লোকসভা সাংসদ তথা অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম)-এর প্রধান আসাউদ্দিন ওয়াইসিকে জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা দিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। একদিন আগেই মীরাট থেকে দিল্লি ফেরার সময় পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে ওয়াইসির গাড়ি গুলিবিদ্ধ হয়। তারপরই জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ১০ ফেব্রুয়ারি শুরু উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচন। সাত দফার এই নির্বাচনে এবার ১০০ আসনে প্রার্থী দিয়েছে ওয়াইসির দল।
শুধু উত্তরপ্রদেশই না। গোটা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ওয়াইসির দলের ভোটব্যাংক আছে। এমন এক নেতার গাড়িতে গুলি হামলায় স্বভাবতই উত্তরপ্রদেশ-সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে প্রভাব পড়তে পারে। ওয়াইসির ওপর হামলার ঘটনায় ইতিমধ্যেই দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। ধৃতদের থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারও হয়েছে।
সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রার্থী এবং রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর বরাবরই জোর দেয় নির্বাচন কমিশন। সেই কথা মাথায় রেখেই ওয়াইসির নিরাপত্তা জেড ক্যাটাগরির করা হল। তাঁর নিরাপত্তার বলয়ে থাকবেন সিআরপিএফ জওয়ানরা। বাড়িতেও মোতায়েন থাকবেন সশস্ত্র জওয়ানরা। তেমনই ওয়াইসি কোথাও গেলে, তাঁকে ঘিরে থাকবেন ন্যূনতম ছয় থেকে আট জন সিআরপিএফ কমান্ডো।
এই ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, 'ওয়াইসির কনভয়ে গুলি চালানোর ঘটনার পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ বা আইবির রিপোর্টেও ওয়াইসির প্রাণহানির আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। সেসব মাথায় রেখেই নিরাপত্তা বাড়ানো হল। জেড প্লাসের পর জেড ক্যাটাগরি, ভিআইপিদের দেওয়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা। সেটাই তাঁকে দেওয়া হল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশমতো যত দ্রুত সম্ভব সিআরপিএফ জওয়ানরা ওয়াইসির নিরাপত্তার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেবেন।'
জাতীয় রাজনীতিতে বরাবরই বিজেপি-বিরোধী পরিচিত মুখ আসাউদ্দিন ওয়াইসি। বিজেপি সংখ্যালঘু বিরোধী। এই অভিযোগে তিনি বারবার সরব হয়েছেন। সংসদের অভ্যন্তর এবং বাইরে, উভয় জায়গাতেই ওয়াইসির এই বিজেপি বিরোধিতা তাঁকে কট্টর মুসলিম নেতা হিসেবে সর্বভারতীয় পরিচিতি দিয়েছে। সেই পরিচিতি যত বেড়েছে, ততই কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের চক্ষুঃশূল হয়েছেন আসাউদ্দিন।
গত সেপ্টেম্বরে, দিল্লির অশোকা রোডে কড়া নিরাপত্তা বলয়ে থাকা ওয়াইসির বাড়ি ভাঙচুর করেছে হিন্দু সেনা। হামলাকারীরা ওয়াইসির নেমপ্লেট ভেঙে দিয়েছিল। দরজা এবং জানালার ক্ষতি করেছিল। এআইএমআইএম সাংসদকে 'জিহাদি' বলেও স্লোগান দিয়েছিল। ঘটনায় পাঁচ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছিল দিল্লি পুলিশ।
আরও পড়ুন- ভোটের আগে উত্তরপ্রদেশে সপার জোটে ভাঙন, ১৮ আসনেই প্রার্থী দিচ্ছে আপনা দল (কে)
ওয়াইসি জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবারের হামলায় তাঁর গাড়ির চাকা ফুটো হয়ে গিয়েছে। এতে তাঁর গাড়ি রীতিমতো ঘুরে গিয়ে বড় দুর্ঘটনার মুখে পড়ার অবস্থায় চলে যায়। এরপরই তিনি বিষয়টি নিয়ে লোকসভার স্পিকার এবং নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লিখে জানান। তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, ওয়াইসির গাড়ি লক্ষ্য করে মোট চারটি গুলি ছোড়া হয়েছিল। বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ হাপুর জেলায় পিখুয়ার কাছে এক টোল প্লাজায় ঘটনাটি ঘটেছে।
এই হামলার ঘটনায় গৌতম বুদ্ধ নগরের বদলপুরের বাসিন্দা শচীন শর্মাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতের থেকে লাইসেন্স বিহীন একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। একটা সাদা অলটো গাড়িও পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই হামলায় শচীন শর্মার সঙ্গে শুভম বলে এক যুবকও জড়িত ছিল। ঘটনার পর থেকে সে পালিয়ে যায়। পরে শচীন শর্মাকে জেরায় শুভমের নাম উঠে আসে। বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় ওই যুবককে। কী কারণে এই হামলা, জেরায় পুলিশকে তার কারণ জানিয়েছে শচীন শর্মা। তার বক্তব্য, সংখ্যালঘুদের হয়ে ওয়াইসির বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সে গুলি চালিয়েছে। এর মধ্যে অন্য কোনও ষড়যন্ত্র নেই।
Read story in English