রাত পোহালেই সেই মাহিন্দ্রক্ষণ। শনিবার কার্যত দেশের নজরে তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশ। উনিশের ভোটযুদ্ধের আগে তৃণমূল-সহ বিজেপি বিরোধী নেতৃত্বের ভাষণ শুনতে এ শহরে ভিড় জমাবেন বহু তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা পা মেলাবেন ব্রিগেডের দিকে। কেউবা শুক্রবার থেকেই এ শহরে পা রেখেছেন। দলের সেইসব কর্মী-সমর্থকদের ‘আদর-যত্ন’-এর কোনও ত্রুটি রাখছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের কর্মী-সমর্থকদের জন্য এলাহি বন্দোবস্ত করেছে ঘাসফুল শিবির।
গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম, সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্ক, উত্তীর্ণ, ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র- কলকাতার বাইরে থেকে আসা তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের ঠিকানা আপাতত এখানেই। যেখানে দুটি ইয়া বড় তাঁবু খাটানো হয়েছে। কর্মীদের নিরাপত্তার স্বার্থে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা, রয়েছে হেল্প ডেস্ক ও হেলথ কিয়স্কও। গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামেই প্রায় ২০ হাজার কর্মী-সমর্থকদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মূলত মালদহ ও মুর্শিদাবাদ থেকে আসা কর্মী-সমর্থকরা থাকবেন গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামে। উত্তরবঙ্গের অন্য জেলার কর্মী-সমর্থকদের থাকার জন্য বাছা হয়েছে সেন্ট্রাল পার্ক। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া থেকে আসা তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে উত্তীর্ণ-তে। সেখানে বৃহস্পতিবারই গোটা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে যান তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন, তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশে কড়া নজর পুলিশের, চলবে ড্রোনে নজরদারি
গীতাঞ্জলী স্টেডিয়ামে দলের কর্মী-সমর্থকদের দেখভালের দায়িত্ব বর্তেছে তৃণমূল নেতা নির্মল মাজির উপর। বৃহস্পতিবার স্টেডিয়াম পরিদর্শন করতে গিয়ে তিনি বললেন, ‘‘কর্মীরা যাতে খুব ভাল ভাবে থাকেন, তার জন্য সেরা ব্যবস্থা করেছি আমরা। ওঁদের এখানে থাকলে মনে হবে যেন বাড়িতে রয়েছেন।’’ আগামী ২ দিন যেসব তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা থাকবেন গীতাঞ্জলী স্টেডিয়ামে, তাঁদের দেখভালের জন্য রাখা হয়েছে হাজার তৃণমূল কর্মী, একথাও জানান মন্ত্রী।
দলের কর্মী-সমর্থকদের থাকার ব্যবস্থা প্রসঙ্গে তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ জানিয়েছেন, ‘‘ব্রেকফাস্ট থেকে ডিনার, সবকিছুই দেওয়া হবে, কম্বলও দেওয়া হবে কর্মীদের’’ আরেক তৃণমূল কাউন্সিলর অসীম কুমার বসু বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য ৫০ লাখেরও বেশি মানুষকে সভায় আনা।’’ শিয়ালদহ স্টেশন থেকে থাকছে বাসের ব্যবস্থা। বৃহস্পতিবার রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘বহু সংখ্যক মানুষ এসেছেন, শুক্রবার আরও মানুষ আসবেন।’’ তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, ‘‘হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান থেকে কর্মী-সমর্থকরা শনিবার আসবেন। অনেক মহিলা কর্মীরাও আসবেন।’’
আরও পড়ুন, ১৯ জানুয়ারি ব্রিগেডে মমতার পাশে কে কে আছেন?
মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থেকে আসা চৈতন্য কর্মকার নামে এক কর্মী বললেন, ‘‘২০১১ সালের ব্রিগেড সভা মিস করেছি...হরিশ্চন্দ্রপুর থেকে প্রায় ১৫০ জন কর্মী এসেছেন, আরও অনেকে আসবেন।’’ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য তৃণমূলের লড়াইকে সমর্থন জানিয়েছেন বহরমপুরের শেখ মকবুল। তিনি বললেন, ‘‘গোরক্ষার নামে সংখ্যালঘুদের টার্গেট করা হচ্ছে। কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের আমলে সাম্প্রদায়িক হিংসা বেড়েছে। ভয় পেয়ে বাকি জীবনটা কাটাতে চাই না।’’
ব্রিগেড সভায় যোগ দিতে এসে প্রথমবার কলকাতা ঘোরার স্বাদ পাবেন বিষ্ণপুরের তৃণমূল কর্মী সমর হালদার। তিনি বললেন, ‘‘আমাদের নেতাদের বক্তৃতা শোনার জন্য মুখিয়ে আছি। চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়াতেও যাব।’’ তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, যেসব কর্মীরা ব্রিগেডে সভার ফাঁকে এ শহরে ঘুরে দেখবেন, তাঁদের জন্য শহরের দর্শনীয় স্থানের বিশেষ পাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
Read the full story in English