আইপিএলে তাঁকে কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) হয়ে এমন ইনিংস খেলতে প্রায়ই দেখা যায়। কিন্তু বিপিএলে বল হাতে বেশ কয়েকটি ম্যাচে উইকেট পেলেও ব্যাট হাতে সেভাবে জ্বলে উঠতে পারছিলেন না। অবশ্য কয়েকটি ম্যাচে আন্দ্রে রাসেল নামার আগে খেলা শেষ হয়েছে নয়তো অল্প রান বাকি ছিল জয়ের জন্য। ফলে তাঁর ‘পাওয়ার’ ব্যাটিং দেখা যাচ্ছিল না। আসলে যে পরিস্থিতিতে রাসেলকে ভালো খেলতে উদ্বুদ্ধ করে সেটাই এতদিন হচ্ছিল না। চাপ। এই পরিস্থতিতে পৃথিবীর অন্য যে কোনও ব্যাটসম্যানের চেয়ে রাসেল কয়েকগুন এগিয়ে।
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে রাজশাহী রয়্যালস প্রায় হেরেই যাচ্ছিল। সেখান থেকে যেন ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠল রাসেলের ব্যাট। তাঁর ব্যাটে পুড়ল মেহেদি হাসান রানা-রুবেল হোসেনরা। শেষ দুই ওভারে জয়ের জন্য রাজশাহীর দরকার ছিল ৩১ রান। চার-ছক্কার তোড়ে সেই রান তুলতে রাসেলের লাগল মাত্র ৮ বল। ২ উইকেটের রোমাঞ্চকর জয়ে ফাইনালে উঠে গেল রাজশাহী।
আরও পড়ুন কোহলিদের ‘দুশমন’কে উপহার! ভিডিও ফাঁস কেকেআরের
চাপে ভেঙে পড়ার স্বভাব নেই রাসেলের। বরং চাপ বাড়লেই ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার খেলাটা নাকি উপভোগ করেন, "আমি এই ধরনের পরিস্থিতিতে খেলতে ভালোবাসি। যখন ওভার প্রতি ১৩-১৪ করে দরকার তখন চাপ থাকে, সেই চাপ আমি পছন্দ করি। কখনো ওভারপ্রতি ১৬-১৭ করে দরকার হয়। আমি এই ধরণের চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসি। আমি ফ্রেশ মুডে নামি, আগে থেকে কোনো পরিকল্পনা করি না।"
রাসেলের তাণ্ডবের সময় মেজাজ হারাতেও দেখা গেল চট্টগ্রাম অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহকে। পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে দারুন বোলিং করে যাওয়া মেহেদি হাসান রানাকে এতটা অসহায় দেখা যায়নি আগে। তাঁকে একের পর এক ছক্কা সীমানার ওপাড়ে আছড়ে ফেলেছেন রাসেল। সেই চাপে তাকে ওয়াইড বল করতেও দেখা গিয়েছে। ২২ বলে ৫৪ রানে অপরাজিত থাকা রাসেলের ইনিংসে ছক্কাই ছিল সাতটি। বাউন্ডারি মেরেছেন মাত্র দুটি।
আরও পড়ুন ৮৭ বছরের সুপার-ফ্যান প্রয়াত! ভারতীয় ক্রিকেটে শোকের ছায়া
রাসেলের ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে ছক্কা মারা কতই না সহজ। ছক্কা মারার জন্য বল ডট দিয়েছেন। তবুও চাপ তাঁকে ঘিরে রাখেনি। তবে ম্যাচ শেষে রাজশাহীর অধিনায়ক রাসেল জানালেন, তার জন্য কাজটা মোটেও সহজ ছিল না, "না, আমার জন্যও সহজ ছিল না। একটা মিস টাইম হয়ে গেলেই কিন্তু আউট হয়ে যেতে পারতাম। আমি ফিল্ডিং পজিশনগুলো দেখেছি, চেয়েছি মাঝ ব্যাটে লাগতে যাতে বল বাউন্ডারির বাইরে গিয়ে পড়ে।"
অনেকগুলো ছক্কা এসেছে স্রেফ আসুরিক শক্তিতে। ম্যাচে এই পাওয়ার হিটিংয়েই হিট রাসেল। এই শক্তির নেপথ্যে কী? রাসেল সাংবাদিকদের বলে গেলেন, "বেশি কিছু না। কেবল কিছু ফল খেয়েছি, সেইসঙ্গে ডাবের জল পান করেছিলাম।"
আরও পড়ুন ওয়াংখেড়েতে কলঙ্কের হার বিরাটদের, এবার মুখ খুললেন সৌরভ
অন্যপ্রান্তে যেভাবে উইকেট পড়েছে রাজশাহীর তাতে জয় নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন স্বয়ং রাসেলও। কিন্তু আবু জায়েদ তাঁকে সঙ্গ দিয়ে ৩৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়তে সাহায্য করেন। এ জন্য আবু জায়েদকে ধন্যবাদও দিলেন রাসেল, "অন্য পাশে যেভাবে উইকেট পড়ছে তা নিয়ে আমি ভীত ছিলাম। আমি ভেবেছি এক পাশে থেকে শেষ পর্যন্ত খেলতে হবে। রাহিকে (আবু জায়েদ) ধন্যবাদ সে সঙ্গ দিতে পেরেছে।"