ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর বিজেপির প্রশস্তি গাইলেন, বর্তমানে ভারতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিলেন। যদিও তাঁর মন্তব্য অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বিজেপি ও কংগ্রেস। তৃণমূল নেতৃত্ব পিকের ব্যক্তিগত মতামত বলে দায় এড়িয়েছে। এদিকে তৃণমূলের ভোটকুশলীর মন্তব্যের দিন গোয়া সফরে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিন দিনের মাথায় ত্রিপুরা যাচ্ছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারাণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজনীতিতে ক্রোণোলজি থাকাটাই দস্তুর। চলার পথ প্রশস্ত করতে নানা কৌশল অবলম্বন করতেই হয়। তবে দলের বিস্তারের পথে তৃণমূলের মূল শত্রু কে? এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।
সর্বভারতীয় স্তরে দলের বিস্তারের কথা আগেই ঘোষণা করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লি সফরকালে কংগ্রেসনেত্রী সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তারপর থেকে নিরন্তর কংগ্রেস থেকে তৃণমূল যোগ পর্ব চলছে, নতুবা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লাগাতার তোপ দেগে যাচ্ছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, রাজ্যের উপনির্বাচনেও কংগ্রেসকে আক্রমণ শানিয়ে গিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং তৃণমূল সুপ্রিমোও সুযোগ পেলে কংগ্রেসের সমালোচনা করতে ছাড়ছেন না। অভিজ্ঞ মহলের মতে, তৃণমূল কংগ্রেসের মূল শত্রু কে বিজেপি না কংগ্রেস? তা নিয়ে বিভ্রান্ত রাজনৈতিক মহল। পশ্চিমবঙ্গে একক শক্তিতেই লড়াই করেছে তৃণমূল। কিন্তু ভিন রাজ্য়ে শক্তি বৃদ্ধি করতে শুধু যে বিজেপি-বিরোধিতা করলে হবে না, ভিন্ন রণকৌশল নিচ্ছে তৃণমূল তা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে।
এরাজ্যে ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের সঙ্গে জোট করে কংগ্রেস বিরোধী দলের মর্যাদা পেয়েছিল। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস শূন্য। বিজেপি বিরোধী দল। ত্রিপুরা, গোয়ায় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লাগাতার গলা ফাটাচ্ছে তৃণমূল নেতৃত্ব। বিজেপির বিরুদ্ধে বৃহত্তর জোটের যে কথা বলা হচ্ছে কার্যত তা সোনার পাথরবাটি তত্বকেই মনে করিয়ে দিচ্ছে। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে কংগ্রেস ছাড়া তৃণমূল কংগ্রেস, দক্ষিণের ডিএমকে বা এআইডিএমকে, উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদীপার্টি বা বহুজন সমাজ পার্টি, যে কেউ লোকসভায় প্রধান বিরোধী দলের সম্মান পেতে পারে। সংশ্লিষ্ট রাজ্য়ে লোকসভার আসন অনুযায়ী সেই সুযোগ আছে। কংগ্রেসের যদি আসন সংখ্যা কমে যায় তা হলে এই দলগুলোর পোয়া বারো। তৃণমূল নিজের রাজ্যে ৪২-এ সর্বাধিক আসন টার্গেট করে ভিন রাজ্য থেকে কয়েকটি আসনে জয় পেলে ঘাসফুলের দেশের প্রধান বিরোধী দল হওয়া খুব কঠিন হবে না বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এক্ষেত্রে কংগ্রেসের ফল খারাপ হওয়া খুব জরুরি।
তৃণমূল সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করতে ছোট রাজ্যগুলিকে প্রথমে টার্গেট করেছে। যে দুটি রাজ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, ত্রিপুরায় ২টি ও গোয়ায় ২টি লোকসভার আসন। গোয়ায় মমতাকে কালো পতাকা, ত্রিপুরায় তৃণমূল নেতৃত্বকে মারধর-গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। সব অভিযোগের তিরেই বিজেপি। রাজনৈতিক মহলের মতে, সাধারণত এইসব ঘটনায় ক্ষতির থেকে প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক ফায়দাই বেশি হয়। এই মুহূর্তে বিজেপির পর লোকসভায় সর্বাধিক আসন সংখ্যা রয়েছে কংগ্রেস ৫২, ডিএমকে ২৪, ওয়াইএসআর কংগ্রেস ও তৃণমূল কমংগ্রেসের ২২টি করে। ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস পেয়ছিল ৪৪টি আসন, এআইএডিমকে ৩৭ ও তৃণমূল কংগ্রেস ৩৪টি। দেখা যাচ্ছে ২০১৪ ও ২০১৯ দুই নির্বাচনেই তৃণমূল কংগ্রেস আসন সংখ্যার বিচারে বিরোধীদের মধ্যে তৃতীয় স্থানে ছিল।
রাজনৈতিক মহলের ধারনা, এবার তৃতীয় স্থান থেকে লোকসভায় প্রধান বিরোধী দল হতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস। সেই লক্ষ্যেই ভিন রাজ্যে বিস্তারের চেষ্টার কসুর করছে না। এরাজ্যে রয়েছে মোট ৪২টি আসন। সেখান থেকে সর্বাধিক জয়ের লক্ষ্য তো থাকবেই। অন্য রাজ্যে থেকে একা বা জোটে লড়াই করে লোকসভার সিট বৃদ্ধি করলেই কেল্লা ফতে। কংগ্রেসের আসন কমলেই আর এক কংগ্রেস, তৃণমূল সেই জায়গায় পৌছে যেতে পারে, মনে করছে অভিজ্ঞ মহল।
আরও পড়ুন- ‘সাইনবোর্ড-মুখ্যমন্ত্রী হতে আসিনি, আস্থা রাখলে আপসহীন লড়াই করব’, গোয়ায় প্রতিশ্রুতি মমতার
ইন্ডিয়ানএক্সপ্রেসবাংলাএখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন