Advertisment

Bhangar Update: অলীক চক্রবর্তীর পর কে?

অলীক পরবর্তী ভাঙড়ের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে, তা এখনও অনেকটাই নির্ধারিত হতে চলেছে ভাঙড়ে নিজেদের প্রকাশ্যে না নিয়ে আসা একটি রাজনৈতিক দলের উপরেই।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Alik chakrabarty at odisha hospital queue

ভুবনেশ্বর হাসপাতালের লাইনে অলীক চক্রবর্তী (ছবি-জমি, জীবিকা, বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির ফেসবুক পেজ থেকে)

তাপস দাশ

Advertisment

ভাঙড় আন্দোলনের মুখপাত্র হিসেবেই পরিচিত সিপিআই (এমএল) রেড স্টার নেতা অলীক চক্রবর্তী। তিনি ভুবনেশ্বরে ধরা পড়ার পর থেকে প্রশ্ন সামনে উঠে এসেছে, এরপর আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কী? স্থানীয় বাসিন্দারা জানেন, বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন অলীক। ভুবনেশ্বরে চিকিৎসা করাতে যাওয়া কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আগেও এলাকার বাইরে বেরিয়েছেন এই নকশালপন্থী নেতা, স্রেফ চিকিৎসার জন্যই। তাঁর রোগ ক্রমাগত জটিল আকার ধারণ করেছে। এমনকি কেউ কেউ এও মনে করছেন, পুলিশের হাতে ধরা পড়া তাঁর পক্ষে শাপে বরই হবে, এবার অন্তত নিয়মিত চিকিৎসার ব্যবস্থা হবে তাঁর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজনের বক্তব্য, অলীকের যা শারীরিক অবস্থা, তাতে ধরা না পড়লে হয়ত আত্মসমর্পণই করতে হত এই মাঝবয়সী নেতাকে।

অলীক চক্রবর্তী গ্রেফতারের সঙ্গে ভাঙড়ের পাওয়ারগ্রিড বিরোধী আন্দোলনে নেতৃস্থানীয় বলে যাঁরা পরিচিত, তাঁরা সকলেই ধরা পড়ে গেলেন। সিঙ্গুরের সময় থেকেই তৃতীয় শিবিরের আন্দোলনের পরিচিত মুখ অমিতাভ ভট্টাচার্য, দ্বিতীয় সারির নেতা বিশ্বজিৎ হাজরা, মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র রাতুলদের গ্রেফতার করা হয়েছে বেশ কিছুদিন আগেই। ভাঙড় আন্দোলনে বহিরাগত মুখ বলতে ছিলেন এঁরাই। অলীকও ছিলেন বহিরাগতই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাঙড়ে যে বহিরাগতরাই অশান্তি পাকাচ্ছে, সে কথা বারবার বলার চেষ্টা করেছেন। অলীক গ্রেফতারের খবর পাওয়ার পরই ভাঙড়ে রাস্তা অবরোধ শুরু হয়েছে, পরদিনই এলাকায় মহামিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে, এবং সোমবার কলকাতায়ও একটি মিছিলের আয়োজন করে ফেলা হয়েছে। কী ভাবে সম্ভব হল এত কিছু?

cpm leader shatarup ghosh in protest of alik arrest অলীক গ্রেফতারির প্রতিবাদে ভাঙড়ের মিছিলে বক্তব্য রাখছেন সিপিএম নেতা শতরূপ ঘোষ (ফোটো - ফিরোজ আহমেদ)

আরও পড়ুন, মৃত্যু হলেও পাওয়ারগ্রিড হতে দেব না, ভাঙড়ে জয়ের পর বললেন নির্দল প্রার্থী

ভাঙড়ে ঠিক কী ঘটছিল?

