২৪ ঘন্টা পরেই এএফসি কাপের দ্বিতীয় ম্যাচে খেলতে নামছে এটিকে মোহনবাগান।প্রতিপক্ষ বসুন্ধরা এফসি। প্ৰথম ম্যাচেই আইলিগ জয়ী গোকুলামের কাছে হেরে বেশ বিপাকে ফেরান্দো ব্রিগেড। বসুন্ধরা আবার এএফসি অভিযান শুরু করেছে মাজিয়াকে হারিয়ে।
গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে খেলতে নামার আগে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলায় একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন বসুন্ধরার কিংসের চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান।
১) বসুন্ধরা বনাম এটিকে মোহনবাগান ম্যাচ ঘিরে উত্তেজনা তুঙ্গে। ম্যাচ নিয়ে আপনার মতামত কী? বসুন্ধরা কি চূড়ান্ত ফর্মের এটিকে মোহনবাগানকে হারাতে পারবে?
ইমরুল হাসান: দারুণ একটি ম্যাচ হবে বলে আশা করছি আমরা। মোহনবাগানের বিরুদ্ধে গতবার আমরা এগিয়ে থেকেও ড্র করেছিলাম। এবার আমরা জয়ের বিষয়ে আশাবাদী। আমরা সেভাবেই দল সাজিয়েছি। আমাদের দেশি ও বিদেশি ফুটবলাররা সবাই দারুন ফর্মে রয়েছে। যদিও খেলা হবে মোহনবাগানের ঘরের মাঠে, তবুও আমরা জয় ছিনিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর।
২) বসুন্ধরা ধারে ভারে এটিকে মোহনবাগানের থেকে কোথায় এগিয়ে, কোথায় পিছিয়ে। আপনার মূল্যায়ণ কী?
ইমরুল হাসান: আমরা দল হিসেবে খুবই ব্যালান্সড। দলে রবসন এবং মিগুয়েলের মত বিশ্বমানের ফুটবলাররা রয়েছেন। তাঁরা নিজেদের দিনে যেকোনও দলের ডিফেন্সকে ভেঙে দিতে সক্ষম। তাছাড়া ফরোয়ার্ড লাইনে রয়েছেন কিংসলে, সুমন রেজা, সবুজ, নুহা এবং সুদি আব্দাল্লাহর মত দুর্ধর্ষ স্ট্রাইকাররা।
আমাদের ডিফেন্সে কিছুটা সমস্যা রয়েছে। তবে তারেক, খালেদ, বিশ্বনাথ এবং বাকিরা তপু বর্মনের অভাব এখন পর্যন্ত ঠিকভাবেই পূরণ করতে সক্ষম হয়েছেন।
এটিকে মোহনবাগানের রক্ষণও বেশ শক্তিশালী। সন্দেশ, প্রীতম, শুভাশিষ, প্রবীররা সবাই অভিজ্ঞ। ফলে মোহনবাগানের ডিফেন্স ভাঙার কাজটা সহজ হবে না। তাছাড়া ওঁদের আক্রমণভাগেও বেশ কয়েকজন ভালো দেশি ও বিদেশী ফুটবলার রয়েছে। সব মিলিয়ে রুদ্ধশ্বাস এক লড়াইয়ের অপেক্ষায় রয়েছে দুই দল।
৩) বসুন্ধরা বাংলাদেশের ফুটবলে অপ্রতিরোধ্য। গত কয়েক বছরে বাকিদের পিছনে ফেলে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। কীভাবে এটা সম্ভব হল?
ইমরুল হাসান: আমরা ক্লাবটির প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা কষে এগিয়েছি। আর সেই অনুযায়ী সম্ভাব্য সেরা ফুটবলার ও কোচিং স্টাফকে আমরা দলে নিয়ে এসেছি। আমাদের ক্লাবের মালিক পক্ষ ও কর্মকর্তা, কোচিং স্টাফ এবং ফুটবলারদের সকলের পরিশ্রমেই আমরা ধারাবাহিক সাফল্যের মুখ দেখতে পাচ্ছি। দেশের সাফল্য অর্জনের পর এখন আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য এশিয়ান পর্যায়ে ভালো করা। আশা করি, খুব শীঘ্রই আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ভাল ফলাফল অর্জনে সক্ষম হব।
৪) এটিকে মোহনবাগানের কোন ফুটবলারকে বিপজ্জনক বলে মনে হয়? বসুন্ধরার কোন ফুটবলার ম্যাচে ফারাক গড়ে দিতে পারেন?
ইমরুল হাসান: এটিকে মোহনবাগান দল হিসেবে দুরন্ত। এই দলের অনেক ফুটবলারের খেলাতেই আমি ব্যক্তিগতভাবে মুগ্ধ। তবে লিস্টন কোলাসোকে খুবই বিপজ্জনক মনে হয়েছে। তাছাড়া মনবীর সিং ও কিয়ান নাসিরিও দারুন খেলছেন।
আমার মতে বসুন্ধরার প্রতিটি ফুটবলারই ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিতে সক্ষম। তারপরেও যদি কোনো একজন বা দুইজনের নাম বলতে হয় তবে সবার প্রথমেই বলতে হবে রবসন রবিনহোর নাম। সে ফুটবল মাঠের জাদুকর। তার উপর ভরসা থাকবে সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া মিগুয়েল, ইব্রাহিম, তারিক, জিকোরাও ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দেবে, এমনটাই আশা আমাদের।
৫) কোচ অস্কারের সঙ্গে এএফসির লড়াই নিয়ে কিছু পরিকল্পনা কষেছেন?
ইমরুল হাসান: ম্যাচ নিয়ে প্ল্যান করার কাজটা কোচিং স্টাফদের। আমি তাদের সেই কাজে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করতে চাই না। তবে আমি তাদের আশ্বস্ত করেছি দলের ভালোর জন্য যা প্রয়োজন সবকিছুর ব্যবস্থা করে দেওয়া আমার দায়িত্ব।
৬) এএফসি লড়াইয়ে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের কী বসুন্ধরাকে সমর্থনের আহ্বান জানাবেন?
ইমরুল হাসান: ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে বাংলাদেশের একটা নাড়ির টান রয়েই গিয়েছে। পূর্ব বাংলার বাপ-দাদার ভিটে ফেলে মানুষ পশ্চিম বাংলা চলে এসেছেন। কিন্তু ভোলেননি ছেড়ে-আসা জলহাওয়া, নদী, গ্রাম, ভাটফুলের পরশ। এই মানুষগুলোই ওই বাংলায় ইস্টবেঙ্গলের সমর্থক। যে ক্লাবটি পূর্ব বাংলা, মানে আজকের বাংলাদেশ, ছেড়ে-আসা মানুষের আশা ভরসা।
আরও পড়ুন: ভরা যুবভারতী সমস্যা হতে পারে বাগানের! AFC যুদ্ধের আগেই হুঁশিয়ারি আলেহান্দ্রোর ‘বাংলাদেশি’ বন্ধুর
সেই বাংলাদেশ থেকে এএফসি-তে যাচ্ছে কিংস। নিশ্চয়ই বাড়তি ভালবাসা পাবে, এটাই স্বাভাবিক। আর কলকাতার মানুষ ভাল ফুটবলের সমর্থক। ভাল খেললে ভালবাসা আসবেই।
৭) ফুটবলের উন্মাদনায় ঢাকা না কলকাতা কোন শহর এগিয়ে?
ইমরুল হাসান: আশির দশকে ঢাকা ছিল ছিমছাম এক শহর। টিভি বলতে একটাই, রাষ্ট্রীয় চ্যানেল। রাত দশটা বাজলেই, পুরো ঢাকা ঘুম। ফুটবল ছিল তখন একমাত্র উন্মাদনা, উত্তেজনার নাম। আবাহনী-মোহামেডান প্রধান দুই দল। যেদিন তারা মুখোমুখি হত, ঢাকা শহর ফাঁকা। সবাই গ্যালারিতে, স্কুল-অফিস ছুটি। সব উত্তেজনা গ্যালারিতে, খেলা শেষে মিছিল, সমর্থকদের দাংগা হাংগামা তো ছিলই।
৯০ এর দশকে স্যাটেলাইট টিভি এলো। মানুষজন ঝুকে পড়ল ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবল, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এসবের দিকে। দেশের ক্রিকেট-সাফল্যও ম্লান করে দিল ফুটবলকে। ক্রিকেটাররা হলেন নতুন নায়ক, ফুটবলাররা যেন খলনায়ক। এরপরের দশকগুলোতে মেসি, রোনাল্ডোদের জয়গান। ঢাকার উঠতি তরুণদের গায়ে গায়ে আর্সেনাল-ম্যান ইউ'র জার্সি। দেশি ফুটবল নেই তেমন কোথাও, তবে বিদেশি ফুটবল দারুণ।