রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে রবিবারই মুখ খুলেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা। স্পষ্ট জানিয়েছিলেন যে, তৃণমূলত্যাগীদের অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়াতেই ভোটে পদ্ম বাহিনীর শোচনীয় পরাজয় ঘটেছে। সোমবার দলের তরুণ কেন্দ্রীয় নেতার মতাকে সমর্থন জানিয়ে টুইট করেছেন বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন প্রদেশ সভাপতি তথাগত রায়। অনুপম হাজরার দাবি, দলের তিন মহিলা প্রার্থীর তৃণমূল নেতা মদন মিত্রের সঙ্গে নাচ ও শিখা মিত্রের প্রার্থীপদ প্রত্যাখ্যানের বিষয়টিকে তুলে ধরেছেন তথাগত। জানিয়েছেন, 'পৃথিবীর বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের পক্ষে এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে?'
রবিবার অনুপম হাজরা বলেছিলেন যে, 'ভোটের আগে তৃণমূল থেকে আসা নেতাদের বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। সিনেমা জগৎ থেকে আসা ব্যক্তিদের নিয়ে বেশি নাচানাচি হয়েছিল। আর সেই কারণে দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন পুরানো নেতা-কর্মীরা। আসলে কৌশল যে ভুল হয়েছিল, তা স্পষ্ট। সেটা তখন বোঝা না গেলেও পরে বোঝা গিয়েছে।'
এ দিন কেন্দ্রীয় সম্পাদকের এই বিশ্লেষণকে 'প্রণিধানযোগ্য' বলে দাবি করেছেন তথাগত রায়। টুইটে লিখেছেন, 'তৃণমূলের নেতাদের অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়াতেই ভরাডুবি। দলের পুরোনো নেতাদের গুরুত্ব না দেওয়াটা ঠিক হয়নি।-বিজেপির কেন্দ্রীয় সচিব অনুপম হাজরা। বয়সে ছোট এবং অভিজ্ঞতায় সীমিত হলেও অনুপমের বিবৃতি প্রণিধানযোগ্য। এবার বিজেপি এমন লোককে টিকিট দিয়েছিল যিনি তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন (শিখা মিত্র)। তিনটে নগরীর নটী টিকিট পেয়ে মদনের সঙ্গে জলকেলি করেছে, তারপর হেরে গিয়ে ভ্যানিশ হয়ে গেছে। পৃথিবীর বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের পক্ষে এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে?'
আরও পড়ুন- মমতার নজরে গোয়া, শত্রুর শত্রুকে আপন করে বিজেপির বিরুদ্ধে খেলতে মরিয়া তৃণমূল
বঙ্গে দলের ভোটের ব্যর্থতার জন্য আগেই দিলীপ ঘোষ. অরবিন্দ মেনন, কৈলাশ বিজয়বর্গীয়দের দায়ী করে তুলোধনা করেছেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত রায়। বাঙালি নেতাদের গুরুত্বহীন করে কেন ভিন রাজ্যের নেতাদের ভোট পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হল তা নিয়ে বিষদগার করেছিলেন তিনি। অবশ্য এরপরও 'বেসুরো' রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির আমন্ত্রিত সদস্যের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন। রাজ্যে দলের পর্যবেক্ষকের পদ থেকে বাদ পড়েনি কৈলাস বিজয়বর্গীয়র নাম।
এর মধ্যেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি পদ থেকে সরানো হয়েছে দিলীপ ঘোষকে। বসেছেন বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। সঙ্ঘ পরিবারের প্রিয়পাত্র হিসাবেই রাজনীতিতে প্রবেশ তাঁর। রাজ্য সভাপতির চেয়ারে বসেই গোষ্ঠী কোন্দল মেটিয়ে একযোগে কাজের ডাক দেন তিনি। দিলীপ আপাতত বিজেপির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি। তবে, রাজ্য রাজনীতিতে এখনও প্রাসঙ্গিক তিনি। দলের নয়া রাজ্য সভাপতির সঙ্গে জেলা জেলায় ঘুরছেন তিনি।
কিন্তু, গোষ্ঠী কোন্দলের বিরাম নেই। সম্প্রতি পূর্ব বর্ধমানেই দিলীপ ঘোষের উপস্থিতি নিয়ে সুকান্ত মজুমদারের সামনেই মারামারিতে জড়ান বিজেপি নেতা, কর্মীরা। শুধু সংগঠনের নীচু তলাতেই নয়, অনুপম হাজরা, তথাগত রায়দের বক্তব্যেই বাংলায় গেরুয়া বাহিনীর অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ছবিটা স্পষ্ট।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন