করোনা যা পারেনি তাই করে দেখাল আমফান! বলা যায় তৃণমূলেই এখন চলছে আমফান। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইতে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্তর্কলহ প্রকাশ্যে আসেনি। কিন্তু আমফান পরবর্তী পরিস্থিতিতে রাজ্য মন্ত্রীসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা প্রকাশ্যে একে অপরের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বসলেন। আর এর ফলেই বেজায় অস্বস্তিতে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব।
আমফান লন্ডভন্ড করে দিয়েছে গ্রাম বাংলা এবং মফ:স্বলের একটা বড় অংশকে। তবে সেখানকার মানুষের ক্ষোভ বরাবরই অনেকটাই আড়ালে চলে যায়। কিন্তু এই আমফানে রীতিমত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মহানগর কলকাতাও। আর ঘূর্ণিঝড়ের পর ৭দিন কেটে গেলেও কলকাতার বেশ কিছু এলাকা এখনও অবরুদ্ধ এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন। আর তা নিয়ে এবার তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যেই ক্ষোভ উঠে এল প্রকাশ্যে।
আমফানের পর থেকেই কলকাতার অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ নেই, জল নেই, রাস্তা বন্ধ। তাই নানা কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ক্রমশ বেড়েছে। কলকাতার বহু জায়গায় রাস্তা অবরোধ করেছেন স্থানীয় মানুষরা। অনেক ক্ষেত্রে সেখানে শাসকদলের স্থানীয় কর্মী-সমর্থকরা অংশ নিয়েছেন। আবার অবস্থানকারীদের চোখরাঙানীও সহ্য করতে হয়েছ। কিন্তু রাজ্যের ক্রেতা-সুরক্ষামন্ত্রী সাধন পান্ডে পুরসভার প্রশাসকমন্ডলীর কার্যকলাপ নিয়ে সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করায় তা বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছে। সাধন প্রশ্ন তোলেন, পূর্বাভাস জেনেও কেন কলকাতার বিধায়কদের সঙ্গে আলোচনা করেনি ববির নেতৃত্বাধীন পুরসভা? কেন অভিজ্ঞ শোভন চট্টাপাধ্যায়ের মতামত জানতে চাওয়া হয়নি? ‘মাথায় গন্ডগোল রয়েছে’ বলে দলের বর্ষীয়াণ এই বিধায়ক তথা মন্ত্রীর বক্তব্য উড়িয়ে দিয়েছেন ফিরহাদ হাকিম। কিন্তু ঘটনা এখানেই থেমে গিয়েছে এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। বরং চাপান-উতর চলছে তৃণমূলের অভ্যন্তরে।
আরও পড়ুন- নিষ্প্রদীপ মেটিয়াবুরুজ, বিক্ষোভ থামাতে গিয়ে আক্রান্ত তৃণমূল বিধায়ক
করোনা পরিস্থিতির জন্য পুরভোট আপাতত স্থগিত রাখতে হয়েছে। তাই কলকাতা পুরসভায় বিদায়ী মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে চেয়ারম্যান করে প্রশাসক মন্ডলী গঠন করেছে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। এ নিয়ে বিরোধীরা তীব্র সমালোচনাও করেছিল। জানা গিয়েছে, তৃণমূলের অন্দরে এই নিয়োগ নিয়ে গুঞ্জন থাকলেও কেউই প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। কিন্তু আমফান দুর্যোগের মোকাবিলা ঠিক ভাবে করতে না পারায় দলের একাংশের সমালোচনার মুখে পড়েছেন ববি হাকিম। সাধন পান্ডে সরাসরি বলেছেন শুধু নয়, তাঁর বক্তব্যে টেনে এনেছেন প্রাক্তন মেয়র তথা বর্তমানে বিজেপি নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও। শোভন প্রসঙ্গ এমনিতেই তৃণমূলের অস্বস্তির কারণ, এর উপর তিনি অধুনা গেরুয়া নেতা। ফলে এমন একজনের প্রসঙ্গ টেনে মমতা ঘনিষ্ট ববিকে কেন খোঁচা দিতে গেলেন তৃণমূলেরই এক মন্ত্রী, এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, অনেক প্রবীণ বিধায়ক দলে থাকা সত্বেও তাঁরা মন্ত্রীসভায় গুরুত্বপূর্ণ পদ পাননি। অথচ ববির মতো কেউ কেউ একাধিক পদ নিয়ে বসে রয়েছেন। এ জন্যই সুযোগ বুঝে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বড়তলার বিধায়ক।
উল্লেখ্য, আমফান দুর্যোগের মোকাবিলা নিয়ে ফিরহাদ হাকিমের ওপর চাপ ক্রমশ বাড়ছে। এর আগে প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার মাধ্যমে পরামর্শ দিয়েছিলেন ববিকে। তিনি বলেছিলেন, গলির রাস্তায় বা বাড়ির ছাদের উপর পড়ে থাকা গাছ প্রথমে কাটা উচিত। বড় রাস্তার ক্ষেত্রে গাড়ি নিয়ে মানুষ একটু ঘুরে গন্তব্যে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ফিরহাদের বক্তব্য ছিল, ঠিক তার বিপরীত। এমতাবস্থায় দেখা গিয়েছে, কলকাতার পাড়ায়-পাড়ায় মানুষের মধ্যে পুরসভার বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়তে থেকেছে। ফলে কার্যত রাজনৈতিক ভাবে চাপ বাড়তে থাকে তৃণমূল কংগ্রেসের। দলের অভ্যন্তরেই কলকাতা পুরসভার কার্যকলাপ নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়। সাধারণের কাছে বার্তা পৌঁছাতে থাকে দুর্যোগ মোকাবিলায় ব্যর্থ কলকাতা পুরসভা। এমনকী সেনাকেও ডাকতে হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে নির্বাচন হতে পারে কলকাতা পুরসভার। তাছাড়া ২০২১-এ বিধানসভা নির্বাচন। রাজ্যে আমফান পরিস্থিতি রাজনীতিতে বড় হাতিয়ার হতে চলেছে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। বিরোধীরা ওঁত পেত বসে রয়েছে। এরই মধ্যে তৃণমূলের শীর্ষ স্তরের মতবিরোধ দলের নীচুতলার কর্মীদের মধ্যে ছড়ালে তা বিশেষ মাত্রা নেবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন