গণি খানের শক্ত ঘাঁটি মালদায় জমি শক্ত করতে ব্যর্থ তৃণমূল। যা নিয়ে মালদায় দাঁড়িয়েই জনসভায় নিজের হতাশার কথা তুলে ধরলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। জেলাবাসীর উদ্দেশ্যে তাঁর প্রশ্ন, 'মালদায় কি হাত খালিই থাকবে আমাদের?'
রায়গঞ্জের সভার পর বুধবার মালদার ইংরেজবাজারে সভা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই নিজের দুঃখের কথা জানান তিনি। বলেন, 'মালদায় গত ৩০ বছর ধরে আসছি। কিন্তু আমার খুব দুঃখ হচ্ছে। যখন আসি তখন জনসভা, রাস্তার দুধারে মানুষের মুখগুলো দেখে ভাবি মানুষ আমাকে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু ভোটের ফলে আমরা সবসময় হেরে যাই। যদিও মুর্শিদাবাদে কয়েকটি আসন পেয়েছি, কিন্তু মালদায় তৃণমূলের কোনও আসন নেই। আগেরবার কৃষ্ণেন্দু, সাবিত্রী হেরে গিয়েছেন। মালদায় কি হাত খালিই থাকবে আমাদের?'
এই মন্তব্যের রেশ ধরেই পরে তৃণমূল নেত্রী বলেন, 'এবার কিন্তু আমি শূন্য হাতে ফিরে যেতে আসিনি।' একই সঙ্গে মালদাবাসীর মন জয়ে রাজ্য সরকারের নানা উন্নয়ন প্রকল্পের খতিয়ান তুলে ধরেন মমতা। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মালদায় বিজেপি ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি করে মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করেছে বলেও সতর্ক করে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: “এরা কি জগন্নাথ দেবের চেয়েও বড়?” বিজেপির পরিবর্তন রথযাত্রাকে আক্রমণ মমতার
গত লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে ভরাডুবি হয়েছিল তৃণমূলের। একটি আসনেও জয় পায়নি জোড়া-ফুল প্রার্থীরা। মালদা উত্তর ও দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্র জয় পায় যথাক্রমে বিজেপি ও কংগ্রেস। দল পাল্টেও তৃণমূলে এসেও জয়ের মুখ দেখেননি গণি খানের ভাগ্নি মৌসম নুর। পরে তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠান মমতা। ১৯-এর লোকসভায় মুর্শিদাবাদে মোট তিনটির মধ্যে ২টিতে জয় পায় তৃণমূল। ১৬ সালের বিধানসভায় মুর্শিদাবাদের মোট ২২ আসেনর মধ্যে ৪টি তৃণমূলের দখলে ছিল।
অন্যদিকে ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে রাজ্যজুড়ে রমরমা ছিল তৃণমূলের। ২১১ আসনে জয় হাসিল করেন ঘাস-ফুলের প্রার্থীরা। কিন্তু উল্টো ছবি দেখা যায় মালদায়। জেলার মোট ১২ আসনের মধ্যে একটিতেও জয়ের মুখ দেখেনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যেয়র দল। ১২ আসনের মধ্যে ৮টি পায় কংগ্রেস, ২টি বামফ্রন্ট ও ১টি করে আসন জেতেন বিজেপি ও নির্দল প্রার্থী। পরে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা জেলার ডাকসাইটে তৃণমূল নেতা কৃষ্ণেন্দুনারাযণ চৌধুরীকে হারিয়ে জয় পাওয়া নির্দল প্রার্থী নীহাররঞ্জন ঘোষ যোগ দেন তৃণমলে।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, 'ভোট এলেই অন্য অঙ্ক দেখি। বিজেপি-কংগ্রেস ও সিপিএম এক হয়ে যায়। তৃণমূল কিছুই পায় না। নীহার টিমটিম করে জ্বলছে। কিন্তু ও (নীহাররঞ্জন ঘোষ) তো নির্দল হয়ে জিতেছিল।পরে তৃণমলে এসেছেন। দেখবেন এবার যেন মালদায় তৃণমূলের ভাল ফলাফল হয়।' বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট ভাগাভাগি না করারও আর্জি জানান তিনি।
মালদায় ভোটে জিততে তৃণমূল সুপ্রিমোর এই ব্যাকুলতাকে অবশ্য কটাক্ষ করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর কথায়, '৩০ বছর যাচ্ছেন অথচ বৌনি হল না! প্রতারণা করলে এমনই হয়। লোকসভায় তৃণমূল উত্তরবাংলায় একটাও আসন পাননি। বিধানসভাতেও একই পরিণতি হবে। ওনার কথায় স্পষ্টভাবে হতাশা প্রকাশ পাচ্ছে।'
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন