বিজেপিতে যোগ দিয়েই নাম না করে তৃণমূলকে নিশানা করলেন সব্যসাচী দত্ত। নেতাজি ইন্ডোরে অমিত শাহের উপস্থিতিতে দিলীপ ঘোষের হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দিলেন বিধাননগরের প্রাক্তন মেয়র। যোগদানের পর অমিত শাহের গলায় উত্তরীয় পরিয়ে দিলেন সব্যসাচী দত্ত। পদ্ম পতাকা হাতে তুলেই মুকুল রায়ের সঙ্গে লুচি-আলুর দম বিতর্কের প্রসঙ্গ তুললেন সব্যসাচী। তিনি বলেন, ‘‘মুকুলদা লুচি আলুর দম খেয়েছিল বলে অনেক কথা হয়েছিল। বাংলার ঐতিহ্য কখনও খোয়াব না। যিনি আসবেন, তাঁকেই খাওয়াব। দিলীপদা আমার বিধাননগরেই থাকেন। সকালে চলে আসেন, বলেন চা খাবেন। আমরা আতিথেয়তায় বিশ্বাস করি। যাঁরা আতিথেয়তাকে ভয় পান, তাঁরা অন্য গ্রহের মানুষ’’। পাশাপাশি শাহের কাছে আর্জির সুরে সব্যসাচী বলেন, ‘‘কাশ্মীরকে যেভাবে ঠান্ডা করেছেন, বাংলাকেও ঠান্ডা করুন’’। বিধাননগরের প্রাক্তন মেয়র আরও বলেন, ‘‘বিজেপিতে যোগ দিতে পেরে আমি গর্বিত। আমার কাছে আগে দেশ, তারপর দল, তারপর ব্যক্তি’’। এনআরসি-তে আপত্ত নেই বলেও এদিন মন্তব্য করেন সব্যসাচী।
আরও পড়ুন: ‘গণশক্তি পড়ে জেনেছিলাম, বাবা রাজ্য সম্পাদক হয়েছেন’
আজই বিজেপিতে সব্যসাচী দত্ত, বাড়ির সামনে ভিড় অনুগামীদেরhttps://t.co/I4HBeRAoo9 pic.twitter.com/AkmSnxGxHH
— IE Bangla (@ieBangla) October 1, 2019
উল্লেখ্য,লোকসভা ভোটের মুখে সল্টলেকে সব্যসাচীর বাড়িতে মুকুল রায়ের লুচি-আলুর দম খাওয়া নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয় বঙ্গ রাজনীতিতে। মুকুল-সব্যসাচীর ঘনিষ্ঠতা একেবারেই ভাল চোখে দেখেননি তৃণমূল নেতৃত্বে। তখন থেকেই তৃণমূল-সব্যসাচীর সম্পর্কে ফাটলের সূত্রপাত। এরপর একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে মুকুল রায়ের সঙ্গে পাত পেড়ে খিচুড়ি-বেগুন ভাজা খেতে দেখা যায় সব্যসাচীকে, যা তাঁর বিজেপিতে যোগদানের জল্পনাকে আরও উস্কে দেয়। এরপর ‘দাদা’ মুকুলের পাশে বসে পরোটা-ফিশ কাটলেট খাওয়ার পর সব্যসাচীর বিজেপিতে যোগদানের জল্পনার পারদ আরও চড়ে। এর মাঝে দলের ‘অবাধ্য’ হয়েই একের পর এক দলবিরোধী মন্তব্য করে বিতর্কে জড়াতে থাকেন সব্যসাচী। সংঘাত চরমে পৌঁছোয়, যখন বিদ্যুৎভবনে সরকারি কর্মচারী ইউনিয়নের বিক্ষোভে অংশ নিয়ে দলেরই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন সব্যসাচী, তখনই তৃণমূল-সব্যসাচী সংঘাত সপ্তমে ওঠে। এরপরই সব্যসাচীকে কোণঠাসা করার প্রক্রিয়া শুরু করে তৃণমূল নেতৃত্ব। বিধাননগরের মেয়রের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন ৩৫ জন কাউন্সিলর। সেই অনাস্থার নোটিসকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন সব্যসাচী। সেই মামলায় সব্যসাচীকে স্বস্তি দিয়ে হাইকোর্ট বিধাননগর পুরনিগমে আস্থা ভোটের তলবি চিঠির বৈধতা নেই বলে জানিয়ে দেয় এবং ফের নতুন করে প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দেয়। এরপরের দিনই মেয়র পদ থেকে সরে দাঁড়িয়ে দলের সঙ্গে সংঘাতের আবহ জিইয়ে রাখেন সব্যসাচী। কিন্তু কখনই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে, সরাসরি কথা বলতে চাননি সব্যসাচী। বরং কৌশলে তা এড়িয়ে গিয়েছেন এবং এতকাল জানিয়ে এসেছেন, ‘আমি তো তৃণমূলেই আছি’। তবে এদিন তিনি অবস্থান স্পষ্ট করলেন।
বিজেপিতে যোগদানের আগে কী বললেন সব্যসাচী দত্ত?https://t.co/I4HBeRAoo9 pic.twitter.com/ueHH9mSc8s
— IE Bangla (@ieBangla) October 1, 2019
EXCLUSIVE: ‘মমতার সঙ্গে কেন কথা বলব? বিজেপিতে যোগ দিতে যাইনি’
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্মদিনে সল্টলেকে নিজের ওয়ার্ডে যজ্ঞ করতে দেখা গিয়েছিল সব্যসাচীকে। তার আগে নিজের গণেশ পুজোয় পদ্ম ফুলের আদলে মণ্ডপ ও কৈলাশ বিজয়বর্গীয়, অরবিন্দ মেনন, দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়দের সঙ্গে সব্যসাচীর ঘনিষ্ঠতা তাঁর বিজেপিতে যোগদানের জল্পনা আরও উস্কে দিয়েছিল। যদিও তখনও এ প্রসঙ্গে সব্যসাচী বলেছিলেন, ‘‘আমার ওয়ার্ডে ওই অনুষ্ঠান হচ্ছিল, তাই গিয়েছিলাম। উনি কি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী? তৃণমূলের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। প্রধানমন্ত্রী কি দলের ঊর্ধ্বে? দলের লোক প্রশ্ন করতে চাইলে জবাব দেব’’। শেষমেশ রাজনীতির সব হিসেবনিকেশ উলটপালট করে তৃণমূলের সব্যসাচীর দলবদল পুজোর মুখে বঙ্গ রাজনীতিতে নতুন মাত্রা এনে দিল বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।