সর্ব শক্তি দিয়ে ত্রিপুরার পুরসভা নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। বাংলা থেকে ডজন-ডজন নেতা, একাধিক বিধায়ক গিয়েছিলেন ত্রিপুরার পুরপ্রচারে। সব থেকে বেশি জোর দিয়েছিল আগরতলা পুরসভা নির্বাচনে। ওই রাজ্যে একমাত্র আমবাসা পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ঘাসফুল ফুটেছে। এক মাস আগে কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে আসা সুমন পাল মান বাঁচিয়েছে তৃণমূল শিবিরের। ৪১ ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যে রাজনৈতিক মহলে চাউর হয়েছে সুমন যোগ দিতে চলেছেন বিজেপিতে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে সুমন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, 'ঘুরিয়ে প্রস্তাব এসেছিল ঠিকই। তবে আমি তৃণমূলের পতাকা নিয়ে রাজনীতি করব। দিদির দল ছাড়ার কোনও প্রশ্নই নেই।'
ভিন রাজ্যে দলকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে বাংলায় জয়ের পর তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব প্রথম পর্যায়ে বেছে নিয়েছিল পরশি রাজ্য ত্রিপুরাকে। পুরসভার নির্বাচনেই তাই নজর দিয়েছিল তৃণমূল। অভিযোগ, সংগঠন করতে গিয়ে ওই রাজ্যে বারে বারে হামলার শিকার হয়েছে ঘাসফুল নেতৃত্ব। মাটি কামড়ে পড়ে থেকেছেন এরাজ্য়ের তৃণমূল নেতা-নেত্রীরা। পুরভোটের ফল প্রকাশ হতেই দেখা গেল একমাত্র ১৫ আসনের আমবাসা পুরসভায় একটি আসনে শিঁকে ছিড়েছে তৃণমূলের। তাতেই আপাতত সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে তৃণমূলকে।
সুমনের জয়ের পিছনে রহস্য কী? বছর চুয়াল্লিশের সুমন বলেন, 'বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর আমাদের গ্রামে কোনও উন্নয়ন হয়নি। গরীব গরীব রয়ে গিয়েছে। সব জায়গায় জলের ব্যবস্থা নেই। রাস্তা নেই। ড্রেন নেই। তাই মানুষ তৃণমূলের ওপর ভরসা করেছে।' আমবাসা ব্লক কংগ্রেসের প্রাক্তন কার্যকরী সভাপতি সুমন মাত্র এক মাস আগে ঘাসফুল শিবিরে যোগ দিয়েছেন। তাঁর আক্ষেপ, 'আমরা যদি মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচার করতাম তাহলে আমবাসা বোর্ড দখল করতে পারতাম। প্রশাসন অনেকে ক্ষেত্রেই আমাদের অনুমতি দেয়নি। মাত্র একদিন দলবল নিয়ে প্রচার করেছিলাম। তবে বাকি দিনগুলি আমি একা একাই বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করেছি।'
আমবাসা বাজারে মাছের দোকান রয়েছে সুমনের। আগামি বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল ভাল ফল করবে বলে মনে করছেন তিনি। বিজেপিতে যোগ দেওয়া নিয়ে কী কোনও কথা হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে ত্রিপুরার একমাত্র তৃণমূল কাউন্সিলর বলেন, 'আমি নাকি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছি। এই প্রচার চলছে। এটা একেবারে মিথ্যা। আমি বিজেপিতে যোগ দেব না। সরাসরি কথা না বলেও ওরা ঘুরিয়ে আভাস দিয়েছে। যতই প্রস্তাব আসুক না কেন আমি তৃণমূলেই থাকব। যেহেতু মানুষ তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে, এই দল ছেড়ে যাব না। জিতে দলবদল করা ঠিক নয়। দিদির দলেই থাকছি, বিজেপিতে যাচ্ছি না।' জয়ের পরে তাঁর কাছে স্থানীয় নেতৃত্বের অভিনন্দন বার্তা ছাড়াও ফোন এসেছে তৃণমূল নেতা আশিসলাল সিং, আকাশ
বন্দ্যোপাধ্যায়ের। জানিয়েছেন সুমনবাবু।
এই জয়ে বাংলার দুই বিধায়ককেও কৃতিত্ব দিয়েছেন সুমন। তিনি বলেন, 'সুপ্রকাশ গিরি ও অরিন্দম গুঁই আমাদের গ্রামে এসে সভা করে গিয়েছেন। বাংলার ওই দুই বিধায়কের প্রশাংসা করেছেন ত্রিপুরার তৃণমূল নেতা আশিসলাল সিংও। তিনি বলেন, 'সুপ্রকাশ গিরি ও অরিন্দম গুঁই রাত দশটাতেও কর্মী বৈঠক করেছেন। এখানে এসেও কর্মীদের পাশে ছিলেন। এই পুরনির্বাচনে তেলিয়ামুড়া থেকে কৈলাশশহর পর্যন্ত মহিলা নেত্রী স্বর্ণপ্রভা চট্যোপাধ্যায় ও রাখী দেবনাথ মার খেয়েও অলআউট লড়াই করে গিয়েছেন।'
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন