বিজেপির গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা নিয়ে তিন আলোচনাকারীর মধ্যে দুজনকে নিয়ে আপত্তি জানাল রাজ্য সরকার। সোমবার বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার ও বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশের প্রতি আজ দৃষ্টি আকর্ষণ করেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত। তিনি জানান, রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য তিনজনের নাম দিয়েছে বিজেপি। তার মধ্যে মুকুল রায় ও জয়প্রকাশ মজুমদারের বিরুদ্ধে অনেকগুলো ফৌজদারী মামলা রয়েছে। এর উত্তরে আদালত ওই আবেদন গ্রহণ করেও মন্তব্য করেছে যে, রাজ্যের বহু উচ্চপদস্থ আধিকারিকের বিরুদ্ধেও মামলা রয়েছে, এতে কিছু প্রমাণ হয় না। আগামিকাল, মঙ্গলবার, এই মামলার শুনানি হবে।
এরাজ্যে গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রার ঘোষণা করেও বেশ কয়েকবার তা পিছিয়ে দিয়েছে বিজেপি। বিজেপি নেতৃত্ব প্রথমে রথযাত্রা বললেও পরে গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা নামে অভিহিত করে এই কর্মসূচিকে। অবশেষে ৭ ডিসেম্বর কোচবিহার থেকে ওই রথযাত্রার সূচনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিজেপি কোচবিহার শহরে কোথাও জায়গা পায়নি যাত্রার সূচনা এবং দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহর সভার জন্য। শেষমেষ শহরের বাইরে এক বিজেপি কর্মী নিজের সাত বিঘা জমি দেন সভা করার জন্য।
কিন্তু আয়োজন সম্পূর্ণ হলেও হাইকোর্টের রায়ের ফলে অমিত শাহর সভা বা গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রার সূচনা, কোনওটাই করাই সম্ভব হয়নি। হাইকোর্ট যাত্রার ওপর কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি না করলেও রাজ্যের পক্ষে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় আপতত বন্ধ রাখতে বলা হয় বিজেপির ওই কর্মসূচি। পাশাপাশি আদালত জানিয়ে দেয়, রাজ্যের প্রশাসনিক আধিকারিকরা যেন বিজেপির তিন প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচির দিনক্ষণ স্থির করেন।
সেইমতো বিজেপি তিনজনের নাম চূড়ান্ত করে রাজ্য সরকারকে জানিয়ে দেয়। ওই প্রতিনিধি দলে থাকার কথা মুকুল রায়, জয়প্রকাশ মজুমদার ও প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু এদিন রাজ্যের এজি ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, মুকুল রায় ও জয়প্রকাশ মজুমদারের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা রয়েছে। তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজ্যের আপত্তি রয়েছে।
আরও পড়ুন: বিজেপির রথযাত্রায় অনুমতি দিচ্ছে তৃণমূল সরকার? সেলিমের মন্তব্যে জল্পনা
মুকুলবাবুর মতে, "এটা শুধু আরও সময় নেওয়ার কৌশল।" এ ব্যাপারে দীর্ঘ প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বিজেপির জাতীয় কর্মপরিষদের এই সদস্য। তিনি বলেন, "বিপদকালে বুদ্ধিনাশ হয়। ভারতবর্ষের সংবিধান, ভারতের আইন এটার মান্যতা দেয় না। অপরাধ প্রমাণ না হলে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না। এটা ছেলেমানুষির কাজ করেছে। ডিজির বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে. মুখ্য সচিবের বিরুদ্ধ মামলা রয়েছে, স্বরাষ্ট্র সচিবের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।"
আজ দিল্লিতে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুকুলবাবুর মন্তব্য, "সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সনিয়া গান্ধীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। চন্দ্রবাবুর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, চিদাম্বরমের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেদিন রাজ্যপালের বাড়িতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, সেদিন মমতার বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তি বিনষ্টের মামলা ছিল। ১৯৯৩ সালে বারাসাত আদালতে মমতার বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় মামলা ছিল। সেই ফাইলটা তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর কোথায় চলে গিয়েছে কেউ জানে না। সেই মামলার ফয়সালা হয়েছে, না কোয়াশ হয়েছে, না ফাইলটা হারিয়ে দেওয়া হয়েছে, জানা নেই। সুতরাং এটা সরকারের ব্যাপার, সরকার করেছে।"