তৃণমূল কংগ্রেস এবার প্রকৃত অর্থে সর্বভারতীয় হওয়ার চেষ্টা করছে। রাজ্যে রাজ্যে সংগঠন বিস্তার করতে চাইছে দল। একইসঙ্গে দলের ভাবমূর্তি বদলের মরিয়া কৌশল নিয়ে চলেছে শীর্ষ নেতৃত্ব। আগের পঞ্চায়েত ও পুরনির্বাচনে ভোট লুঠ নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগ ছিল, তৃণমূলের সন্ত্রাসের জন্য বিরোধীরা পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী পর্যন্ত দিতে পারেনি। রাজনৈতিক মহলের মতে, এবার সেই ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
কিছু দিন ধরেই পরিবেশ তৈরির কৌশল চলছিল। দলনেত্রী, দলের বিধায়ক ঘরে-বাইরে বলছিলেন নিজের ভোট যেন নিজে দিতে পারেন ভোটাররা। কোনও ভাবেই যেন বাধা না দেওয়া হয়। এদিন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা পুরসভা নিয়ে বৈঠকে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন, ভোটে যেন বাধা না দেওয়া হয়। কড়া শাস্তি দেবে দল। স্বাভাবিক ভাবেই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে, তাহলে কী সত্যি আগে বাধা দেওয়ার কথা তৃণমূল স্বীকার করে নিল? সেক্ষেত্রে কি কেউ দলীয় শাস্তি পেয়েছে?
এরাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর হয়েছিল ২০১৯ লোকসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনে বিরোধীরা পেয়েছিল ২০টি আসন। বিজেপি ১৮ ও কংগ্রেস ২। তৃণমূলের আসন কমে হয়েছিল ২২। রাজনৈতিক মহলের মতে, ঠিক এক বছর আগে ২০১৮-তে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি রাজ্যের লক্ষ লক্ষ ভোটার। ভোট দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। কোনও কোনও ক্ষেত্রে সেই ক্ষোভের আঁচ গিয়ে পড়েছিল লোকসভা নির্বাচনে। পঞ্চায়েত ও পুরসভা নির্বাচনে অনেক ক্ষেত্রেই ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে একাধিকবার অভিযোগ উঠেছিল। এবার ভাবমূর্তি স্বচ্ছ করতে ময়দানে নেমে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
আরও পড়ুন- ‘ভোটে বাধায় বহিষ্কার’, কর্মীদের হুঁশিয়ারি অভিষেকের
ত্রিপুরা পুরনির্বাচনকে পাখির চোখ করে লড়াইতে নেমেছিল ঘাসফুল শিবির। এরাজ্যের একাধিক শীর্ষ তৃণমূল নেতা ছুটে গিয়েছেন পরশি রাজ্যে। এমনকী কেউ কেউ সেখানে ঘাঁটি গেড়ে পড়েছিলেন। কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপি থেকে অনেকেই ওই রাজ্যে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তবে পুরনির্বাচনের ফল ঘোষণার পর দেখা গেল সারা রাজ্যে একটি মাত্র আসনে জয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসকে। দলের সাধারণ সম্পাদক তৃণমূলের দায়িত্ব নিয়ে ঘোষণা করেছিলেন, তাঁরা লড়াইয়ের জন্য নয় জয়ের জন্য ভিন রাজ্যে সংগঠন গড়তে যাচ্ছেন। ত্রিপুরা পুরনির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন থেকে ফল ঘোষণা পর্যন্ত বিজেপির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ করে এসেছে। একই অভিযোগে এরাজ্যে অভিযুক্ত তৃণমূল কংগ্রেস, দাবি বিরোধীদের। অভিজ্ঞ মহলের মতে, সেই অভিযোগ থেকে মুক্ত হতে চাইছে ঘাসফুল শিবির।
ত্রিপুরা, গোয়া, মেঘালয়, হরিয়ানাসহ একের পর এক রাজ্যে সংগঠন বিস্তারে দৌত্য শুরু করেছে তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলকে প্রকৃতই সর্বভারতীয় করতে ভিন রাজ্যে ছুটে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু এরাজ্যের পুর ও পঞ্চায়েতের ভোট লুঠ ও অশান্তির অভিযোগ তুলে বিজেপি জাতীয় স্তরে সোচ্চার হয়েছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব এবার পুর নির্বাচনকে সামনে রেখে ইমেজ বিল্ডিং করতে চাইছে। ভিন রাজ্যে সংগঠন বিস্তার ও ২০২৪ নির্বাচনে সর্বভারতীয় স্তরে সেই ভাবমূর্তিকে কাজে লাগাতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস।
এরাজ্য়ে প্রথম দফায় কলকাতা পুরনির্বাচন ১৯ ডিসেম্বর। রাজ্যের অন্যত্র ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি আর মহানগরের ভোট পরিবেশের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। যদিও কলকাতা পুর নির্বাচনে বাম আমলেও ভোটের দিন অস্ত্রের ঝলকানি দেখা গিয়েছে। ভোটের দিন আর ওয়ান ডে ম্যাচের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই বলেই মনে করে অভিজ্ঞ মহল। রাজনৈতিক মহলের মতে, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি তৈরির জন্য দল তো নির্দেশ দিল কিন্তু তার সঙ্গে বাস্তবের কতটা মিল থাকে সেটাই এখন দেখার।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন