Advertisment

ফাইনাল ম্যাচের আগে বর্ধিত কোর কমিটি বৈঠক তৃণমূলের

রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ থেকে বিধায়ক, এমনকী নিচু স্তরের একটা বড় অংশ, যে পদ্ম শিবিরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে, তা আজ রাজনৈতিক মহলে সর্বজন স্বীকৃত।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
mamata, tmc, loksabha election 2019, মমতা, লোকসভা ভোট, তৃণমূল

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন মাইক ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই এই সময়ের মধ্যে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বর্ধিত কোর কমিটির বৈঠক সেরে নিতে চায় তৃণমূল কংগ্রেস। ২৫ ফেব্রুয়ারি এই বর্ধিত কোর কমিটির সভায় লোকসভা নির্বাচনের আগে স্বাভাবিকভাবেই দলের নেতা-কর্মীদের যুদ্ধের প্রস্তুতির পরীক্ষা নেবেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি 'ভোকাল টনিকের' প্রতিশ্রুতি তো আছেই, বিশেষ করে কেন্দ্রের সঙ্গে সাম্প্রতিক 'ধর্মযুদ্ধ', এবং মমতার সর্বভারতীয় বিরোধী ঐক্য গড়ার প্রয়াসের প্রেক্ষিতে। সর্বোপরি রয়েছে তাঁর সদ্যসমাপ্ত দিল্লি সফর।

Advertisment

ওদিকে বাংলার বিজেপির নেতৃত্বকে ২৩ টি আসনে জয়ের ফতোয়া দিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। একের পর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, নেতা এবং বিজেপি-শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সারা বাংলা চষে বেড়াচ্ছেন। তাদের 'গণতন্ত্র বাঁচাও' রথযাত্রা আটকে গেলেও লক্ষ্যে অটল গেরুয়া শিবির, অন্তত কাগজে কলমে। লোকসভায় বিজেপিকে ঠেকানোই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে। রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ থেকে বিধায়ক, এমনকী নিচু স্তরের একটা বড় অংশ, যে পদ্ম শিবিরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে, তা আজ রাজনৈতিক মহলে সর্বজন স্বীকৃত। তাছাড়াও আছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কাঁটা। লোকসভা ভোটের আগে বর্ধিত কোর কমিটির সভা তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন: দিল্লিতে মমতা, ফের ধর্না

Mamata Banerjee United India rally ১৯ জানুয়ারি ব্রিগেডের ইউনাইটেড ইন্ডিয়া জনসভার মঞ্চে মমতা। ছবি: পার্থ পাল, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সেদিন কি দিশা দিতে পারেন তৃণমূল নেত্রী? সাত বছর রাজ্যে শাসন ক্ষমতায় থাকার পর স্বভাবতই দলের মধ্যে ক্ষোভ থাকতে বাধ্য। বিশেষ করে তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে যাঁরা দলে রয়েছেন, তাঁরা এখন দলের মধ্যে কোণঠাসা। ক্ষমতায় আসার পর, বিশেষ করে নিচু স্তরে যেভাবে সিপিএম থেকে কর্মীদের ঢল এসেছে তৃণমূলে, তাতে দলের ভারসাম্য বজায় রাখাই কঠিন হয়ে গিয়েছে। নেত্রীর একাধিক নির্দেশের পরও অনেক ক্ষেত্রেই আদি তৃণমূলীরা দলে কোনও মর্যাদা পান নি। তাই তাঁরা ধরেই নিয়েছেন, ওসব কথার কথা, কাজের কাজ হবে না। রাজনৈতিক মহলের মতে, এইসব নেতাদের অনুগামী ভোটাররা যদি বিজেপির দিকে ঝোঁকেন, তাহলে যে সমস্যা হবে, তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই।

বিষ্ণুপুরের তৃণমূল সাংসদ সৌমিত্র খাঁ বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন সম্প্রতি। বোলপুরের সাংসদ অনুপম হাজরাকেও বহিষ্কার করেছে দল। লোকসভা ভোট যত এগিয়ে আসছে, তত হাওয়ায় আরও নাম ভেসে বেড়াচ্ছে। বাইরে তাঁরা যাই বলুন, দলের সাংসদ ও নেতাদের বিজেপিতে যোগদান যথেষ্ট ভাবাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বকে। মমতা ছাড়া এইসব নেতাদের যে বিরাট জনভিত্তি আছে এমন নয়। কিন্তু তারা যে শাসকদলের সাংসদ 'ভাঙিয়ে' আনতে পারছে, তা নিয়ে গলা ফাটিয়ে প্রচার করবেই পদ্ম শিবির। তৎসত্বেও তৃণমূলের কাছে এর থেকেও বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে নিচু স্তরের নেতা-কর্মীদের চিন্তাভাবনা। অভিজ্ঞ মহলের ধারণা, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব দল ছাড়লে প্রতিক্রিয়া হয় একথা ঠিক, কিন্তু ভিত মজবুত না থাকলে গোটা দালান বাড়িটাই ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

Mamata Banerjee chandrababu Naidu ধর্মতলায় তাঁর সাম্প্রতিক কেন্দ্র বিরোধী ধর্না মঞ্চে অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর সঙ্গে মমতা। ছবি: পার্থ পাল, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

অন্যদিকে, রাজ্যে সিপিএম ও কংগ্রেস আসন নিয়ে সমঝোতার লক্ষ্যে এগোচ্ছে। এছাড়া তাদের কাছে বিকল্পও নেই। ৩ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেডের ভিড় দেখে বামেদের অনেকেই উচ্ছ্বসিত। কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক সিপিএম নেতার স্পষ্ট স্বীকারোক্তি, "দলের নিচু তলায় বিজেপির 'আন্ডারকারেন্ট' চলছে। ওই ভিড়ে দেখে লাফালাফি করার কিছু হয়নি।"

কংগ্রেসের মুর্শিদাবাদে অধীর চৌধুরীর আসন ছাড়া লড়াইয়ের আর কোনও জায়গা নেই। তবে সোমেন মিত্র রাজ্য সভাপতি হওয়ার পর সংখ্যালঘুদের একটা অংশ নিয়মিত কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন। কংগ্রেস-সিপিএমের জোট সংখ্যালঘু ভোটে থাবা বসালে আখেরে লাভ হবে বিজেপির, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তাই শুধু বিজেপি নয়, কংগ্রেস-সিপিএম নিয়েও নেতাজি ইন্ডোরের সভায় সুর চড়াবেন নেত্রী।

আরো পড়ুন: সংসদে বিরোধী ঐক্যের ছবি, তৃণমূলের বিক্ষোভে রাহুল গান্ধী

জাতীয় স্তরে জোটের কথা বললেও এখনও পর্যন্ত এ রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের লক্ষ্য, লোকসভার ৪২টি আসনের প্রত্যেকটিতেই জয়। কিন্তু রাজ্যের পশ্চিমে জঙ্গলমহল, উত্তরবঙ্গ ও সীমান্তবর্তী এলাকার লোকসভার আসন নিয়ে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের কপালে চিন্তার ভাঁজ রয়েছে। সূত্রের খবর, রাজ্যের সাম্প্রতিক গোয়েন্দা রিপোর্টেও এই অঞ্চলগুলির টালমাটাল পরিস্থিতির উল্লেখ রয়েছে। কজন নেতার দলবদলের থেকেও এই সব এলাকার রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে শঙ্কা বেশি তৃণমূলের। শুধু চিট ফান্ডের চাপে নয়, এই হাওয়ার সঙ্গে তাল মেলাতে ওই সব এলাকার শাসকদলের সাংসদরা বিজেপির সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রাখছেন বলেই খবর। সব দিক সামলাতে ২৫ ফেব্রুয়ারি কী নির্দেশ দেন তৃণমূল সুপ্রিমো, তাই দেখার।

bjp Mamata Banerjee jangalmahal
Advertisment