বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশন শেষ হওয়ার কথা ছিল ১৩ই ডিসেম্বর। কিন্তু, নজিরবিহীনভাবে তার আগেই অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতুবি ঘোষণা করা হল অধিবেশন।বিধানসভা বন্ধের জন্য রাজ্যপালকেই কাঠগড়ায় তুলেছে শাসক দল তৃণমূল। তাদের অভিযোগ, এসটি-এসসি সহ বেশ কয়েকটি বিলে আলোচনার জন্য রাজ্যপাল অনুমতি না দেওয়াতেই মুলতুবি করে দেওয়া হয়েছে বিধানসভার অধিবেশন। পাল্টা, রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের দাবি, তাঁকে নিয়ে 'নোংরা রাজনীতি' করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতির জন্য সরকারপক্ষের পরিকল্পনার অভাবকেই দায়ী করছে বিরোধী বাম ও কংগ্রেস।
নানা ইস্যুতে রাজ্যপাল-নবান্ন সংঘাত চরমে। তাতেই অন্য মাত্রা যোগ করেছে রাজ্যপালের বিলে সই না করার বিষয়টি। এসটি-এসসি সহ বেশ কয়েকটি বিলের উপর আলোচনার অনুমতি চেয়ে রাজ্যপালের কাছে তা পাঠানো হয় বিধানসভার তরফে। অভিযোগ, নির্দিষ্ট সময়ে তাতে সাক্ষর করেননি রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। ফলে বিধানসভায় আলোচনার জন্য কোনও বিষয় নেই। এই দাবি করে আগেই দু'দিন বিধানসভার অধিবেশন বন্ধ করে দেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরও রাজভবনেই আটকে রয়েছে বিলগুলি। মঙ্গলবার তাই শেষ করে দেওয়া হয় বিধানসভার শাতকালীন অধিবেশন। রাজ্যপালের এই আচরণে ক্ষুব্ধ রাজ্যের শাসক শিবির। সূত্রের খবর, এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীও ঘনিষ্টমহলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
আরও পড়ুন: ‘আমি সরকারের রবার স্ট্যাম্প নই’, বিস্ফোরক রাজ্যপাল ধনকড়
পরিষদীয় প্রতিমন্ত্রী তাপস রায় বলেন, 'বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিল রাজ্যপালের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে। রাজভবনে সেগুলি আটকে থাকায় বিধানসভার কার্য-উপদেষ্টা কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে সভা সিনে ডাই করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।'
রাজ্যপালের বিরুদ্ধে নজিরবিহীনভাবে বিধানসভাতেই 'গো-ব্যাক' স্লোগান তৃণমূল বিধায়কদের। মঙ্গলবার, বিধানসভার কক্ষের বাইরে প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন নিয়ে মিছিল করে আম্বেদকরের মূর্তির পাদদেশে বিক্ষোভ দেখান শাসক দলের তফসিলি জাতি-উপজাতিভুক্ত বিধায়করা। সেইসঙ্গেই রাজ্যপালের অপসারণের দাবিতে রাজ্যসভায় সরব হন তৃণমূল সাংসদরা।
আরও পড়ুন: ‘অনেকেই বিজেপির মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন’, নাম না করে রাজ্যপালকে তোপ মমতার
শাসক দলের নিশানায় পড়ে পাল্টা তোপ দেগেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ও। তাঁকে নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন রাজ্যপাল। বিলগুলির উপযুক্ত ব্যাখ্যা চেয়েও মেলেনি বলে দাবি তাঁর। রাজ্যপাল বলেন, 'আমার কাঁধে বন্দুক রেখে এসসি-এসটি নিয়ে রাজনীতি করবেন না। কেন্দ্রের একটি এসসি-এসটি আইনের সঙ্গে রাজ্যের বিলের তেমন তফাৎ নেই। তাও কেন রাজ্য এই আইন আনতে হচ্ছে? সেটাই জানতে চেয়েছি। কিন্তু কোনও উত্তর পাইনি। আমাকে কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। সব না জেনে কীভাবে সই করব? আমি অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু, কেউ আসেনি।'
অভিনব এই পরিস্থিতির জন্য সরকার পক্ষকেই দায়ী করে বিরোধিরা। বিধানসভায় কংগ্রেসের চিপ হুইপ মনোজ চক্রবর্তী বলেন, 'শাসক দল ও সরকার সঠিক পরিকল্পনা করতে পারেনি। এরা বিরোধী বিধায়কদের গুরুত্ব দেয় না। যার ফলে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিধানসভার অধিবেশন।'
Read the full story in English