বিজেপিতে সব্যসাচী, আজই যোগদান

নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে অমিত শাহের উপস্থিতিতেই পদ্ম পতাকা হাতে তুলে নেবেন বিধাননগরের প্রাক্তন মহানাগরিক তথা রাজারহাট-নিউটাউনের তৃণমূল বিধায়ক।

নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে অমিত শাহের উপস্থিতিতেই পদ্ম পতাকা হাতে তুলে নেবেন বিধাননগরের প্রাক্তন মহানাগরিক তথা রাজারহাট-নিউটাউনের তৃণমূল বিধায়ক।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
sabyasachi dutta, সব্যসাচী দত্ত

সব্যসাচী দত্ত। অলঙ্করণ: অভিজিৎ বিশ্বাস।

বসন্তে বার্তা দিয়েছিলেন, আর শরৎকালে 'কথা রাখতে' চলেছেন সব্যসাচী দত্ত। দীর্ঘ জল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে আজ বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন সব্যসাচী দত্ত। মঙ্গলবার গেরুয়াশিবিরে যোগ দেওয়ার কথা এদিন  ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানিয়েছেন স্বয়ং সব্যসাচীই। ‘‘কাল আমি বিজেপিতে যোগ দিচ্ছি’, দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এ কথাই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানিয়েছেন সব্যসাচী দত্ত। বিজেপি সূত্রে খবর, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কেন্দ্রীয় সভাপতি তথা দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতিতেই পদ্ম পতাকা হাতে তুলে নেবেন বিধাননগরের প্রাক্তন মহানাগরিক তথা রাজারহাট-নিউটাউনের তৃণমূল বিধায়ক।

EXCLUSIVE: ‘মমতার সঙ্গে কেন কথা বলব? বিজেপিতে যোগ দিতে যাইনি’

Advertisment

উল্লেখ্য, লোকসভা ভোটের মুখে সল্টলেকে সব্যসাচীর বাড়িতে মুকুল রায়ের লুচি-আলুর দম খাওয়া নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয় বঙ্গ রাজনীতিতে। মুকুল-সব্যসাচীর ঘনিষ্ঠতা একেবারেই ভাল চোখে দেখেননি তৃণমূল নেতৃত্বে। তখন থেকেই তৃণমূল-সব্যসাচীর সম্পর্কে ফাটলের সূত্রপাত। এরপর দলের ‘অবাধ্য’ হয়েই একের পর এক দলবিরোধী মন্তব্য করে বিতর্কে জড়াতে থাকেন সব্যসাচী। সংঘাত চরমে পৌঁছোয়, যখন বিদ্যুৎভবনে সরকারি কর্মচারী ইউনিয়নের বিক্ষোভে অংশ নিয়ে দলেরই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন সব্যসাচী, তখনই তৃণমূল-সব্যসাচী সংঘাত সপ্তমে ওঠে। এরপরই সব্যসাচীকে কোণঠাসা করার প্রক্রিয়া শুরু করে তৃণমূল নেতৃত্ব। বিধাননগরের মেয়রের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন ৩৫ জন কাউন্সিলর। সেই অনাস্থার নোটিসকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন সব্যসাচী। সেই মামলায় সব্যসাচীকে স্বস্তি দিয়ে হাইকোর্ট বিধাননগর পুরনিগমে আস্থা ভোটের তলবি চিঠির বৈধতা নেই বলে জানিয়ে দেয় এবং ফের নতুন করে প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দেয়। এরপরের দিনই মেয়র পদ থেকে সরে দাঁড়িয়ে দলের সঙ্গে সংঘাতের আবহ জিইয়ে রাখেন সব্যসাচী। কিন্তু কখনই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে, সরাসরি কথা বলতে চাননি সব্যসাচী। বরং কৌশলে তা এড়িয়ে গিয়েছেন এবং এতকাল জানিয়ে এসেছেন, 'আমি তো তৃণমূলেই আছি'। তবে এদিন তিনি অবস্থান স্পষ্ট করলেন।

‘গণশক্তি পড়ে জেনেছিলাম, বাবা রাজ্য সম্পাদক হয়েছেন’

মুকুল রায়ের সঙ্গে লুচি-আলুর দম খাওয়ার পর থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে সব্যসাচীর সম্পর্কের ফাটল শুরু হয়। এরপর একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে মুকুল রায়ের সঙ্গে পাত পেড়ে খিচুড়ি-বেগুন ভাজা খেতে দেখা যায় সব্যসাচীকে, যা তাঁর বিজেপিতে যোগদানের জল্পনাকে আরও উস্কে দেয়। এরপর ‘দাদা’ মুকুলের পাশে বসে পরোটা-ফিশ কাটলেট খাওয়ার পর সব্যসাচীর বিজেপিতে যোগদানের জল্পনার পারদ আরও চড়ে। এর মাঝে কখনও তিনি দলের বিধায়ক সুজিত বসুর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন, কখনও বা সব্যসাচীর গলায় শোনা গিয়েছে ‘ভারত মাতা কী জয়’ স্লোগান। এমনকী, এনআরএসকাণ্ডে দলনেত্রীর ভূমিকারই সমালোচনা করেছিলেন সব্যসাচী। দলবিরোধী কাজের অভিযোগে সব্যসাচীকে ‘মীরজাফর-বেইমান’ বলে কটাক্ষ করেন ফিরহাদ হাকিম। সব্যসাচীকে দল ছাড়ার বার্তাও দেন ফিরহাদ। একইসঙ্গে তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও জানান, ‘‘সব্যসাচীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে’’। মমতার ডাকা বৈঠকও এড়ান সব্যসাচী। কিন্তু বিধাননগরের মেয়রের বিরুদ্ধে অনাস্থা ছাড়া এখনও সব্যসাচীর বিরুদ্ধে তেমন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি তৃণমূল নেতৃত্ব।

Advertisment

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্মদিনে সল্টলেকে নিজের ওয়ার্ডে যজ্ঞ করতে দেখা গিয়েছিল সব্যসাচীকে। তার আগে নিজের গণেশ পুজোয় পদ্ম ফুলের আদলে মণ্ডপ ও কৈলাশ বিজয়বর্গীয়, অরবিন্দ মেনন, দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়দের সঙ্গে সব্যসাচীর ঘনিষ্ঠতা তাঁর বিজেপিতে যোগদানের জল্পনা আরও উস্কে দিয়েছিল। যদিও তখনও এ প্রসঙ্গে সব্যসাচী বলেছিলেন, ‘‘আমার ওয়ার্ডে ওই অনুষ্ঠান হচ্ছিল, তাই গিয়েছিলাম। উনি কি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী? তৃণমূলের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। প্রধানমন্ত্রী কি দলের ঊর্ধ্বে? দলের লোক প্রশ্ন করতে চাইলে জবাব দেব’’। শেষমেশ রাজনীতির সব হিসেবনিকেশ উলটপালট করে তৃণমূলের সব্যসাচীর দলবদল পুজোর মুখে বঙ্গ রাজনীতিতে নতুন মাত্রা এনে দিল বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।

bjp