বিজেপির রথযাত্রা নিয়ে এবার জোড়া মামলা দায়ের হল হাইকোর্টে। সোমবার একদিকে যখন বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর সিঙ্গল বেঞ্চে গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রার অনুমতি চেয়ে নতুন করে আবেদন করেছে বিজেপি, ঠিক তখনই হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চে বিজেপির রথযাত্রা বন্ধ করাতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করলেন এক আইনজীবী। এই দুই মামলারই শুনানি হবে আগামিকাল।
এর আগে ৭ ডিসেম্বর কোচবিহার থেকে বিজেপির গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা সূচনার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আদালতের রায়ের পর আর সেই যাত্রা শুরু হয়নি, আসেন নি দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। যদিও আগের দিন সভা হবে বলে ঘোষণা করেছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বিপরীত মন্তব্য করেছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। শেষমেশ বিজেপি নেতৃত্ব সেদিন জানিয়ে দেন, তাঁরা আদালতের রায় মেনেই সভা করছেন না। আদালতের নির্দেশ মেনেই গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা করবে গেরুয়া শিবির।
আরও পড়ুন: রথ বাতিল নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের দ্বারস্থ হচ্ছে বিজেপি
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার ও বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছিলেন, ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্যের মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব এবং রাজ্য পুলিশ প্রধানের সঙ্গে বিজেপির তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল বৈঠক করবেন। ওই বৈঠকেই রথযাত্রার রূপরেখা তৈরি করারও নির্দেশ দিয়েছিলেন ডিভিশন বেঞ্চ।
বৈঠকের জন্য বিজেপি মুকুল রায়, জয়প্রকাশ মজুমদার এবং প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম পাঠায় নবান্নে। ফের রাজ্য বিজেপি নেতা মুকুল রায় ও জয়প্রকাশ মজুমদারের নাম নিয়ে আপত্তি জানায় রাজ্য প্রশাসন। রাজ্যের সেই আপত্তি খারিজ করে দেয় আদালত। হাইকোর্টের নির্দেশ মত ১৩ ডিসেম্বর রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে লালবাজারে বৈঠক করেন মুকুল রায়, কৈলাশ বিজয়বর্গীয় ও দিলীপ ঘোষ। যাত্রা ও সভার বিস্তারিত কর্মসূচি প্রশাসনিক কর্তাদের হাতে তুলে দেন বিজেপি নেতৃত্ব।
১৫ ডিসেম্বর রাজ্য প্রশাসন বিজেপির রাজ্য দপ্তরে চিঠি মারফত জানিয়ে দেয়, রথযাত্রা বা গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রার অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ হিসাবে নানা বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। ওই চিঠিতে এক জায়গায় বলা হয়েছে, এই যাত্রার দরুন সাম্প্রদায়িক হিংসা হতে পারে। এই যাত্রা শুরু হওয়ার পর তাতে যোগ দিতে পারে বজরঙ্গ দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মত সংগঠনও। তাছাড়া, এই সময়ে উৎসবের মরশুম। তাই বিজেপির ওই কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে না। হাতিয়ার করা হয় গোয়েন্দা দপ্তরের পাঠানো রিপোর্টকে। শনিবারই বিজেপি নেতৃত্ব জানিয়ে দেয়, হাইকোর্টে ফের রথযাত্রা নিয়ে আবেদন করা হবে।
সোমবার গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা নিয়ে প্রশাসনের নাকচ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় বিজেপি। এদিন বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বিজেপির আইনজীবী সপ্তাংশু বসু। রাজ্যের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেই বিচারপতি চক্রবর্তীর এজলাসে বিজেপির পক্ষ থেকে মামলা দ্রুত শোনার আর্জি জানানো হয়, যদিও সেই আর্জি বিচারপতি নাকচ করে দেন।
আরও পড়ুন: বিজেপিকে রথ টানতে দিল না রাজ্য সরকার
আগামীকাল মামলার শুনানি হবে বলে জানা গিয়েছে। বিজেপির আইনজীবী জানান, আগামী ২২, ২৪ ও ২৬ ডিসেম্বর যথাক্রমে কোচবিহার, গঙ্গাসাগর ও তারাপীঠ থেকে যাত্রা কর্মসূচির সূচনা হবে বলে জানানো হয়েছিল রাজ্য প্রশাসনকে। কিন্তু সেই কর্মসূচি স্থগিত করে দিয়েছে প্রশাসন। ১৬টি জায়গায় সভা করতে চেয়ে অনুমতি মিলেছে ১১টি ক্ষেত্রে।
এদিকে গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রার অনুমতি চেয়ে আবেদনের দিনই প্রধান বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চে এই রথযাত্রা বন্ধ করতে চেয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন আইনজীবী রমাপ্রসাদ সরকার। তাঁর বক্তব্য, "এই রথযাত্রার ফলে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে। পাশাপাশি জনজীবন স্তব্ধ হয়ে যাবে ও সাধারণ মানুষকে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে। আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছি, যাতে এই রথযাত্রার কোন অনুমতি তাঁরা না দেন।"
আগামীকাল রথযাত্রা জোড়া মামলার শুনানি হাইকোর্টের সিঙ্গল ও ডিভিশন বেঞ্চে।