রাজ্যে পুরভোটে জয়ের রেকর্ড সৃষ্টি করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আসন প্রাপ্তির বিচারে দ্বিতীয়ের মর্যাদা পায়নি নির্বাচন কমিশন নথিভুক্ত কোনও রাজনৈতিক দল। নির্দলরাই এবার রাজ্যের পুরভোটে দ্বিতীয় হয়েছে। তারপর এক একে রয়েছে বিজেপি, কংগ্রেস ও বামেরা। তবে প্রথম আর দ্বিতীয়ের ব্যবধানও আকাশ-পাতাল। তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে ১৭২৮ আসন। নির্দলদের প্রাপ্তি ১১৬টি আসন। অন্যদিকে বিজেপি ৬৫, কংগ্রেস ৫৭ ও বামেদের মোট আসনপ্রাপ্তি ৫৬। তৃণমূল কংগ্রেস একাই একশো দুটি পুরসভায় ক্ষমতা দখল করেছে। তবে শতাংশের হিসাবে বিজেপি ও বাম দুটি দলই প্রায় ১৩ শতাংশ করে ভোট পেয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের ১০ মাসের মধ্যে বিজেপির শক্ত ঘাঁটিগুলিতেও ধ্বস রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
উত্তরবঙ্গ, জঙ্গলমহলের মানুষ ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ঢেলে ভোট দিয়েছিল। দক্ষিণবঙ্গেও বেশ কয়েকটি লোকসভা আসনে জয় পেয়েছিল গেরুয়া শিবির। তারপর ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে ৭৭টি আসনে জয় পেয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে বিজেপিকে। পরবর্তীতে কলকাতা ও চার পুরনিগমের ভোটে ফলাফল খারপ হতে শুরু করে। চূড়ান্ত ভরাডুবি হল ১০৮ পুরসভার নির্বাচনে। পুরসভা দখল তো দূরের কথা, নিজেদের গড়েও অত্যন্ত খারাপ ফল করেছে বিজেপি। বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই নিজেদের ওয়ার্ড বা বুথে পরাজিত হয়েছেন। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, এই ফলের পর কীভাবে নিজেদের সংগঠন ধরে রাখবে বিজেপি? কর্মীদের দলে রাখতে বেগ পেতে হবে বলে মনে করছে তাঁরা। যদিও এই পুরনির্বাচন ও তার ফলাফলকে মান্যতা দিচ্ছে না বিজেপি।
সব থেকে বড় বিষয় এবারের নির্বাচনে নির্দলদের জয়। এই লেখা পর্যন্ত খবর, ১১৬টি আসনে জয় পেয়েছে নির্দলরা। তার মধ্যে দার্জিলিংয়ের নয়া দল হামরো রয়েছে। তিন মাসের এই দল ১৭টি আসন পেয়ে দার্জিলিং পুরসভার দখলে নিয়েছে। বিজেপি, বাম ও কংগ্রেসকে ছাপিয়ে গিয়েছে নির্দলদের জয়। আর এই নির্দলরা প্রায় প্রত্যেকেই বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কংগ্রেস। রাজনৈতিক মহলের মতে, জয়ী নির্দলরা ঘাসফুল শিবিরেই ভিড়বে। কলকাতা কর্পোরেশনে জয়ী তিন বিক্ষুব্ধ নির্দলকে দলে না নেওয়ার ঘোষণা করেছিল দলেরী শীর্ষ নেতৃত্ব। তখন কড়া বার্তার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু রাজ্যের সমস্ত পুরভোট সম্পূর্ণ। এবার নির্দলদের দলে ফেরাতে পারে বলে মনে করছে অভিজ্ঞ মহল।
বঙ্গ রাজনীতিতে নথিভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলিকে পিছিয়ে ফেলে নির্দলদের এই ফলাফলে ভিরমি খাচ্ছেন রাজনীতির কারবারিরা। বিজেপি নেতৃত্ব মনে করে তাঁদের দল বিশ্বের বৃহত্তম। কংগ্রেস শতাব্দী প্রাচীন। বামেরা ৩৪ বছর ক্ষমতায় ছিল এই রাজ্যে। তাঁদেরকে দ্বিতীয় স্থানের লড়াইয়ে ছিটকে দিল নির্দলরা। রাজনৈতিক মহলের মতে, এরা প্রায় সবাই স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। টিকিট না পেয়ে এঁরা পুরভোটে প্রার্থী হয়েছে। দল যতই বিক্ষুব্ধ প্রার্থীকে শাস্তির ঘোষণা করুক স্থানীয়স্তরে দলের কর্মীরা তাঁদের পাশে থেকেছেন বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছে। জয়ী নির্দলদের অনেকেই নিজেদের তৃণমূল বলেই ঘোষণা করছে। প্রশ্ন উঠেছে, কী এমন পরিস্থিতি হল যে নির্দল প্রার্থীরা টেক্কা দিল রাজনৈতিক দলগুলিকে। তবে বিরোধীরা এবারের ভোটকে স্বীকৃতি দিচ্ছেন না। ছাপ্পা, রিগিং, সন্ত্রাসের অভিযোগ থেকে সরছেন বিরোধীরা। তবে তৃণমূল এসব বিষয়কে পাত্তা দিতেই নারাজ। এমন ফলাফলের পরে কীভাবে ফের সংগঠন মজবুত করতে পারবে বিরোধীরা সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। কারণ যে কটা আসনে বিরোধী প্রার্থীরা জয় পেয়েছে সেখানে সংগঠন ব্য়াপক শক্তিশালী বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বিরোধীরা কর্মীদের মনোবল ফেরাতে কী ধরনের কর্মসূচি নয়ে সেটাও এখন দেখার।