Advertisment

মতুয়াদের নাগরিকত্ব ইস্যুতে শান্তনুর মানভঞ্জনে ঠাকুরবাড়িতে কৈলাস

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাশ হয়ে যাওয়ার বছর ঘুরলেও এখনও তা কার্যকর হওয়ার নাম নেই। ইদানীং দলের উপর 'গোঁসা' হয়ে দলীয় কর্মসূচি থেকে দূরত্ব তৈরি করেছেন মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

বঙ্গে ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই বেসুরো শোনাচ্ছে একাধিক শাসকদলের নেতা-নেত্রীকে। কারও নেতৃত্বের উপর অভিমান, কারও আবার ভোটকৌশলী প্রশান্ত কিশোরের উপর রাগ। সবমিলিয়ে তপ্ত শাসকশিবির তৃণমূল কংগ্রেস। আর সেই আঁচে রাজনীতির পঞ্চব্যঞ্জন রাঁধতে ব্যস্ত বিরোধীরা। কিন্তু বেসুরো বিরোধী শিবিরের নেতারাও। গেরুয়া শিবিরেও বিদ্রোহের ছাই চাপা আগুন। আর সেই আগুনে জল ঢালতে নেমে পড়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারাও।

Advertisment

কথা হচ্ছে, বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরকে নিয়ে। সম্প্রতি দলের উপর বিরক্তি প্রকাশ করেছেন তিনি। বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থী মতুয়াদের নাগরিকত্ব নিয়ে সরব হয়েছেন মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি শান্তনু। ইদানীং দলের উপর 'গোঁসা' হয়ে দলীয় কর্মসূচি থেকে দূরত্ব তৈরি করেছেন। ভাই সুব্রত ঠাকুরকে নিয়ে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় একাধিক মিছিল-সমাবেশ করেছেন নাগরিকত্ব আইন কার্যকরের দাবিতে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাশ হয়ে যাওয়ার বছর ঘুরলেও এখনও তা কার্যকর হওয়ার নাম নেই। যে মূল দাবিতে তৃণমূলের থেকে মুখ ফিরিয়ে পদ্মে শরণ নিয়েছেন মতুয়ারা, সেই নাগরিকত্ব নিয়ে এখন ফুঁসছেন তাঁরা। ঠাকুরবাড়িতেও বিক্ষোভের আবহ। দুই ভাগ হয়ে গিয়েছে ঠাকুরবাড়ি। একদিকে মমতাবালা ঠাকুর, যিনি বলছেন বিজেপি প্রতারণা করেছে মতুয়াদের সঙ্গে। আরেকদিকে শান্তনুরা। যিনি এখন আবার বেসুরো হয়েছেন দলের বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন নাড্ডার কনভয় হামলায় বাংলার ৩ IPS-কে সেন্ট্রাল ডেপুটেশনে তলব কেন্দ্রের

আগামী ১৯ ডিসেম্বর দুদিনের সফরে রাজ্যে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। যা শোনা যাচ্ছে, বনগাঁয় সভা করতে পারেন শাহ। তার আগে শনিবার ঠাকুরবাড়িতে হাজির হলেন বঙ্গ বিজেপির পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। সভার আগে প্রস্তুতি ঘুরে দেখার অছিলায় আসলে শান্তনুর মানভঞ্জনের উদ্দেশেই হাজির হয়েছেন কৈলাস। বিজেপি সূত্রে দাবি, শান্তনুকে বোঝাতে পেরেছেন কৈলাস। সম্প্রতি, রাস উৎসবের সময়ে উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার ঠাকুরনগরে সারা ভারত মতুয়া মহাসংঘের নতুন কমিটি গঠন উপলক্ষে আয়োজিত সভায় নাগরিকত্ব আইন প্রয়োগ নিয়ে মতুয়া সমাজের হতাশা ব্যক্ত করেন শান্তনু। এও বলেন যে, ‘‘নাগরিকত্বের জন্য কেন বার বার আমাদের ভিক্ষা চাইতে হচ্ছে? কেন বার বার আন্দোলন করতে হচ্ছে? কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূল, বিজেপি, সকলের কাছে আমরা ভিক্ষা চেয়েছি। অধিকার কেউ দেবে না। অধিকার আদায় করে নিতে হবে।’’

ইতিমধ্যে মতুয়াদের সমস্যা নিয়ে আসরে নেমে পড়েছে তৃণমূল। গত ১০ ডিসেম্বর গোপালনগরের জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আপনাদের প্রথম দাবি ছিল মতুয়া উন্নয়ন পর্যদ। সেউ দাবি মানা হয়েছে। বাউড়ি, নমঃশূদ্রের পাশাপাশি মতুয়াদের জন্য উন্নয়ন পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। সেখানে ইতিমধ্যে ১০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। কমিটির সদস্যদের নাম দেওয়া হলে আমি কাজ শুরু করে দিতে পারব।’ মতুয়াদের দাবি ছিল শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথিতে ছুটি। সেই দাবিও এদিন মেনে নিয়েছেন মমতা। বলেছেন, ‘প্রতি বছর মধুকৃষ্ণ ত্র‌য়োদশীতে হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মদিন পালিত হয়। তবে বছরে কোন দিন এই তিথি পড়ছে তা নতুন বছর শুরুর ৬ মাস আগে যখন ক্যালেন্ডার তৈরি হয় তখন জানিয়ে দিতে হবে।’ পাঠ্যপুস্তকে হরিচাঁদ ঠাকুর ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের জীবনী, তাঁদের বাণী যাতে থাকে এমন দাবি করেছিলেন মতুয়ারা। সেই দাবি ইতিমধ্যে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন মমতা সরকার উপড়ে ফেলে যোগ্য় জবাব দেবে মানুষ’, হুঙ্কার সিন্ধিয়ার

সভা থেকে মতুয়াদের জন্য একাধিক ঘোষণার পর শান্তনুর বক্তব্যে অস্বস্তি বঙ্গ বিজেপিতে। মধুকৃষ্ণ ত্র‌য়োদশীতে রাজ্য সরকার ছুটি ঘোষণা করায় সিদ্ধান্ত স্বাগত জানিয়ে তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন, ছুটি ঘোষণা একটি ভাল পদক্ষেপ। এই অবস্থায় প্রমাদ গোনে বিজেপি। তড়িঘড়ি অমিত শাহের সফরের আগেই ঠাকুরবাড়িতে এসে শান্তনুর ক্ষোভ প্রশমনের বন্দোবস্ত করেন কৈলাস। আশ্বাস দেন, জানুয়ারি থেকেই নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। এবার শান্তনু কী করেন সেটাই দেখার।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

caa Kailash Vijayvargiya Bongaon Santanu Thakur
Advertisment