Advertisment

মানসের পথেই কি মান্নান, প্রশ্ন বিজেপির

"আমার যা বলার আমি সোনিয়াজিকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি। গোপনে কিছু করিনি।"

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
abdul mannan

আব্দুল মান্নানের চিঠি নিয়ে তোলপাড় রাজনৈতিক মহল। অলঙ্করণ- অভিজিত বিশ্বাস

রাজ্যের তিন বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে জোটবদ্ধ হয়ে লড়ার কথা বলে ২:৩ রফাসূত্রে যৌথ প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বাংলার বাম-কংগ্রেস। অথচ এদিকে আবার খড়গপুর বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট করা উচিত বলে সোনিয়া গান্ধীকে চিঠি পাঠিয়েছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। আর মান্নানের এই পদক্ষেপের পরই  প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি চাঁপদানির কংগ্রেস বিধায়ক তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে পা বাড়াচ্ছেন? এ প্রসঙ্গে বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগ্গা একধাপ এগিয়ে বলছেন, "মানস ভুঁইয়ার মতো রাজ্যসভার সাংসদ হওয়ার ইচ্ছে আছে হয়ত।" সম্প্রতি, কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্রের বক্তব্য, "আমি আগেই বলেছিলাম, এ রাজ্যে বিজেপির সঙ্গে লড়তে গেলে তৃণমূলকেই সমর্থন করতে হবে।" প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বলেন, "সবারই মতামত থাকে। কিন্তু এআইসিসি নির্দেশ দিয়েছে, বামেদের সঙ্গে জোট করে লড়াই করতে হবে।" তবে সূত্রের খবর, রাজ্য কংগ্রেসের একাংশের মধ্যে আব্দুল মান্নানের এই প্রস্তাব নিয়ে রীতিমতো চর্চা চলছে।

উল্লেখ্য, ৫০ বছরের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কখনও কংগ্রেস ত্যাগ করেননি আব্দুল মান্নান। এমনকী, মাঝেমধ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুরও চড়িয়েছেন তিনি। রাজ্যে চিটফান্ড নিয়ে সিবিআই-এর তদন্তের ব্যাপারেও এই কংগ্রেস নেতার ভূমিকাই মুখ্য। এ জন্য তৃণমূলের একাধিক মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়কের চিটফান্ডকাণ্ডে নামও জড়িয়েছে এবং কেউ কেউ গ্রেফতারও হয়েছেন। এখনও অনেকের ঘাড়েই ঝুলছে গ্রেফতারির খাঁড়া। ফলে, চাপদানির বিধায়ক তৃণমূলের সঙ্গে জোট করার প্রস্তাব দেওয়ায়, অনেকেই চোখ কপালে তুলেছেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র যদিও বলেছেন, "অনেকেই প্রস্তাব দেন, কিন্তু সিদ্ধান্ত নেয় এআইসিসি।" তিনি একথা বললেও রাজ্য কংগ্রেসের একাংশ কিন্তু মান্নান সাহেবের প্রস্তাবকে একটু বাঁকা চোখেই দেখছেন। তাঁদের বক্তব্য, "তৃণমূল ঘনিষ্ঠ হতে চাইছেন মান্নান।" এর পাশাপাশি অন্য পক্ষ আবার বলছে, "বিজেপিকে হারানোর উদ্দেশ্যেই তিনি একথা বলেছেন। খড়্গপুর যতই সাবেক কংগ্রেসে ঘাঁটি হয়ে থাকুক এখন আর সেই সাংগঠনিক অবস্থা নেই।"

আরও পড়ুন: শোভন মমতার কাছে ফেরায় মুখ খুললেন রত্না

কালিয়াগঞ্জ, করিমপুরে ও খড়গপুরে একই দিন অর্থাৎ ২৫ নভেম্বরই উপনির্বাচন। অথচ, একই রাজ্যে একটি আসনে তৃণমূলের সমর্থন নিয়ে লড়াই, আর অন্যদিকে দু'টি আসনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই! কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া ওমপ্রকাশ মিশ্র বলেন, "দু'নৌকায় পা রেখে চলা যায় না। আমি তো আগেই বলেছিলাম, এ রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গেলে বাম-কংগ্রেসের তৃণমূলকে সহযোগিতা করতে হবে। তাছাড়া কোনও পথ নেই। তাহলে তখন কেন আমাকে দলে কোনঠাসা করা হয়েছিল? আমাকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল? এখন সে কথাই বলতে হচ্ছে আব্দুল মান্নানকে।" তাঁর বক্তব্য, "বাম-কংগ্রেসের ভূমিকার জন্যই বিজেপি এ রাজ্য থেকে ১৮টি লোকসভার আসন উপহার পেয়েছে।" তাঁর প্রশ্ন, "বিজেপিতে চলে যাওয়া সিপিএমের ৭০ শতাংশ ভোট কি ফেরত পাওয়া যাবে?"

আরও পড়ুন: মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হতে পারে, হুঁশিয়ারি বিজেপি নেতার

তবে গোটা ঘটনায় বিজেপি মান্নানের তৃণমূলে যোগদানের গন্ধই পাচ্ছে। বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগ্গা বলেন, "এ রাজ্যে তৃণমূল, কংগ্রেস ও বামফ্রণ্ট একযোগে লড়াই করলেও বিজেপিকে হারাতে পারবে না। বরং আরও বেশি ভোটে হারবে। একুশে কোনও ভবিষ্যৎ নেই, তাই যদি তৃণমূলের হাত ধরে মানস ভুঁইয়ার মতো তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ হওয়া যায়! কংগ্রেস কর্মীরাও তো তৃণমূলের কাছে মার খাচ্ছে।"

আরও পড়ুন: রাজস্থান-গুজরাটে মারা গেলে মুসলমান, আর কাশ্মীরে হলে বাঙালি: দিলীপ ঘোষ

বিধানসভায় সারাবছর একসঙ্গে নানা ইস্যুতে তৃণমূলের বিরোধিতা করেন আব্দুল মান্নান ও সুজন চক্রবর্তী। মান্নানের তৃণমূলকে সমর্থনের প্রশ্নে সুজন চক্রবর্তীর সাফ জবাব, "কংগ্রেসের কোন নেতা কখন কী বলবেন তার জন্য প্রতিক্রিয়া দিতে হবে নাকি! এ নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না। অফিসিয়াল কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের সার্বিক জোট হয়েছে তিনটি বিধানসভার আসনে।"

এদিকে আব্দুল মান্নানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি মেজাজ হারিয়ে ফেলেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, "এ ব্যাপারে যা বলার প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি বলবে ও দিল্লি বলবে। আমি কিছু বলব না। আমার যা বলার আমি সোনিয়াজিকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি। গোপনে কিছু করিনি।"

CONGRESS All India Trinamool Congress bjp
Advertisment