উত্তর ২৪ পরগণার নৈহাটি পৌরসভার পর এবার দার্জিলিং পুরসভায় প্রশাসক নিয়োগ করল সরকার। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে আগামী ছ'মাসের জন্য এবং নবনির্বাচিত কাউন্সিলররা পদ গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রশাসক হিসাবে দার্জিলিং পুরসভা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় দার্জিলিংয়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে (জেনারেল)। প্রসঙ্গত, ৮ জুন দার্জিলিং পুরসভার ১৭ জন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার কাউন্সিলর যোগ দেন বিজেপিতে। দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে মুকুল-বিজয়বর্গীয়দের সামনে পদ্ম পতাকা হাতে তুলে নেন মোর্চা কাউন্সিলররা। এরপরেই সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে দার্জিলিংয়ের পুরবোর্ড।
আরও পড়ুন: মোর্চাতেও ভাঙন! দার্জিলিং পুরসভা দখলের পথে বিজেপি
উল্লেখ্য, দার্জিলিং পৌরসভার ৩২টি ওয়ার্ডে বর্তমানে ৩০ জন কাউন্সিলর রয়েছেন। দুটি আসন খালি রয়েছে (একজন কাউন্সিলরের মৃত্যু হয়েছে এবং একজন ইস্তফা দিয়েছেন)। পশ্চিমবঙ্গের নগর উন্নয়ন ও পৌরসভা বিষয়ক বিভাগের আদেশানুসারে পশ্চিমবঙ্গ মিউনিসিপ্যাল অ্যাক্ট, ১৯৯৩ এর ৪৩১ ধারার উপ-ধারা (২) এর অধীনে দার্জিলিং পৌরসভাকে প্রশাসকের হেফাজতে দেওয়া হয়। নগর উন্নয়ন ও পৌরসভা বিষয়ক বিভাগের তরফ থেকে বলা হয়, "দার্জিলিং পৌরসভাতে যে প্রশাসনিক শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ করার জন্য এবং পৌর এলাকার জনপরিষেবা স্বাভাবিক রাখার জন্য জনস্বার্থে এই শূন্যপদ ভরাট করা প্রয়োজন।" উল্লেখ্য, বিনয় তামাং পন্থী কাউন্সিলাররা চলতি মাসে শিবির পরিবর্তন করে বিজেপিতে যোগদান করায় সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে দার্জিলিংয়ের পুরবোর্ড। এরপরেই দার্জিলিং পুরসভায় প্রশাসক বসায় নগর উন্নয়ন ও পৌরসভা বিষয়ক দফতর।
পৌরসভা দফতরের গৃহীত আদেশে উল্লেখ করা হয়, পশ্চিমবঙ্গ মিউনিসিপ্যাল অ্যাক্ট, ১৯৯৩ এর ৪৩১ ধারার উপ-ধারার (২) অধীনে রাজ্য সরকার কর্তৃক নিযুক্ত প্রশাসক এবং পৌর কর্তৃপক্ষের উপর ন্যস্ত থাকবে সমস্ত ক্ষমতা। পৌর আদেশে আরও বলা হয়, "দার্জিলিং পৌরসভায় প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (জেনারেল)-কে। ছয় মাসেরও বেশি সময় বা নব নির্বাচিত কাউন্সিলররা তাঁদের নিজেদের পদ গ্রহণ না করা পর্যন্ত পৌরসভা পরিচালনা দায়িত্ব থাকবে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের উপর।"
আরও পড়ুন: রাম-রহমানকে মিলিয়ে প্রথম ভাষণেই নজর কাড়লেন অধীর
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে হালিশহর, নৈহাটি, কাঁচরাপাড়ার একঝাঁক তৃণমূল কাউন্সিলর বিজেপিতে যোগ দেওয়ার ফলে সেই সকল এলাকার পুরসভায় শূন্যপদ তৈরি হয়, এবং তারপরেই নৈহাটি পুরসভায় প্রশাসক নিয়োগ করে মমতা সরকার। তবে দার্জিলিং পুরসভা নিয়ে রাজ্যের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নামতে পারে বিজেপি। রাজ্যের এই সিদ্ধান্তকে সম্পূর্ন অনৈতিক ও বেআইনি আখ্যা দিয়ে বিজেপির দাবি, শাসকদলের যেখানেই পুরসভা হাতছাড়া হচ্ছে, সেখানেই প্রশাসক বসাচ্ছে রাজ্য সরকার। এ প্রসঙ্গে বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাশ বিজয়বর্গীয় বলেন, "রাজ্যে একনায়কতন্ত্র চালাচ্ছে সরকার। এই সিদ্ধান্তটি কার্যত গণতন্ত্রকে খুন করার সমান। নির্বাচিত পুরবোর্ডকে সরিয়ে প্রশাসকের মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করা একেবারেই অনৈতিক। আমরা এই ঘটনার প্রতিবাদে আদালতের দ্বারস্থ হব।"
Read the full story in English