া মাত্রা এনে দিল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
আরও পড়ুন: মমতার গুণ রয়েছে…আমার মা ওঁকেই ভোট দিয়েছিল: রূপা
অন্যদিকে, বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে এদিন রত্না বলেন, ‘‘ওঁর (শোভন) কথা উনিই বলুন, উনি ৫৬-৫৭ বছরের ভদ্রলোক, বাচ্চা ছেলে নয়, ওঁর কথা বৈশাখীর মুখ দিয়ে মানায় না। বৈশাখীকে আইনত বিয়ে করেননি, রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গীও নন’’। এরপর রত্না আরও বলেন, ‘‘শোভনের মুখ থেকে আজ পর্যন্ত কখনও একথা শোনা যায়নি যে রত্না থাকলে উনি তৃণমূলে ফিরবেন না। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ই এসব বলছেন। শোভন তো আলোচনাতেই আসছেন না। এজন্য শোভনকেই কথা বলতে হবে। বৈশাখী দলের কেউ নন, ওঁর কথা দল শুনবে না’’।
এ প্রসঙ্গে বৈশাখী পাল্টা বলেন, ‘‘কার সঙ্গে কী আলোচনা হয়েছে উনি তো জানেন না। আমার মাধ্যমে শোভন যোগাযোগ রাখছেন, এটা ভাবার কোনও কারণ নেই’’।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন