ভাই-বোনের বাহ্যিক লড়াই চলছে! ২০২১ সালে বাংলায় তৃণমূল সরকারই থাকবে। এ ব্যাপারে ৯০ শতাংশ নিশ্চিত ফুরফুরা শরিফের প্রধান ত্বহা সিদ্দিকি। সাধনা নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন চাঞ্চল্যকর দাবিই করেছেন পীরজাদা। একইসঙ্গে ত্বহা সিদ্দিকি জানালেন, ‘‘হতে পারি আমরা সংখ্যালঘু, কিন্তু নবান্ন-রাইটার্সের চাবি আমাদের হাতেই’’। তিনি রাজনীতি করলে, রাইটার্সে বসার জন্য লড়তেন, আর সে ক্ষেত্রে টক্কর দিতেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। এমন কথাই শোনা গেল ত্বহা সিদ্দিকির মুখে।
‘সংখ্যালঘু হতে পারি, তবে নবান্নের চাবি আমাদের হাতেই’
ত্বহা সিদ্দিকি বলেন, ‘‘সংখ্যালঘু, সংখ্যাগুরু কথাটা শুনতে লজ্জা লাগে। সংখ্যালঘু হতে পারি আমরা। তবে মসনদের চাবি, নবান্নের চাবি, রাইটার্সের চাবি, কিন্তু আমাদের হাতেই। আমরাই ফ্যাক্টর। যার জন্য মুসলিমদের নিয়ে সকলে টানাটানি করেন। আজ তৃণমূল সরকার আছে, অথচ ৫ শতাংশ ভোট যদি সরে যায়, শেষ হয়ে যাবে ওরা। মালিক (আল্লা) আমাদের সম্মান দিয়েছেন। মালিক বলেছে, সংখ্যালঘু হতে পারিস, ব্যথা পাস না, মসনদের চাবি তোদের হাতেই। তোরা যদি মনে করিস, তৃণমূল ভাল চালাচ্ছে না, তাহলে ভোট সিপিএমকে দে’’।
আরও পড়ুন: ‘মমতাকে মিসইউজ করেছেন মুকুল রায়’
২০২১ সালে বাংলার মসনদে কে?
ফুরফুরা শরিফের প্রধান ত্বহা সিদ্দিকি বলেন, ‘‘২০২১ সালে তৃণমূল সরকারই ৯০ শতাংশ থাকবে। আমাদের কাছে অনেক খবর রয়েছে। ভাইবোনের বাহ্যিক লড়াই। যেমনটা সিপিএম-কংগ্রেসের লড়াই ছিল। সিপিএম ৩৪ বছর ক্ষমতায় ছিল মানুষের ভোটে এবং কংগ্রেসের দয়ায়। আমি ভুলও হতে পারি। তবে এটা আমি মনে করি’’।
আরও পড়ুন: ‘আমি যতদিন জীবিত আছি, বাংলায় সিএএ-ডিটেনশন ক্যাম্প করতে দেব না’
src="https://www.youtube.com/embed/aGG9xUO0wBg" width="100%" height="415" frameborder="0" allowfullscreen="allowfullscreen">
ফ্যাক্টর: আসাদুদ্দিন ওয়েইসির এআইএমআইএম?
ফুরফুরা শরিফের প্রধানের মতে, ‘‘লক্ষ লক্ষ মানুষকে বলা হয়ে গিয়েছে, আসাদুদ্দিন ওয়েইসিকে নিয়ে মূল সিদ্ধান্ত নিইনি। ওয়েইসি বাংলায় আসার পরে হিন্দু-মুসলমানের একতা কতটা ধরে রাখা যাবে, সেটা ভাবতে হবে। উনি আসার পর সাম্প্রদায়িক শক্তি কতটা ফায়দা পাবে, সেটাও ভাবতে হবে। উনি আসার পরে বাংলার সম্প্রীতি থাকবে কিনা জানতে হবে। অর্থাৎ ২০২১ সালে আসাদুদ্দিনকে নিয়ে ভাববেন না। যদি ওকে ভোট দিতে হয়, আমি ডিক্লেয়ার করব। আমি নিজে ভোট দেব। আর ভোট না দেওয়ার দরকার হলে সেটাও বলে দেব। একজনের উপর রাগ করে আরেকজনকে আনলাম, আর সে আসার পরে কতটা শান্তিতে থাকতে পারব, সেটাও ভাবতে হবে! রাজনৈতিক নেতাদের দেখে গিরগিটিরাও লজ্জা পায়’’।
আরও পড়ুন: ‘মমতাকে মোদী খামোস খেতে বলেছে’, বিস্ফোরক ত্বহা সিদ্দিকি
ত্বহা কি রাজনীতি করেন?
