দুই বাঙালি অধ্যুষিত রাজ্যেই ঘর ভাঙার খেলা চলছে। এরাজ্যে ভেঙেই চলেছে বিজেপি। ঘরওয়াপসি চলছে তৃণমূলে। এর পাশাপাশি ত্রিপুরা তৃণমূলে অশান্তি যেন কিছুতেই থামছে না। দিনে দিনে জটিলতা বাড়ছেই। ভাঙনও শুরু হয়েছে। বঙ্গ রাজনীতির রঙ্গ ত্রিপুরাতেও ছাপ ফেলেছে। ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই ঘনঘটা চলতেই থাকবে। তার আভাস দিচ্ছে ত্রিপুরা তৃণমূলের একটা বড় অংশ।
ত্রিপুরা তৃণমূলে ৬ জনের কোর কমিটি ঘোষণা হয়েছিল। দলের রাজ্য সভাপতি সুবল ভৌমিক ও অসম থেকে আসা বাংলা থেকে নির্বাচিত রাজ্যসভার সাংসদ সুস্মিতা দেব ছাড়া চারজন এই শীর্ষ কমিটির সদস্য। তাঁরা দুজন অটোমেটিক চয়েস। ইতিমধ্যে দল ছেড়ে দিয়েছেন আশিস দাস। তিনি নতুন দল গঠন করবেন বা অন্য দলেও যোগ দিতে পারেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল জানিয়েছে। আর বাকি সদস্যরা কী পদক্ষেপ নেন তা নিয়েই তৃণমূল কংগ্রেসের জোর জল্পনা চলছে।
এই কোর কমিটির অন্যতম সদস্য দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি আশিসলাল সিং। মজার বিষয়, ত্রিপুরায় দলের নয়া রাজ্য কমিটি ঘোষণার পর থেকে তাঁকে ত্রিপুরায় কোনও দলীয় কর্মসূচিতে দেখাই যাচ্ছে না। তাঁর সঙ্গে ত্রিপুরা তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের যোগাযোগ নেই বলেই তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি। ওই মহলের দাবি, সম্ভবত আশিসলাল সিংও ঘাসফুল শিবির থেকে গা-ঝাড়া দিতে চাইছেন। যদিও এখনও তিনি দল ছাড়ার কোনও ঘোষণা করেননি। তবে রাজনৈতিক মহলের স্পষ্ট ধারণা, তৃণমূলে মন নেই ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী-পুত্রের। দলের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলেছেন আশিসলাল।
৬ জন সদস্যের মধ্যে এক আশিস চলে গিয়েছেন আরেক আশিসও কতদিন তৃণমূলে থাকবেন তা নিয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলেই সংশয় রয়েছেন। বাকি রইল কোর কমিটির আর দুই সদস্য মামন খান ও ভৃগুরাম রিয়াং। নতুন কমিটি ঘোষণার পর সাংগঠনিক একাধিক মিটিং হলেও কোর কমিটির সেভাবে কোনও মিটিং হয়নি বলেই তাঁরা জানালেন। ভৃগুরাম রিয়াং বলেছেন, 'কোর কমিটি গঠনের পর কোনও মিটিং হয়েছেন বলে তিনি জানেন না।' অন্য দিকে মামন খানের বক্তব্য, 'সাংগঠনিক মিটিং হলেও বিশেষভাবে কোর কমিটির কোনও বৈঠক এখনও হয়নি।'
আরও পড়ুন- ‘এক সাংসদ সব সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছেন’, নাম না করে অভিষেককে নিশানা ধনকড়ের
বাংলায় যখন বিজেপির ঘর ভেঙে ফের তৃণমূলে ভিড় বাড়ছে, ত্রিপুরায় শত চেষ্টা করেও দলে ধরে রাখতে পারছে না তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। বিশেষত ত্রিপুরা তৃণমূলের অন্যতম শীর্ষ সংগঠন কোর কমিটি। সেই কমিটির মিটিং তো হচ্ছেই না উল্টে তাঁর সদস্যরা বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছেন। বিক্ষুব্ধ নেতৃত্বের অনুগামীরা অনেকেই বসে গিয়েছেন। তার দরুন শুধু কোর কমিটি নয়, রাজ্য ও জেলা স্তরেও সংগঠন মজবুত করাই কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে তৃণমূলের কাছে। একেই বারে বারে ওই রাজ্যে সাংগঠনিক ভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে তৃণমূল। এদিকে বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমূল ভোট কাটলে আদপে লাভ হবে বিজেপিরই। যদিও সুবল ভোমিক জানিয়ে দিয়েছেন, ত্রিপুরা জয়ের জন্যই তাঁরা লড়াই করছেন।
রাজনৈতিক মহলের মতে, ২০২৩-এর জন্য গঠিত দলের শীর্ষ কমিটির যদি এই দুর্দশা হয় তাহলে নীচু স্তরে কী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। অভিজ্ঞ মহলের ধারনা, যেভাবে ত্রিপুরা তৃণমূলে 'এগোচ্ছে' তাতে বঙ্গের বাইরে তৃণমূলের প্রসার যে প্রচারেই সীমাবদ্ধ হয়ে থাকবে তার প্রমান মিলবে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে। বাঙালি অধ্যুষিত পড়শি রাজ্য হিসাবে যে ফায়দার কথা তৃণমূল বারে বারে ভেবেছে আদৌ তার বাস্তবায়ন যে খুব কঠিন তা হারে হারে টের পাচ্ছে টের শীর্ষ নেতৃত্ব।