পঞ্চায়েত বা বিধানসভা ভোট এগিয়ে আসবে বলে তেমন কোনও ইঙ্গিত দেয়নি দুই নির্বাচন কমিশন। কিন্তু আগাম ভোটের ইঙ্গিত দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কেন আগাম ভোট-পলিটিক্স, তা নিয়ে কৌতুহল বাড়ছে রাজনৈতিক মহলে।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বিগত কয়েক দিন ধরেই দাবি করে আসছেন, ২০২৪-এ লোকসভা ও বিধানসভার ভোট একসঙ্গে হবে। একবার বলেই থামেননি নন্দীগ্রামের বিধায়ক। একনাগারে এই তত্ব আউরে যাচ্ছেন তিনি। এরই পাশাপাশি সম্প্রতি মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ঝাড়গ্রামের কর্মীসভায় বর্ষার আগে পঞ্চায়েতের কাজ শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। বর্ষার শেষেই নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়েছে তৃণমূলনেত্রী। প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কী আগামী ২০২৩-এর পঞ্চায়েত ভোট এগিয়ে আসতে পারে।
২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে ক্ষয়িষ্ণু শক্তিতে পরিনত হতে শুরু করে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বামেদের একটি আসনও জোটেনি। কংগ্রেস ২টি আসনে জয় পেয়ে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সামর্থ হয়। কিন্তু ১৮টি সাংসদ পেয়ে বিজেপি রাজ্য়ের বিরোধী শক্তিতে পরিনত হয়। পরবর্তীতে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাংলার রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চর্চা হতে শুরু করে ভোট এগিয়ে আসতে পারে। বিধানসভা ভোট কবে? তখন এই প্রশ্নের জবাবে কৌতুহল জিইয়ে রাখত রাজনৈতিক নেতৃত্ব। যদিও শেষমেশ দেখা গেল একেবারে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হয়েছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, ঝিমিয়ে পড়া দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা রাখতেই এই ধরনের আগাম মন্তব্য করা হয়।
ঝাড়গ্রামের সভায় মমতা বলেছেন, 'বর্ষাকাল এলে আগামী তিন মাস কাজ হবে না। ফলে কাজটা পরে থাকবে। তারপর পঞ্চায়েত নির্বাচন কবে ঘোষণা করে দেব কাজটা করার সুযোগ পাবেন না। সুতরাং কাজ করুন চটপট।' মুখ্যয়মন্ত্রীর এই বক্তব্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন এগিয়ে আসার জল্পনা ছড়িয়েছে। তবে রাজনৈতিক মহলের ধারনা, পঞ্চায়েতের কাজে যাতে ঢিলেমি না আসে তার জন্যই এমন ঘোষণা করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে দলীয় কর্মীদের প্রস্তুত রাখাও অন্যতম উদ্দেশ্য।
বিগত ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের আসন সংখ্যা কমে গিয়েছিল এরাজ্যে। তার আগের বছর পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছিল। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা ছিল, পঞ্চায়েত ভোটের প্রভাব পড়েছিল লোকসভা নির্বাচনে। কারণ অভিযোগ ছিল, রাজ্যের পঞ্চায়েতে হাজার হাজার আসনে ভোটই করতে দেয়নি তৃণমূল কংগ্রেস। নিয়মানুসারে ২০২৩-এ পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার পরের বছরই লোকসভা নির্বাচন। পুরনো স্মৃতি ফের টাটকা হচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, সেক্ষেত্রে চলতি বছরে নির্বাচন হলে পরিস্থিত সামাল দিতে অনেকটা বেশি সময় পাবে শাসকদল।
অন্যদিকে, শুভেন্দু অধিকারী কোনও কারণ না দর্শিয়েও লোকসভা ও বিধানসভার ভোট একসঙ্গে হবে বলে কর্মীদের বার্তা দিচ্ছেন। বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে বিজেপি থেকে একের পর এক নেতা তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরে আসছেন। লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি সংগঠন ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, দলীয় কর্মীদের ধরে রাখাই এখন বিজেপির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। লোকসভা ও বিধানসভার ভোট একসঙ্গে হওয়ার কোনও গ্যারান্টি নেই। তবু শুভেন্দু একই কথা বলে চলেছে দলের কর্মীদের চাঙ্গা রাখতে, এমনই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
আদৌ পঞ্চায়েত বা বিধানসভা ভোট অসময়ে হবে কীনা তা নিয়ে নির্বাচন কমিশন এখনও কোনও ঘোষণা করেনি বা নিদেনপক্ষে কোনও ইঙ্গিতও দেয়নি। এদিকে মমতা ও শুভেন্দু ভোটের হাওয়াতেই দলীয় কর্মীদের মনোবল বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।