ত্বহা সিদ্দিকে বলেন, ‘‘একটা দল বলে, ধর্মকে রাজনীতির সঙ্গে মিশিয়ে দেবেন না। মনে হয় তিনি খোলাখুলি বলতে পারেন না। ধর্ম ছাড়া রাজনীতি হয় না। রাজনীতি ছাড়া ধর্ম হয় না। এখানে মানুষকে ভুল বোঝানো হয়েছে। ভুল ধারণা এটা। আমি যদি রাজনীতি করতাম, তাহলে টক্কর হত মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। আমি বিধায়ক, সাংসদ হওয়ার জন্য লড়তাম না। যদি রাজনীতি করতাম তাহলে রাইটার্সে বসার জন্য পদক্ষেপ করতাম। আমি জীবনে রাজনীতি করিনি। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত রাজনীতি করব না। যতদিন বাঁচব অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ব। আমি যদি শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্য ভাবি, তাহলে মুসলমান নই আমি। একটা হিন্দু যদি শুধু হিন্দুদের জন্য বলে, তবে সে হিন্দু নয়। আমি যদি আপনার মাকে সম্মান না করতে পারি, তাহলে কী করে আমার মাকে সম্মান করব? আমার মেয়েকে প্রথম শিক্ষা দিয়েছি, মানুষকে ভালবাসার। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারের সার্টিফিকেট দরকার নেই। আমার মেয়ে যদি ডাক্তার হয়, ও হিন্দু-মুসলমান সকলের চিকিৎসা করতে পারবে। (উল্লেখ্য, ত্বহা সিদ্দিকির কন্যা ডাক্তারি পড়ুয়া) ডাক্তার এ জন্য বানিয়েছি ওকে, যাতে সে মানুষসেবা করতে পারে’’।
আরও পড়ুন: ‘ভোটার আইডি-রেশন কার্ড লাগবে না’, তাহলে কীভাবে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে? জানালেন দিলীপ ঘোষ
‘আমাদের পরব ৩ দিন, একদিন ছুটি’
ফুরফুরা শরিফের প্রধান বলেন, ‘‘এই সরকারের প্রতি আমাদের ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। দুর্গাপুজো হয় ৪ দিন, ছুটি ঘোষণা হয়েছে ১৪ দিনের। ছট পুজোয় ছুটি, রথযাত্রায় ছুটি, জামাইষষ্ঠীতে ছুটি। এতে আমাদের মধ্যে হিংসা নেই। আমরা বরং আনন্দিত। কিন্তু এই সরকার আমাদের ঈদ, বকরি ঈদে ছুটি দেয়নি। আমাদের পরব ৩ দিন, একদিন ছুটি দিয়েছে। সরকারকে অনুরোধ করছি (বিষয়টি বিবেচনা করতে)। বাংলার কর্মক্ষেত্রে, মুসলিমদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। এ খবর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়তো জানেন না, ওকে ফের মিসইউজ করা হচ্ছে। আমি চাই সকলকে দেওয়া হোক’’।
কে মুসলিম দরদি দল?
ত্বহা সিদ্দিকি বলেন, ‘‘চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি সাম্প্রদায়িক শক্তি জায়গা পাবে না। যদি কেউ জায়গা করে দেয়, তাহলে আলাদা ব্যাপার। তৃণমূল বলছে মুসলিম দরদি, ২০২১ সালে ৭০-৭৫ টা সিট (মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের) দিয়ে প্রমাণ করুক দেখি, কতটা মুসলিম দরদি। সিপিএম চেঁচাচ্ছে, ৭০-৭৫ টা সিট দিক! কংগ্রেসও বলছে এ কথা। বিজেপির কাছেও দাবি করব, যখন তাদের সম্প্রীতির মনোভাব থাকবে। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কট্টর মনোভাব দেখিয়েছেন জ্যোতি বসু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়তো অতটা দেখাচ্ছেন না তবে উন্নয়নের দিক থেকে মমতা এগিয়ে’’।