চলতি সপ্তাহেই ঘোষণা হতে চলেছে বঙ্গ বিজেপির পরবর্তী সভাপতির নাম। বিজেপি সূত্রের খবর, ৬, মুরলিধর সেন লেনে বেশ কিছু নাম ভেসে চললেও সভাপতি হিসাবে দিলীপ ঘোষের পাল্লাই ভারী। যদিও রবিবার নদিয়ায় দিলীপ ঘোষের বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তবে এরপরও নিজের বক্তব্য থেকে এক চুলও সরেননি দিলীপ ঘোষ।
টানা তিন বছর সভাপতি থাকার পর গত ২০১৮ ডিসেম্বরেই মেয়দ শেষ হয়েছিল দিলীপের। কিন্তু ১৯-এর লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে সভাপতি হিসাবে রেখে দেওয়া হয় সংঘ পরিবারের এই ঘরের ছেলেকে। সে সময় দিলীপের সভাপতিত্বের এক বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছিল। রাজ্য়জুড়ে চলছে পদ্ম পার্টির দলীয় নির্বাচন। ইতিমধ্যে মন্ডল ও জেলা সভাপতিদের নাম ঘোষণাও হয়ে গিয়েছে। এবার রাজ্য সভাপতির নাম ঘোষণা হওয়ার পালা।
আরও পড়ুন: ‘দিলীপকেই প্রথমে গুলি করে মারা উচিত’, হুঙ্কার অনুব্রতর
এদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের একদা 'সেকেন্ড ইন কমান্ড' মুকুল রায় বিজেপিতে যোগ দিলেও তাঁকে দলের কেন্দ্রীয় কর্মসিমিতির সদস্য থেকেই সন্তুষ্ট হতে হয়েছে। একাধিকবার তাঁর পদপ্রাপ্তি নিয়ে জল্পনা থাকলেও এখনও পর্যন্ত ওই একই পদে থাকতে হয়েছে 'চানক্য'কে। গেরুয়া গুঞ্জন, মুকুল দলে যোগ দেওয়ার পর বঙ্গ বিজেপির দিলীপ বিরোধী অংশের অনেকেই তৃণমূলের একদা সেনাপতির দিকেই ঝুঁকেছেন। উত্তরোত্তর ভিড় বেড়েছে প্রাক্তন রেলমন্ত্রীর ঘরে। কথাবার্তায় অনেক সময় স্পষ্ট হয়েছে দিলীপ-মুকুলের মতপার্থক্য। ২০১৮ সালের নভেম্বরে রথযাত্রার সময় কোচবিহারে রাজ্য সভাপতি ও কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকের পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে সাংবাদিক বৈঠকে পরিস্কার হয়ে গিয়েছিল সেই অন্তর্দলীয় বিভাজন রেখা। মুকুল রায় ও কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র রসায়নও বিজেপিতে বহুল চর্চিত। রাজ্য সভাপতির দৌড়ে দলের অভ্যন্তরে সে কথাও আলোচিত হয়েছে। তবে মনে করা হচ্ছে, বিষয়টি তেমন একটা কল্কে পাবে না।
আরও পড়ুন: দিলীপের নিন্দায় বাবুল, পাল্টা জবাব বিজেপি রাজ্য সভাপতির
একসময় সভাপতি হিসাবে গুঞ্জন ছড়িয়েছিল, বাঁকুড়ার সাংসদ ডাক্তার সুভাষ সরকারের নাম নিয়েও। সে ক্ষেত্রেও শেষমেশ তাঁকে সহসভাপতি হয়েই থাকতে হয়েছিল। শুধু বিজেপিতে নেতৃত্বই নয়, মাঝে মধ্যে আরএসএস ঘনিষ্ঠ অনেকেরই নামই ভেসে বেড়ায় সভাপতির দৌড়ে। এবারও তেমন কিছু নাম রয়েছে সেই তালিকায়। তবে শেষমেশ দিলীপ ঘোষই শেষ হাসি হাসতে পারেন বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। ইতিমধ্যে জেলাস্তরের সভাপতি নির্বাচনেরও পালা শেষ হয়েছে এবং এই সব সভাপতিরাও অধিকাংশ দিলীপ-ঘনিষ্ঠ বলে খবর।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এক বেছরের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছিল দিলীপবাবুর। এরপর তিনি বিধায়ক থেকে সাংসদ হয়েছেন। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে ১৮টি আসনে জয় পেয়েছে বিজেপি। একইসঙ্গে রাজ্যে বিজেপির সাংগঠনিক শক্তিও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিরোধিদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এ রাজ্যে সিএএ এবং এনআরসি-র সমর্থনে সভা, মিছিল করছে পদ্মশিবির। তবে বছরভর নানা মন্তব্য করে বিতর্কিত হয়েছেন দিলীপ ঘোষ। সম্প্রতি সমালোচিত হলেন দলের সাংসদের কাছেও। দিন কয়েক আগে বিধানসভার উপনির্বাচনে তাঁর নিজের ছেড়ে আসা কেন্দ্র সহ মোট তিন আসনেই পর্যুদস্ত হয়েছে বিজেপি। ফলে, এ বিষয়গুলি বিবেচনা করা হলে দিলীপের জন্য সুখবর নাও আসতে পারে। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে কার ওপর বঙ্গ বিজেপির দায়িত্ব বর্তায় তা জানা যাবে চলতি সপ্তাহে।