বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনায় লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে উত্তাল হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। এবার বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মবার্ষিকীর মুখে আবারও সেই ঘটনার প্রসঙ্গে টেনে বিজেপির নাম না করে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বীরসিংহ গ্রামে বিদ্যাসাগরের জন্মভিটেয় গিয়ে মমতার কটাক্ষ, ‘‘অকালবোধনের মতো বিদ্যাসাগের মূর্তি নতুন করে স্থাপন করতে হল। কারণ, একদল সন্ত্রাসে উন্মত্ত দানবীয় লোক এসে মূর্তি ভেঙে গেল’’। এরপরই মমতা বলেন, ‘‘মূর্তি ভেঙে সব শেষ করা যায় না’’। অন্যদিকে, আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে স্কুলে-কলেজে বিদ্যাসাগর সম্পর্কে পড়ানোর পরামর্শও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বীরসিংহ গ্রামকে 'এডুকেশন হাব' হিসেবে গড়ার কথাও এদিন ঘোষণা করেছেন মমতা। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজে মূর্তি ভাঙার ঘটনার স্মৃতি উসকে বিজেপিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতেই বিদ্যাসাগরের জন্মদিনকে হাতিয়ার করে এহেন উদ্যোগের কথা ঘোষণা করলেন মমতা।
ঠিক কী বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?
বীরসিংহ গ্রামে বিদ্যাসাগরের জন্মভিটেয় গিয়ে এদিন শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপরই তিনি বলেন, ‘‘অকালবোধনের মতো বিদ্যাসাগের মূর্তি নতুন করে স্থাপন করতে হল। কারণ, একদল সন্ত্রাসে উন্মত্ত দানবীয় লোক এসে মূর্তি ভেঙে গেল, তারা হয়তো বিদ্যাসাগরকে চেনেও না না। মূর্তি ভেঙে ইসিহাস শেষ করা যায় না’’।
আরও পড়ুন: রাজীব কুমারকে খুন করতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: অর্জুন সিং
উল্লেখ্য, লোকসভা ভোটের সময় কলকাতায় বিজেপির কেন্দ্রীয় সভাপতি অমিত শাহর রোড শো ঘিরে ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটে কলেজ স্ট্রিট চত্বরে। বিদ্যাসাগর কলেজেও তাণ্ডব চালানো হয়। তখনই সেই কলেজের একটি ঘরে থাকা বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুর করা হয়। বিজেপির বিরুদ্ধেই বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। অন্যদিকে, এ ঘটনায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেছে বিজেপিও। এ নিয়ে উত্তাল হয় রাজ্য রাজনীতি।
EXCLUSIVE: ‘মমতার সঙ্গে কেন কথা বলব? বিজেপিতে যোগ দিতে যাইনি’
বিদ্যাসাগরের দ্বিশতবার্ষিকী উপলক্ষে মমতা বলেন, ‘‘আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর স্কুল-কলেজে বিদ্যাসাগরকে নিয়ে পড়ানো হোক। বিদ্যাসাগর কে ছিলেন, কী করেছেন, সব পড়ানো হোক’’। পাশাপাশি বীরসিংহ গ্রামে বিদ্যাসাগরের জন্মভিটের সৌন্দর্যায়নের কথাও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘বীরসিংহ বর্ণপরিচয়ের আঁতুর ঘর। এখানে ভাল রাস্তা হবে, আলোর ব্যবস্থা করা হবে, যাত্রী নিবাস হবে। এডুকেশন হাব গড়া হবে। যেমন সকলে শান্তিনিকেতন যান, এবার সকলে বীরসিংহ গ্রামেও যাবেন’’। এদিন মমতা এও বলেন, ‘‘বিদ্যাসাগরের নামে গবেষণা হোক’’।
অন্যদিকে, এনআরসি ইস্যুতে এদিন আবারও সরব হয়েছেন মমতা। তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘‘বাংলায় কোনওভাবেই এনআরসি করা হবে না। কাউকে এখান থেকে বিতাড়িত করা হবে না। ১৯৭১ সালের নামে নাকি সার্টিফিকেট চাই! ১০ বছর অন্তর জনগণনা হয়। এসব নিয়ে একদম চিন্তা করবেন না’’। উল্লেখ্য, বাংলায় এনআরসি করতে মরিয়া বিজেপি। কিন্তু প্রথম থেকেই এ ইস্যুতে বিরোধিতা জানিয়ে আসছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। ক’দিন আগে অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকের পরও মমতা জানান, বাংলায় এনআরসি করা হবে না।