রাজ্যের নাম বদল নিয়ে টালবাহানা চলছে দীর্ঘ দিন ধরে। দু দুবার এ নিয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে সে নিয়ে সিদ্ধান্ত পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। রাজ্যের নাম পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলায় পরিবর্তন করা হলে, আন্তর্জাতিক দরবারে বাংলাদেশের সঙ্গে এ রাজ্যেকে গুলিয়ে ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
তবে পশ্চিবঙ্গের নাম বাংলা করার ব্যাপারে সর্বাগ্রে আপত্তি জানিয়েছিল রাজ্য বিজেপি। তাদের একাংশের যুক্তি ছিল, দেশভাগের যে স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ নামের মাধ্যমে, তা মুছে যেতে পারে বাংলা নামকরণের মাধ্যমে।
আরও পড়ুন, কী থাকছে বিজেপির রথে যে মুখ্যমন্ত্রী বলছেন ফাইভ-স্টার হোটেল?
এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ সকালে ফেসবুকে একটি পোস্টের মাধ্যমে তাঁর ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা লিখেছেন তার তর্জমা দেওয়া রইল।
‘‘সম্প্রতি দেখছি, প্রায় প্রতিদিনই বিজেপি নিজেদের রাজনৈতিক অসদুদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য প্রায় প্রতিদিনই ঐতিহাসিক স্থান ও প্রতিষ্ঠানের নাম বদল করে চলেছে।
স্বাধীনতার পর থেকে কয়েকটি রাজ্য ও নগরের নাম বদল করা হয়েছে, যেমন ওরিষা ওড়িশা হয়েছে, পণ্ডিচেরি হয়েছে পুদুচ্চেরি, ম্যাড্রাস হয়েছে চেন্নাই, বম্বে মুম্বই হয়েছে, ব্যাঙ্গালোর বেঙ্গালুরু হয়েছে। রাজ্য এবং স্থানীয় ভাষার সেন্টিমেন্টকে মাথায় রেখে এই বদলগুলি ঘটানো হয়েছে। এগুলি যথাযথ।
কিন্তু বাংলার ক্ষেত্রে পৃথক মনোভাব দেখানো হয়েছে।
বাংলা, এখানকার মাতৃভাষা। সে সম্পর্কিত সেন্টিমেন্টকে মাথায় রেখে এ রাজ্যের নাম বদলের জন্য আমাদের বিধানসভা আমাদের রাজ্যের নাম বদলের ব্যাপারে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ঠিক হয়েছিল, বাংলা ভাষায় এ রাজ্যের নাম বাংলা, ইংরেজিতে বেঙ্গল ও হিন্দিতে বঙ্গাল নামে পরিচিত হবে। সে মোতাবেক সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছিল।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক আমাদের পরামর্শ দেয় তিনটি ভাষাতেই বাংলা নাম ব্যবহার করা হোক। সেই পরামর্শ অনুসারে তিন ভাষাতেই রাজ্যের পরিবর্তিত নাম বাংলা রাখার ব্যাপারে বিধানসভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং তা ফের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে পাঠানো হয়।
কিন্তু ত দীর্ঘ সময় ধরে মুলতুবি রাখা রয়েছে।
এ ঘটনা বাংলার মানুষকে বঞ্চনারই প্রমাণ।
অবিভক্ত বাংলার রাজধানী ছিল কলকাতা। ভারত এবং বাংলাদেশ, এই দুই দেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা ছিলেন এখানকার সন্তান কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আমরা ভারতকে ভালবাসি, একই সঙ্গে ভালবাসি বাংলা এবং বাংলাদেশকে।
নামের মিল কোনও সমস্যা হওয়া উচিত নয়। আমাদের দেশের মতই আমাদের প্রতিবেশী দেশেও একটি পাঞ্জাব রয়েছে।
এ রাজ্যে শূন্য ক্ষমতাসম্পন্ন একটি রাজনৈতিক দল এ রাজ্যের নাম কী হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে? নাকি রাজ্য বিধানসভায় সর্বসম্মতভাবে পাশ হওয়া সিদ্ধান্ত মেনে সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা এবং ফেডারেল কাঠামোকে সম্মান জানানো হবে?
বাংলার মানুষ দ্রুত এ প্রশ্নের ইতিবাচক জবাব দেবেন।’’