২০০৬ বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল ক্ষমতা নিয়ে বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় এসেছিল। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে ২১৩ জন বিধায়ককে নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতার মসনদে বসেছে তৃণমূল কংগ্রেসও। ২০২২-এ পুরসভা নির্বাচনে ১০৮টির মধ্যে ১০২টি পুরসভা দখল করেছে ঘাসফুল শিবির। তার আগে নির্বাচন হওয়া সমস্ত কর্পোরেশন দখল করেছে তৃণমূল। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, পুরভোটে যথেচ্ছ ভোট লুট, রিগিং হয়েছে। এরইমধ্যে রাজ্যে দুই কাউন্সিলর খুন, আনিস হত্যাকান্ড, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা, সর্বোপরি বীরভূমের বগটুইতে নারকীয় গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় উত্তাল বাংলার রাজনীতি। এদিকে আগামি ১২ এপ্রিল আসানসোল লোকসভা ও বালিগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচন।
সাধারণত দেখা গিয়েছে, উপনির্বাচনে শাসকদলের পাল্লাই ভারী থাকে। বিধানসভা ভোটের আগেও বাংলা সেই ফল দেখেছিল করিমপুর, খড়্গপুর ও কালিয়াগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনের ক্ষেত্রে। বিধানসভা ভোটে আশাতীত সাফল্য, কর্পোরেশন ও পুরসভায় বেনজির ফলাফল। এককথায় তৃণমূল কংগ্রেসের সাফল্যের গ্রাফ একেবারেই উর্দ্ধমুখী। তবু ভরা সময়েও বড় পরীক্ষার সামনে তৃণমূল কংগ্রেস। সাম্প্রতিক রাজ্যের কিছু ঘটনা এই দুই উপনির্বাচনে কোনও প্রভাব ফেলবে কীনা সেটাই এখন দেখার।
পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের অধিকাংশ এলাকাই খনি-শিল্পাঞ্চল। ইসিএলের পাশাপাশি বেআইনি কয়লার কারবারেরও এখানকার অর্থনীতিতে বড় প্রভাব রয়েছে। ভোটারদের মধ্যে প্রায় ৩৬ শতাংশ অবাঙালি। একইসঙ্গে উর্দুভাষীসহ প্রায় ৩০ শতাংশের ওপর মুসলিম ভোটার রয়েছে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে। মিশ্র জাতি ও ভাষাভাষির এলাকা আসানসোল। এই কেন্দ্র থেকেই ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ব্যাপক মার্জিন বাড়িয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়। বাবুল দল পাল্টে এবার বালিগঞ্জ কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী। আসানসোলে ২০১৪ সালের তুলনায় বিজেপির ভোট বেড়েছিল প্রায় ১৫ শতাংশ। অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট বৃদ্ধি পেয়েছিল প্রায় ৫ শতাংশ। সিপিএম প্রার্থী ২০১৯-এ মোট ভোট পেয়েছিল মাত্র ৭ শতাংশ। এবার তৃণমূলের প্রার্থী পরশি রাজ্যের বিহারীবাবু শত্রুঘ্ন সিনহা, অন্যদিকে বিজেপির প্রার্থী আসানসোলের মেয়ে অগ্নিমিত্রা পাল। সিপিএম প্রার্থী পার্থ মুখোপাধ্যায়।
২০০৬-এ ২৩৫টি বিধানসভা আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের গণআন্দোলনে জেরবার হয়ে গিয়েছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন বামসরকার। এবার ২০২১ বিধানসভা নির্বাচন ও পুরসভায় ব্যাপক সাফল্যের পরও হাওড়ার আমতার আনিস হত্যাকান্ড, ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু খুন, বীরভূমের বগটুইতে খুনের পর জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় তোলপাড় বাংলা। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে রাজ্য-রাজনীতি উত্তাল। তার মধ্যে আবার পুরুলিয়া ও বীরভূম, দুই জেলা পশ্চিম বর্ধমান লাগোয়া। এদিকে সংখ্যালঘুদের একাংশ সরাসরি ক্ষোভ ব্যক্ত করেছে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। ইভিএমে সেই প্রভাব কতটা পড়বে? নাকি ক্ষোভপ্রকাশ করলেও তৃণমূলেই আস্থা থাকছে সংখ্যালঘুদের? অভিজ্ঞ মহলের মতে, সংখ্যালঘুদের অবস্থানও এই উপনির্বাচনের সব থেকে বড় বিষয়। তবে ভোটের ওয়ান ডে-র ওপরই অনেক কিছু নির্ভর করে। তৃণমূল ও বিজেপি দুপক্ষই আসানসোল জয়ের ব্যাপারে ১০০ শাতংশ নিশ্চিত বলে দাবি করেছে। পুরনির্বাচনের পর আসানসোল লোকসভা আসনেও সিপিএমের ভোট শতাংশ বাড়ে কিনা সেটাও দেখার আছে।