পুস্তিকাপ্রকাশ ঘিরে সাংবাদিক সম্মেলনে ভোটের দামামা বাজিয়ে দিলেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়-কবীর সুমনরা। বিজেপি-র বিরুদ্ধে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে একের বিরুদ্ধে একের হিসেবে লড়াইয়ের ডাক দিলেন তৃণমূলপন্থী এই বুদ্ধিজীবীরা। তবে ২১ জুলাইয়ের আগে সাংবাদিক সম্মেলনে সুমনের মুখে রবীন্দ্রনাথ-নজরুল নিয়ে অশ্লীল বাক্য উচ্চারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়দের কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলবে সন্দেহ নেই।
বিমুদ্রাকরণের পরেই সারা দেশে বিরোধী জোট গড়তে তৎপর হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি-কে রুখতে প্রয়োজনে সিপিএমের সঙ্গেও যে তিনি হাত মেলাতে পিছপা নন, সে ব্যাপারে স্পষ্ট এবং অস্পষ্ট, দুরকম ইঙ্গিতই দিয়েছিলেন তিনি। সে ইঙ্গিত ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছে সিপিএম। পঞ্চায়েত ভোটের আগে তিক্ততা বেড়েছে দু'পক্ষে। গোটা তৃণমূল সংগঠনের পক্ষ থেকে সিপিএম-কে বিজেপি-র দালাল বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের ফল বেরোনোর পর পরিস্থিতি বেগতিক বুঝেছে তৃণমূল নেতৃত্ব। রাজ্যে সর্বত্র দ্বিতীয় স্থানে বিজেপি-র উঠে আসার বিষয়টি যে যথেষ্ট শঙ্কার কারণ, সে বার্তা পৌঁছেছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে। এ পরিস্থিতিতে বাছবিচার না করে একের বিরুদ্ধে একের লড়াই-ই যে রাস্তা, সে কথা বুঝতে পেরেছে শাসক দল। এ সময়ে সিপিএম বা কংগ্রেস বা অন্য কারও সম্পর্কেই কোনও রকম ছোঁয়াছুঁয়ির বাতিক যে আত্মঘাতী হবে সে কথা বুঝতে পেরে বিভিন্ন গণসংগঠনের মাধ্যমে পুরনো লাইনকে ফিরিয়ে আনতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। বুধবার তার প্রতিফলন দেখা গেল কলকাতা প্রেস ক্লাবে।
'ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণ আন্দোলন’-এর ব্যানারে এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির ছিলেন মমতাপন্থী বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত মুখ প্রতুল মুখোপাধ্যায়, কবীর সুমন-সহ অন্যান্যরা। সম্মেলনের সঞ্চালনা করলেন শাসকদলের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মুখ প্রসূন ভৌমিক। বিজল্পের সম্পাদনায় ‘লুঠেরা, দাঙ্গাবাজ বিজেপি’র গ্রাস থেকে দেশ বাঁচাও’ শীর্ষক পুস্তিকার আনুষ্ঠানিক প্রকাশ উপলক্ষে এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন, 21 July preparation: বাঙালি প্রধানমন্ত্রী চাই, ২১ জুলাইয়ের আগে রব তৃণমূলে
এই সাংবাদিক সম্মেলনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল, বুদ্ধিজীবীদের মুখে ১৯-এর ভোটের দামামা বাজিয়ে দেওয়া। প্রতুল মুখোপাধ্য়ায় তাঁর বক্তব্যে কেন এ দিন 'আচ্ছে' নয়, তার নিজস্ব ব্যাখ্যা দিয়ে আসন্ন ভোটে বিজেপি-কে হারানোর আহ্বান করেন। তাঁর বক্তব্যে উঠে এল বিমুদ্রাকরণ থেকে শুরু করে বিজেপি সরকারের বিভিন্ন নীতির কথা, যার ফলে দেশের সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে মনে করছেন তাঁরা। তিনি বলেন, "কিছুদিন আগে নরেন্দ্র মোদী একটি সভায় বলেছিলেন, 'বিরোধীদের একমাত্র অ্যাজেন্ডা, বিজেপিকে সরানো, আমাকে সরানো।' এটা খুব সত্যি কথা। এখন আমাদের একমাত্র কাজ, এক দফা কর্মসূচি, বিজেপিকে সরানো, মোদিকে সরানো।"
নিজের বক্তব্য রাখার সময়ে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গি থেকে সরলেন না কবীর সুমন। শুরুতেই আগের বক্তাদের বক্তব্য কিছুটা খণ্ডন করে তাঁর দাবি, বাংলায় হিন্দু মুসলমানের চিরকালীন সম্প্রীতির যে ছবি আঁকা হয় তা সম্পূর্ণ সত্য নয়। এ বাংলায় সাম্প্রদায়িকতা বিভিন্ন রকম চেহারায় ছিল এবং আছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তবে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার যে রূপে বিভাজন চিহ্নিত করতে চাইতে তাকে যে কোনও মূল্যে রুখতে হবে বলে দাবি করেন তিনি। সে জন্য ন্যায় বা অন্যায়, যে কোনও পথই গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন তিনি।
এদিন কবীর সুমন তাঁর বক্তব্য পেশ করার সময়ে সাম্প্রদায়িকতা প্রশ্নে বাঙালির দ্বিচারিতার প্রসঙ্গ নিয়ে আসেন। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে বাঙালি কীভাবে ব্যবহার করেছে, সে কথা বলতে গিয়ে কিঞ্চিৎ অপ্রাসঙ্গিকভাবেই অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করেন। সে সময়ে মঞ্চে উপবিষ্ট অন্যদের মুখে স্পষ্টত অস্বস্তির ছাপ ফুটে ওঠে। সম্ভবত উপস্থিত সকলের উশখুশুনি টের পেয়ে বক্তব্যের মাঝামাঝি সুমন নিজের তৃণমূল পরিচিতিও অস্বীকার করেন, কিন্তু তাতে অস্বস্তির মাত্রা কমেনি বিশেষ।
বেশ কিছুদিন ধরেই মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশনের সময়ে এ ধরনের ভাষা ব্যবহার সুমনের অভ্যেস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে তাঁর অনুগামীদের মধ্যেও কেউ কেউ বিরক্ত, যদিও সামনাসামনি সুমনের মুখের ওপর কেউ কিছু বলে ওঠেন না। তবে সাংবাদিক সম্মেলনে এ ধরনের ভাষা ব্যবহার সম্ভবত তাঁর টিকে থাকা ভাবমূর্তির ওপরেও প্রভাব ফেলবে।