Advertisment

পঞ্চায়েতঃ তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপি, কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টের অলিখিত জোট

পঞ্চায়েত ভোটে বাম-দক্ষিণের যৌথ লড়াই। শাসকদলের নজিরবিহীন সন্ত্রাসই জোটের জন্য দায়ী, বলছেন সব দলের নেতারা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Panchayat election wall grafiti

দেওয়াল লিখনে লেখা, "আসন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিআই প্রার্থী সুমিত্রা মন্ডল এবং পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদে বিজেপি প্রার্থী অজিত রায়কে ভোট দিন।"

রাভীক ভট্টাচার্য

Advertisment

নদিয়ার মানিকপাড়া এবং মোল্লাহাট অঞ্চলে কিছুটা ঘুরলেই চোখে পড়বে সিপিআইএম এবং বিজেপি প্রার্থীদের অসংখ্য যৌথ দেওয়াল লিখন। দেওয়ালে ভোট প্রচার "আসন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিআই প্রার্থী সুমিত্রা মণ্ডল এবং পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদে বিজেপি প্রার্থী অজিত রায়কে ভোট দিন।" বিজেপির দাবি বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে স্থানীয় সিপিআইএম নেতারা তৃণমূলের বিরুদ্ধে যৌথ প্রতিবাদ মিছিলের আহ্বান জানিয়েছেন।

পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়নপত্র দাখিল নিয়ে শাসক দলের হিংসার প্রতিবাদে গত ২৮ এপ্রিল রানাঘাটে এক প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন সিপিএম বিধায়ক রমা বিশ্বাস সহ সিপিএম কর্মীরা। সে মিছিলে হাঁটতে দেখা গিয়েছিল বিজেপি কর্মীদেরও।

panchayat vote রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের ‘সন্ত্রাস’ আটকাতে মতাদর্শ শিকেয় তুলে বাম ও দক্ষিণপন্থীরা একজোট হয়েছে। ছবি - ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের ‘সন্ত্রাস’ আটকাতে মতাদর্শ শিকেয় তুলে বাম ও দক্ষিণপন্থীরা একজোট হয়েছে। চিরশত্রু বিজেপি ও সিপিএম এবং কোনও কোনও জায়গায় কংগ্রেসও তৃণমূলের বিরুদ্ধে আসন বোঝাপড়ার রাস্তা বেছে নিয়েছে। চলছে যৌথ প্রতিবাদ মিছিলও। তবে এসবই চলছে অলিখিত ভাবে।

আরও পড়ুন, পঞ্চায়েত ভোট: ই-মেলে পাঠানো সিপিএমের মনোনয়নে মান্যতা দিল হাইকোর্ট

আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসক দলের ব্যাপক সন্ত্রাসের জেরে অনেকেই মনোনয়ন পেশ করে উঠতে পারেননি। এর ফলে তৃণমুল কংগ্রেস ইতিমধ্যেই ৩৪.২ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছে।

বিজেপির রাজ্য সম্পাদক সায়ন্তন বসু এপ্রসঙ্গে বলেন, "গ্রামাঞ্চলে তৃণমূলর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সমস্ত রাজনৈতিক দলের এভাবেই  রুখে দাঁড়ানোই স্বাভাবিক। এখন যেহেতু বিজেপিই মুখ্য বিরোধী দল হিসাবে উঠে আসছে, সে কারণে সিপিএম সহ বিভিন্ন বিরোধী দলই আমাদের কাছে আসছেন। পূর্বস্থলীতে বর্ধমানের সিপিএম নেতারা আমাদের যৌথ প্রতিবাদের জন্য ডাক দিয়েছিলেন। এবারের ভোটে ব্যাপক আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়েও মুখোমুখি হয়েও আমরা আসন্ন নির্বাচনে পঁচিশ হাজারেরও বেশি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রার্থী দিতে পেরেছি। সবমিলিয়ে আমাদের প্রার্থীর সংখ্যা তিরিশ হাজারেরও বেশি।"

panchayat vote বর্ধমান ছাড়াও পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুর সহ নদিয়া জেলার করিমপুর, তেহট্ট, রানাঘাট এবং মহিষবাথান-এর মত বিভিন্ন অঞ্চলেও চলছে আসন নিয়ে এরকমই অলিখিত বোঝাপড়া। ছবি- ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী এ প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, "আমাদের দলীয় লাইন স্পষ্ট। তৃণমুল এবং বিজেপি, উভয় দলের থেকেই আমরা সমান দূরত্ব বজায় রেখে চলছি। কিন্তু নিচের তলার কিছু জায়গায় যে হাত ধরাধরির ঘটনা সত্যিই ঘটছে। শাসক দল যে ভাবে নজিরবিহীন সন্ত্রাস নামিয়ে এনেছে তার ফলেই এ ঘটনা ঘটছে। আমরা ওঁদের সঙ্গে কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করছি, যে এটা ঠিক রাস্তা নয়। যেসব জায়গায় আমাদের প্রার্থী নেই সেসব জায়গায় আমরা নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করছি।’’

আরও পড়ুন, বাম আমলে এখনকার চেয়ে বেশি স্বাধীনতা ছিল বিরোধীদের, বলছে কংগ্রেস

বর্ধমান ছাড়াও পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুর সহ নদিয়া জেলার করিমপুর, তেহট্ট, রানাঘাট এবং মহিষবাথান-এর মত বিভিন্ন অঞ্চলেও চলছে আসন নিয়ে এরকমই অলিখিত বোঝাপড়া। যেমন করিমপুরের একশ চুয়াল্লিশটি গ্রাম পঞ্চায়েত সিটের মধ্যে সাঁইত্রিশটি আসনে বিজেপি একজনও প্রার্থী দেয়নি। উল্লেখ্য, ঐ আসনগুলিতে সিপিএম এবং নির্দল প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সূত্রের খবর এই আসন ভাগাভাগির হিসাব বিজেপির সঙ্গে আলোচনা করেই নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন, পঞ্চায়েতঃ সর্বাধিক মুসলিম প্রার্থীর রেকর্ড গড়ল রাজ্য বিজেপি

বিজেপির নদিয়া জেলার সভাপতি জগন্নাথ সরকার এপ্রসঙ্গে বললেন, "এই জোট আসলে মাটি আঁকড়ে টিকে থাকার লড়াই। সিপিএম এবং কিছু ক্ষেত্রে কংগ্রেসও আমাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। প্রতিবাদ মিছিলে সিপিএম এবং কংগ্রেসের নেতা এবং কর্মীরা একজোট হয়ে হাঁটছেন কারণ দুতরফই তৃণমুলের সন্ত্রাসের শিকার। কর্মীরা আদর্শের কথা ভাববেন নাকি নিজেদের বাড়ি ঘরদোর বাঁচাবেন? আমরা সিপিএম এবং কংগ্রেস সহ সমস্ত বিরোধী দলের প্রার্থীদের বলেছি ভোটে লড়তে না পেরে উঠলে আমাদের দলীয় চিহ্নে ভোট লড়ুন।"

panchayat vote panchayat election bjp
Advertisment