নির্বিকার পুলিশ, ছাপ্পা-রিগিং, বোমাবাজি, এজেন্ট-সহ প্রার্থীদের ব্যাপক মারধর। কলকাতা পুরভোট নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগের অন্ত নেই। রাস্তায় রাস্তায় জটলা, ছোট-বড় জমায়েত তো চোখে পড়েছেই। বুথ কেন্দ্রগুলিকে কেন্দ্র করেই জমায়েতের সূত্রপাত প্রায় সর্বত্র। ভিড় সরানোর কারও দায়িত্ব ছিল বলে মনেও হল না। 'অবাধ' ও 'শান্তিপূর্ণ' ভোট প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনায় মশগুল রাজনৈতিক মহল।
৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের খান্না হাইস্কুল ও টাকি গভর্ণমেন্ট বয়েজ হাইস্কুলের বুথের কয়েক মিটারের মধ্যে বোমাবাজি প্রকাশ্যে এনেছে ভোটের হালহকিকতকে। কিন্তু এটা যে শুধু ট্রেলার ছিল তা সারা দিনের নানা ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। ভোট প্রক্রিয়ায় অনিয়ম সংক্রান্ত একাধিক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যে ভিডিওগুলি রাজ্য নির্বাচন কমিশন খতিয়ে দেখবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এদিন তুলনামূলক ভাবে মধ্য কলকাতায় ভোট চিত্র অনেকটা পৃথক ছিল। উত্তর ও দক্ষিণে দিনভর ভোটের উত্তাপ লক্ষ্য করা গিয়েছে। মধ্য কলকাতায় শাসক-বিরোধী শিবিরের বুথ ক্যাম্প পাশাপাশি থেকেছে, চপ-মুড়ি লেনদেনও হয়েছে। হাসি-মশকরাও চলেছে দুই যুযুধান পক্ষের কর্মীদের মধ্যে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে কলকাতায় বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেসের বুথ ক্যাম্প সেভাবে চোখে পড়েনি। বিরোধীদের কথায়, এজেন্টদের বুথ থেকে বের করে দিচ্ছে, প্রার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে, সেখানে বুথ ক্যাম্প করে বসার সাহস কোথা থেকে পাবে কর্মীরা।
আরও পড়ুন- পুরভোটে সন্ত্রাসের অভিযোগ, আদালতে বাম-বিজেপি
এদিন ভোটপ্রহসনের অভিযোগ তুলে কোথাও পথ অবরোধ তো কোথাও থানায় বিক্ষোভ হয়েছে। নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট জানিয়েছে, বুথ দখলের অভিযোগ নেই। অভিজ্ঞ মহলের মতে, কলকাতা পুর নির্বাচনের প্রতিটি বুথের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করলেই ভোটপ্রক্রিয়ার প্রকৃত দৃশ্য স্পষ্ট হবে। তবে বিভিন্ন বুথের ভিতরের গন্ডগোলের ছবিতে যা দেখা গিয়েছে তাতে ভোটের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
কলকাতার বিভিন্ন ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থীদের এজেন্টদের দাপাদাপি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। হাতিবাগান সংলগ্ন এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্দল প্রার্থী বলেন, 'আমি এবারের বিধানসভা নির্বাচনেও নির্দল প্রার্থী হিসাবে লড়াই করেছিলাম। সাড়ে ৫শো ভোট পেয়েছি। এবার পুরভোটেও প্রার্থী হয়েছি। এখানে ২৩টি বুথেই আমার এজেন্ট রয়েছে।' বুথে বেশ সক্রিয় দেখা গেল এই নির্দল প্রার্থীকে। সব বুথেই এজেন্ট, তাহলে আপনি তো ভাল ভোট পাবেন? এই প্রশ্ন শুনে হেসে গড়াগড়ি অবস্থা ওই প্রার্থীর। তাঁর জবাব, 'জেতার জন্য কী প্রার্থী হয়েছি নাকি? বাকিটা বুঝে নিন।' এভাবেই বুঝেছে কলকাতার একাধিক ওয়ার্ড। রাজনৈতিক মহলের মতে, নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়ে, বুথে এজেন্ট দিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলকে ভোটপর্বের শুরুতেই মানসিক চাপে ফেলে দেওয়ার কৌশল অনেক দিনের। তারপর দিনভরের ভোটপ্রক্রিয়া তো রয়েছে। এখনও সমানে সেই ট্রাডিশন চলছে।
সামনেই রাজ্যের শতাধিক পুরসভার নির্বাচন। তার আগে কলকাতার পুরভোট নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠে গেল। জোর যার মুলুক তার, এটা নতুন কোনও কথা নয়। বাম আমলেও কলকাতা পুরসভার ভোটের দিনে রাস্তায় রাস্তায় অস্ত্রের ঝলকানি মানুষ দেখেছে। এদিন ভোটপ্রক্রিয়া বাতিলের দাবিতে বামপ্রার্থীরা রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখিয়েছে, সে দৃশ্য়ও দেখেছে কলকাতাবাসী। দাবি-পাল্টা দাবি ও 'অবাধ' ভোটপ্রক্রিয়ার ধারা প্রত্যক্ষ করে মুচকি হাসছে অভিজ্ঞ মহল।
ইন্ডিয়ানএক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন