Amit Shah in West Bengal: 'স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া অনুপ্রবেশ ও পাচার রোখা কঠিন। তবে শীঘ্রই সেই রাজনৈতিক পরিস্থিতিও তৈরি হবে।' দু'দিনের বঙ্গ সফরে এসে এভাবেই ঘুরিয়ে সীমান্তে বিএসএফ-এর কাজের পরিধি বাড়ানো ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থানের সমালোচনা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। এরই পাশাপাশি এদিন সীমান্ত রক্ষায় বিসএফ-এর ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন অমিত শাহ।
বৃহস্পতিবার কলকাতা থেকে সোজা উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জে উড়ে যান অমিত শাহ। সেখানে ৬টি অত্যাধুনিক ভাসমান আউটপোস্ট এবং ওয়াটার অ্যাম্বুল্যান্সের উদ্বোধন করেন তিনি। পরে বনগাঁর হরিদাসপুরে মৈত্রী সংগ্রহালয়ের শিলান্যাস করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে সীমান্ত। এই সীমান্তেই দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রবেশ চলে বলে দাবি শাহের। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ''ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তেই সবচেয়ে বেশি অনুপ্রবেশ। তবে এবার যে অত্যাধুনিক নজরদারির ব্যবস্থা হয়েছে তাতে এই অনুপ্রবেশ এবং পাচার বন্ধ হবে।''
এদিন তিনি আরও বলেন, ''সুন্দরবন অত্যন্ত সংবেদনশীল এলাকা। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া অনুব্পরেশ রোখা কঠিন। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়েই সবচেয়ে বেশি অনুপ্রবেশ। অনুপ্রবেশ ও পাচারকারীদের রুখতে সচেষ্ট বিএসএফ। অনুপ্রবেশ রোখা বড়া চ্যালেঞ্জ।''
এদিন সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর প্রশংসায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ''সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব বিএসএফ-এর। বিএসএফ আছে বলেই দেশ সুরক্ষিত। ফেন্সিং দিয়েই হবে না, দেশের সুরক্ষা দিতে পারে বিএসএফ। দেশের সব সীমান্ত সুরক্ষিত করতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অনুপ্রবেশ রুখতে টহলদারিতে আরও বেশি জোর দিতে হবে।''
উল্লেখ্য, দেশের সীমান্ত এলাকাগুলিতে বিএসএফ-এর কাজের পরিধি বাড়াতে চায় কেন্দ্রীয় সরকার। তবে এক্ষেত্রে ঘোরতর অপত্তি রয়েছে বাংলা-সহ একাধিক রাজ্যের। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে তাঁর আপত্তির কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন সেই ইস্যুতে রাজ্যকে খোঁচা দিয়ে অমিত শাহ বলেন, ''মুক্তিযুদ্ধের সময় বিএসএফ-এর বড় ভূমিকা রয়েছে। সত্তরের দশকে বাংলাদেশের জন্মের সময়েও বিএসএফ ও ভারতের সেনা দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করে গিয়েছে।''
হিঙ্গলগঞ্জের কর্মসূচি সেরে আজই শাহ যাবেন উত্তরবঙ্গে। বিকেলে শিলিগুড়ি রেলওয়ে ইনস্টিটিউটের মাঠে প্রকাশ্য জনসভা করবেন অমিত শাহ। আজ রাতেই পাহাড়ের বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করার কথা রয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর।
একুশের ভোটে বাংলা বিজয়র স্বপ্ন অধরা থেকে গিয়েছে গেরুয়া শিবিরের। গত বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর এই প্রথম রাজ্যে অমিত শাহ। শাহী-সফর নিয়ে বেশ চনমনে বিজেপির বঙ্গ ব্রিগেডও। গতকালই দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, ''বাংলায় লড়াই করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দল। এতে খুশী বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। তাই তাঁরা আসছেন।''
আরও পড়ুন- ‘তৃণমূলের দালাল’, কংগ্রেসপন্থী আইনজীবীদের প্রবল বিক্ষোভের মুখে খোদ চিদম্বরম
রাজনৈতিক মহলও বর্তমান পরিস্থিতিতে অমিত শাহের বঙ্গ সফর বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে। এই মুহূর্তে বেশ কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনার উদাহরণ টেনে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ে সরব বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসনেরও দাবি তুলেছেন পদ্ম নেতারা। অন্যদিকে, কোন্দল-ভাঙনও বঙ্গ বিজেপির অস্বস্তির অন্যতম কারণ।
ঠিক এই আবহেই রাজ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আগামিকাল অর্থাৎ শুক্রবার কলকাতায় ফিরে দলের রাজ্য ও জেলাস্তরের নেতাদের সঙ্গেও কথা বলবেন তিনি। আগামী বছরেই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট। আর তাই দ্বন্দ্ব-অভিমান ভুলে ফের একবার দলের নেতা-কর্মীদের সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপানোর বার্তাই দেবেন শাহ। এমনই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।