সামান্য একটু পিছিয়ে যাওয়া যাক। পঞ্চায়েত ভোটে যখন রাজ্য জুড়ে হিংসার ছায়া, যখন বিরোধীরা কোথাওই প্রায় মনোনয়ন জমা দিতে পারছেন না বলে অভিযোগ উঠছে, সে সময়েই অত্যন্ত সুকৌশলে হোয়াটস্অ্যাপে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন ভাঙড় আন্দোলনের ৯ জন। কেবলমাত্র স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন থেকে উঠে আসা কর্মীদের পক্ষে এতটা ভেবে ওঠা সম্ভব কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল তখন থেকেই। এই ৯ জন প্রার্থীর মনোনয়ন নিয়ে মামলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন আদালতের রায় মেনে তাঁদের মনোনয়ন স্বীকার করেছে। অর্থাৎ এরকমভাবে মনোনয়ন পাঠানো যে আইনি মতে গৃহীত হবে সে নিয়েও সম্যক সচেতনতা ছিল। এরপর প্রচার ও ভোট। ভোটের আগে ভাঙড়ের আন্দোলনকারীদের তরফ থেকে যে প্রার্থীদের দাঁড় করানো হয়েছিল, তার সমর্থনে মিছিলে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন এক আন্দোলনকর্মী। ভোটের আগে এ হেন হিংসাত্মক ঘটনা আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের দমিয়ে দেয়নি বলেই দেখা গেছে। কলকাতায় এ নিয়ে মিছিল হয়েছে, যে মিছিলে হাঁটতে দেখা গেছে পরিচিত নেতাদের। এবং শাসকদলের ভোট মেশিনারি থাকা সত্ত্বেও ৯ জনের মধ্যে ৫ জন প্রার্থী ভোটে জিতেও গেলেন।

cpm leader tanmay bhattacharya in protest rally at bhangar against arrest of naxalite leader alik ভাঙড়ে প্রতিবাদ সভায় সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য (ফোটো - ফিরোজ আহমেদ)

তৃণমূল কংগ্রেসের আরাবুল ইসলামের মত দুঁদে নেতার ঘরের মাঠে চোখে চোখ রেখে লড়াই করার জন্য যে কেবল স্পিরিট যথেষ্ট নয়, সে কথা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি অভিজ্ঞ মানুষ জানেন। ভাঙড়ের পাওয়ারগ্রিড বিরোধী আন্দোলন ক্ষণস্থায়ী আবেগভিত্তিক যে নয়, সে কথাও এখন দিনের আলোর মতই স্পষ্ট। দুয়ে দুয়ে চারের মতই একথাও পরিষ্কার হয়ে গেছে, অভিজ্ঞ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একটি পরিকল্পনা এ আন্দোলনের পিছনে রয়েছে। যে অভিজ্ঞতা ও দূরদৃষ্টি সংসদীয় রাজনীতির কৌশল ও কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন। এবং দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার রণনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।

অলীক চক্রবর্তীর সিপিআই (এমএল) রেড স্টার যে তেমন সংগঠন নয়, এ কথা তাঁদের অন্ধ সমর্থকেরাও স্বীকার করতে বাধ্য। বিধানসভা ভোটে কোন কোন জায়গায় তাঁদের প্রাপ্ত ভোট নোটার (NOTA) থেকেও কম। তাহলে?

আরও পড়ুন, Bhangar Update: অলীকের গ্রেফতারের প্রতিবাদে ভাঙড়ে রাস্তা অবরোধ 

তাহলে এবার কী?

অলীক চক্রবর্তী নন, সিপিআই (এমএল) রেড স্টার নয়, জমি, জীবিকা, বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা কমিটি নয়, তাহলে কে? অলীক পরবর্তী ভাঙড়ের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে, তা এখনও অনেকটাই নির্ধারিত হতে চলেছে ভাঙড়ে নিজেদের প্রকাশ্যে না নিয়ে আসা একটি রাজনৈতিক দলের উপরেই। আপাত দৃষ্টিতে ক্ষয়প্রাপ্ত এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ এই রাজনৈতিক দলের কোন কোন নেতার সঙ্গে অলীকের সম্পর্ক যথেষ্ট ভাল বলেই জানা যায়। এমনকি কান পাতলে শোনা যাবে, সেরকম এক নেতার সূত্রেই চিকিৎসার বন্দোবস্ত হচ্ছিল অলীকের। এবং ভাঙড়ে সে নেতাকেই হারিয়ে যাওয়া জমি পুনরুদ্ধার করে দিচ্ছিলেন অলীক। অলীকের গ্রেফতারির খবর মিলতেই কিছুটা আশ্চর্যজনকভাবে তড়িঘড়ি সে দলের তরফ থেকে অলীকের মুক্তির দাবি তোলার বিবৃতি আসলে তত আশ্চর্যের নয়, বলছেন ভাঙড়ের পোড় খাওয়া মানুষ।

Bhangar cpiml red star naxal
Advertisment