নির্দল প্রার্থীর ফ্লেক্স-ব্যানার ছিঁড়ে দিন। ঝেঁটিয়ে বিজেপি প্রার্থীকে বিদায় করুন। তিন রাস্তার কোনও স্ট্যাম্পহীন নেতা না। এই হুমকি দিলেন খোদ তৃণমূলের জেলা সভাপতি। তা-ও প্রকাশ্যে। যা শুনে তাজ্জব বনগাঁবাসী। সামনের রবিবার পুরভোট। তার আগে এদিনই ছিল শেষ রবিবার। রাজ্যজুড়েই প্রচারের ঝড় স্বভাবতই ১০৮টি পুরসভাতেই তুঙ্গে। আর, সেই পারদ সপ্তমে তুলে দিলেন বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি আলোরানি সরকার।
শনিবার রাতে বনগাঁ পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী দিলীপ দাসের সমর্থনে প্রচার চালাচ্ছিলেন আলোরানি। তাঁর দলের নেতারা যখন উন্নয়নের ওপর ভর করে, মানুষের আস্থার ওপর ভর করে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের বুলি আওড়াচ্ছেন, সেই সময় মাটির কাছাকাছি রাজনীতি করা আলোরানি সরকারের মুখে শোনা গেল উলটো বুলি। যে ভাষায় স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা কথা বলেন, হুমকি দেন বলে বারবার বিরোধীরা রাজ্যজুড়ে অভিযোগ করছেন, ঠিক সেই ভাষা। ঠিক সেই ভাষাই শোনা গেল বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতির মুখেও। পথসভা থেকে আলোরানি সরকার খোলাখুলি বললেন, নির্দেশ দিলেন দলীয় কর্মীদের- 'নির্দল প্রার্থীর ফ্লেক্স-ব্যানার ছিঁড়ে দিন। বিজেপি প্রার্থীকে ঝাঁটাপেটা করুন।'
'এটা নির্বাচন হচ্ছে! এটা গণতন্ত্র!' রাজ্যের চার পুরসভার নির্বাচনের দিন ১২ ফেব্রুয়ারি, দিনভর এই ভাবেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিরোধীরা। প্রশ্ন তুলে নিজের সন্দেহ যেন নিজেই মেটাতে চেয়েছেন। ঠিক সেই বিস্ময় নিয়েই আলোরানি সরকারের প্রকাশ্যে হুমকিকে দেখছেন নির্দল প্রার্থী কবিতা বালা। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের এই নির্দল প্রার্থী তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলর। অসহায়ের সুরে কবিতা বালা বললেন, 'আলো দেবী আমায় হুমকি দিয়েছেন। আমার ব্যানার- পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার কথা বলেছেন। যে এমন বক্তব্য রাখেন, তাঁর সম্পর্কে আর কী বলা যায়!'
আরও পড়ুন আনিস খান মৃত্যুরহস্য: হাওড়া গ্রামীণের পুলিশ সুপারকে ভবানী ভবনে তলব
বিজেপি প্রার্থী জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ শুধু আলোরানি না, তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। জ্ঞানপ্রকাশ অবাক হচ্ছেন না। তাঁর কথায়, 'এটাই তো ওঁনাদের অভিরুচি। উনি যেমন দলে আছেন, তেমন কথাই বলেছেন।' আর আলোরানি সরকার? তিনি কী বলবেন? নির্বাচনী উত্তেজনায় মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে কথাটা- এই বলে ক্ষমা চাইবেন তো?
আরও পড়ুন ‘কোথায় গেল আই-প্যাক?’ পিকের এজেন্সিকে তুলোধনা কল্যাণের
'না! কীসের ক্ষমা?' তিরিক্ষি মেজাজে আলোরানি বুঝিয়ে দিলেন, তিনি যা বলার জ্ঞানতই বলেছেন। মুখ ফসকে বেরিয়ে যাওয়ার ব্যাপারই নেই। তৃণমূল জেলা সভাপতির সোজা কথা, 'এতদিন ধরে তৃণমূল করেছে। এখন টিকিট না- পেয়ে নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তৃণমূলের ফ্লেক্স পর্যন্ত ব্যবহার করছে। সেই জন্য এই কথা বলেছি। আর বিজেপি! বিজেপির থেকে আমরা কোনও কথা শিখব না।' যা শুনে ভয়ে কাঁপছেন বনগাঁবাসী। রবিবার, নিজের ভোটটা নিজে দিতে পারব তো? ভোট দিতে গেলে কোনও গন্ডগোল হবে না- তো? এই আশ্বাসটুকুই এখন একবারের জন্য হলেও পেতে চাইছেন বনগাঁবাসী।