কাঁথি পুরসভার মুখ্য প্রশাসক পদ থেকে শুভেন্দুর ভাই সৌমেন্দু অধিকারীকে অপসারণ করার পরই এ নিয়ে মুখ খুললেন সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী। অধিকারী পরিবারের সেজো ছেলে এই অপসারণকে অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন। জানিয়েছেন, কাঁথি পুরসভার সঙ্গে গত ৫০ বছর ধরে যুক্ত অধিকারী পরিবার। কিন্তু এরপর পুরসভায় তাঁর যে দফতর রয়েছে সেখানে আর যাবেন না দিব্যেন্দু। তবে এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করেননি তমলুকের তৃণমূল সাংসদ।
শুভেন্দু গেরুয়া শিবিরে কাঁথির শান্তিকুঞ্জের বাকি বাসিন্দারা কী করবেন তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। অধিকারীরা কি তৃণমূলেই থাকবেন না কি শুভেন্দুর পথ অনুসরণ করবেন তা নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়। এর মধ্যে মঙ্গলবারও খড়দহের সভা থেকে শুভেন্দু চ্যালেঞ্জ করেছেন, রামনবমীতে তাঁর বাড়িতেও পদ্ম ফোটাবেন। অধিকারীদের নিয়ে জল্পনার মধ্যেই কাঁথি পুরসভার প্রশাসক পদ থেকে শুভেন্দুর ছোট ভাই সৌমেন্দুকে অপসারণ করা হল। রাজ্যের পুর ও নগরোয়ন্নন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এই মর্মে নির্দেশিকা জারি করেছেন। সৌমেন্দুর জায়গায় প্রাক্তন কাউন্সিলর সিদ্ধার্থ মাইতিকে প্রশাসক পদে বসানো হয়েছে।
সিদ্ধার্থ মাইতিকে প্রশাসক পদে বসানোর জেরে দিব্যেন্দুর মন্তব্য, “যাকে প্রশাসক পদে বসানো হয়েছে তিনি এলাকার ভোটারই নন। প্রায় ৫০ বছর ধরে কাঁথি পুরসভার সঙ্গে আমাদের পরিবারের সম্পর্ক। পুরসভায় আমার একটি অফিস ছিল। সেখানে আর যাব না ভাবছি। এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করছি।” তবে কি তিনিও এবার বিজেপির পথে? তা নিয়ে জল্পনা উড়িয়ে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করেছেন সাংসদ। বলেছেন, "আমি তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ। আমার বাবা জেলা সভাপতি। দিদির প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে।"
আরও পড়ুন জোড়া-ফুলের সঙ্গে কোন ‘কিশোর কুমার’ যুক্ত? জানালেন শুভেন্দু
প্রসঙ্গত, শুভেন্দুর দলত্যাগের পরে সৌমেন্দুকে নিয়ে ‘সন্দেহ’ দানা বাঁধে। মমতার মেদিনীপুরের সভা এবং কাঁথিতে তৃণমূলের সভায় অনুপস্থিত ছিলেন শিশির-দিব্যেন্দু ও সৌমেন্দু। সন্দেহের জায়গা তৈরি হওয়াতেই অপসারণ, বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। এদিন তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন শুভেন্দু। বলেন, “মাননীয় ভাইপোর রাগ হয়েছে। এখনও বাসন্তী পুজো আসেনি। রামনবমী হয়নি। সবে তো এখন পদ্ম কুড়ি ফুটেছে। পদ্ম ফুটবে তো। রামনবমীতে ফুটবে। আমার বাড়ির লোকেরা পদ্ম ফোটাবে। তোমার বাড়িতে ঢুকেও পদ্ম ফোটাব। হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটেও পদ্ম ফুটবে।”
আরও পড়ুন ‘তোমার বাড়িতে ঢুকেও পদ্ম ফোটাব’, শুভেন্দু নিশানায় ‘ভাইপো’
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এদিনই সৌমেন্দুকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ায় শুভেন্দুর মন্তব্য নিয়ে জল্পনা ছড়িয়েছে। তাহলে কি সত্যিই রামনবমীতে বিজেপিতে যোগ দেবেন অধিকারী পরিবারের বাকি সদস্যরা? এর আগে মুকুল রায় তৃণমূল ছাড়ার পর তাঁর ছেলে শুভ্রাংশু রায় কিন্তু প্রথমে দলেই ছিলেন। পরবর্তীকালে লোকসভা নির্বাচনে দলের হয়ে সংগঠনের কাজও করেন। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় তৃণমূলের ভরাডুবি হতেই দলে অসম্মানিত হওয়ার অভিযোগ তুলে বাবার মতো বিজেপিতে যোগ দেন শুভ্রাংশু। সেই ঘটনারই মতো মনে করা হচ্ছে, দিব্যেন্দু-সৌমেন্দুদের বিজেপিতে যোগদান এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। তবে বর্ষীয়ান শিশির অধিকারীর ক্ষেত্রে সেই সম্ভাবনা কম। তিনি হয়তো রাজনীতি থেকে অবসর নিতে পারেন বলে গুঞ্জন।