/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2018/05/TMC-canditate-Dulal-Das-01.jpg)
রাজ্য়ে ফের ভাঙতে চলেছে কংগ্রেসের ঘর।
প্রধান বিরোধী দল নিয়ে খচখচানি কিন্তু রয়েই গেল
জয়প্রকাশ দাস
মুখ রাখল মহেশতলা। মান বাঁচল তৃণমূল কংগ্রেসের। তবে এখানে কংগ্রেস-বাম মিলেও বিজেপিকে তিন নম্বরে পাঠাতে পারল না। বহিরাগত তকমা নিয়েও সেকেন্ড বয় হলেন গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী।
আগামী দিনে বিরোধী নিধনে তৃণমূল কংগ্রেসের জিয়নকাঠি হতে চলেছে মহেশতলা উপনির্বাচনের ফল। শাসকদল যা চেয়েছিল তাই পেল এই বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে। কোনও বোমাবাজি নয়, গুলি নয়, নিদেনপক্ষে মারধরের ঘটনাও ঘটেনি ২৮ মের ভোটে। প্রতিটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভোট হয়েছে। ভোটের দিন বুথ জ্য়াম বা অশান্তির কোনও অভিযোগ করেনি বিজেপি বা সিপিআই (এম)।
গণনার সময় ইভিএম খোলার পর থেকেই এগোতে শুরু করে তৃণমূল। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের ব্য়বধান ৬২,৮৯৬ ভোটের। তবে শতাংশের হিসবে বিজেপির ভোট বেড়েছে তিনগুণ। সিপিআই (এম) নেমে গেল অনেকটাই, ৪২.২০ থেকে একেবারে ১৬.৮০ শতাংশে, তাও আবার কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে।
আরও পড়ুন: Bypoll Results 2018: প্রশ্নের মুখে নরেন্দ্র মোদি ম্যাজিক
রাজ্যে সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন থেকে গণনা পর্যন্ত সন্ত্রাসের অভিযোগে বিদ্ধ হতে হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রসকে। নিত্য়দিনের গুলি-বোমা আর খুন ছিল পঞ্চায়েত ভোটের রোজনামচা। গণনার দিনও ছাপ্পা দেখেছিল বাংলার মানুষ। শাসকদলেরও বেশ কয়েকজন খুন হয়েছেন। দলের শীর্ষস্তরে এই নিয়ে তোলপাড় হয়েছে। আপাতত মহেশতলার উপনির্বাচনের ফলাফলই মুক্তির পথ দেখাল তৃণমূলকে। নির্বাচনে জয় নিশ্চিত হতেই সেখানে পৌঁছে যান ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ও মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। ২০১৬-তে এই কেন্দ্রে তৃণমূলের ভাগে পড়েছিল ৯৩,৬৭৫টি বা ৪৮.৬০ শতাংশ ভোট, এবার তা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে হয়েছে ১,০৪,৮১৮টি বা ৫৮.১৩ শতাংশ ভোট।
দলীয় প্রার্থীর জয়ের পর কী বললেন অভিষেক? তাঁর বক্তব্য়, "আমরা তৃতীয় রাউন্ডের গণনার সময়েই ১৪,০০০ ভোটে এগিয়ে ছিলাম। যাঁরা বলেছিলেন গণতন্ত্র নেই, কেন্দ্রীয় নিরপত্তা কর্মীদের দিয়ে ভোট হলে অন্য়রকম ভোট হয়, তাঁদের বাড়া ভাতে ছাই দিয়ে মুখে কালি দিয়েছে মহেশতলার মানুষ।" অভিষেকের দাবি, "কালিম্পং থেকে কলকাতা, রাজ্য়ের সর্বত্র যেখানেই ভোট হোক, তৃণমূল কংগ্রেসের জয়ের ব্য়বধান বাড়বেই।" মহেশতলার মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের যুবরাজ বলেছেন, উন্নয়ন দেখেই এখানে ভোট হয়েছে।
আরও পড়ুন: পুরুলিয়ায় ঝুলন্ত মৃতদেহ, বিজেপি-তৃণমূল চাপানউতোর
মহেশতলার উপনির্বাচনই যে আপাতত দলীয় প্রচারের মডেল হতে চলেছে, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। তৃণমূল ভবনে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের বক্তব্য়ে তা স্পষ্ট। তিনি বলেন, "উন্নয়নের উপর আস্থা রেখেছেন মানুষ। বিরোধীরা আসলে নির্বাচনকে ভয় পান।" এই জয়কে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে শান্তির জয় বলে উল্লেখ করে পার্থবাবু বলেন, "কেন্দ্রীয় বাহিনী কোনও বিষয় নয়, ভোটাররাই আসল।"
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2018/05/TMC-canditate-Dulal-Das-01.jpg)
এদিকে মহেশতলায় বিজেপি যে জয় পবে না তা বিলক্ষণ জানতেন দলের নেতৃত্ব। সংগঠনের হাল এতটাই খারাপ যে সব বুথে এজেন্টও দিতে পারেনি পদ্ম শিবির। তৎসত্ত্বেও, যেখানে ২০১৬-তে বিজেপি পেয়েছিল ১৪,৯০৯ টি ভোট, এবার পেয়েছে ৪১,৯৯৩ টি। মোট ভোটসংখ্যার ৭.৭০ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৩.২৮ শতাংশ। বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, "আমাদের লক্ষ্য় ছিল যাতে ২৫ শতাংশের আশেপাশে ভোট পাই। সেই লক্ষ্য়ে আমরা সফল।"
কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানোর পরেও তাঁদের জয় নিয়ে অভিষেকের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সায়ন্তনবাবুর বক্তব্য, "আগামী লোকসভা ভোটের পর অভিষেক এভাবে বলতে পারবেন তো? লিখে নিন, তখন অভিষেক বলবেন ইভিএম খারাপ ছিল।"
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: ভাঙা ঘরের হাল ফেরাতে জঙ্গলমহলে মুখ্যমন্ত্রী?
গত ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে মহেশতলায় সিপিআই (এমের) ভোট ছিল ৮১,২২৩। এবার কমে হয়েছে ৩০,৩১৬। এর পিছনে গতবারের মহেশতলার সিপিআই (এম) প্রার্থী শমীক লাহিড়ী সাংগঠনিক ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেও ভাঙলেন তবু মচকালেন না। শুরুতে তিনি বলেন, "রুটি-রুজির লড়াইটাকে সামনের সারিতে আনতে পারিনি।" এরপর তিনি বলেন, "জাতপাতের ভিত্তিতে ভোট হয়েছে মহেশতলায়। এ লড়াইতে যে দক্ষতা দরকার হয় তা আমাদের ছিল না। সংগঠন দিয়ে এখন আর ভোট হয় না।"
পঞ্চায়েত নির্বাচনের ধারা বজায় রইল মহেশতলা উপনির্বাচনের ফলাফলেও। বামেদের টপকে দ্বিতীয় স্থান পেলেও তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে বিজেপি অনেক পিছনেই রয়ে গেল। আর বামেদের রক্তক্ষরণ বন্ধ হওয়ার কোনও লক্ষণই যে নেই, তাও আপাতত স্পষ্ট।