শ্রীলঙ্কা: ১৭০/৬
পাকিস্তান: ১৪৭/১০
হেভিওয়েটের তকমা খুঁইয়ে ফেলেছিল বেশ কয়েক বছর ধরেই। জয়াবর্ধনে, সাঙ্গাকারার মত কিংবদন্তিদের অবসরের পর বিশ্ব ক্রিকেটে কুলীন তকমা খোঁয়াতে হয়েছিল। তবে ২০২২-এর শেষলগ্ন অন্তত আগের সেই হৃত গৌরব ফিরিয়ে দিল শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে। রাজার মত প্রত্যাবর্তন ঘটল দ্বীপরাষ্ট্রের। দেশের দেউলিয়া। আর সেই মঞ্চেই যেন ফিনিক্স পাখির মত উত্থান ঘটিয়ে এশিয়া সেরা শানাকা-হাসারাঙ্গারা।
প্ৰথমে ব্যাট করে স্বপ্নের মত কামব্যাক ঘটিয়ে স্কোরবোর্ডে ১৭০ রান জমা করা। তারপরে পাকিস্তানের হেভিওয়েট ব্যাটিং লাইনআপকে ১৪৭ রানে থামিয়ে দেওয়া। ২৩ রানে এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়া রূপকথা নয়ত কী!
১৭১ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে পাকিস্তান ধসে গেল দেড়শোর আগেই। ফাইনালে অলআউটের লজ্জা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হল পাক বাহিনীকে। শ্রীলঙ্কার প্রমোদ মধুসন প্ৰথম ওভারেই দুঃস্বপ্নের সূচনা করেও যেভাবে নখ-দাঁত বের করে প্রত্যাবর্তন ঘটালেন পরের ওভারে, তা যেন গোটা ম্যাচে শ্রীলঙ্কার পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থায় ঘুরে দাঁড়ানোর সার্থক রূপক হয়ে থাকল।
আরও পড়ুন: এশিয়া কাপ জিতলে কত কোটি পাবে চ্যাম্পিয়ন দল! টাকার খেলায় বহু এগিয়ে IPL
পরের পর হোয়াইড! গুচ্ছের এক্সট্রা রান। সোশ্যাল মিডিয়ায় তৎক্ষণাৎ মিম মেটেরিয়াল হয়ে গিয়েছিলেন প্রমোদ। তবে সেখান থেকে কামব্যাক করলেন একই ওভারে পরপর দু-বলে বাবর আজম, ফখর জামানের মত পাক ব্যাটিংয়ের দুই মহীরুহকে ফিরিয়ে। সেই ধাক্কা আর কখনই কাটিয়ে উঠতে পারেননি বাবর আজমরা। তৃতীয় উইকেটে সে যতই রিজওয়ান (৪৯ বলে ৫৫), ইন্তিখাব আলমের (৩১ বলে ৩২) ৭১ রানের পার্টনারশিপ থাকুক না কেন।
রিজওয়ান, ইন্তিখাব ফেরার পরেই শ্রীলঙ্কান বোলিং প্রায় গিলে খেল পাক ব্যাটিংয়ের লোয়ার মিডল অর্ডারকে। কার্যত ভিলেন হতে বসা প্রমোদ মধুসন শেষ পর্যন্ত চার উইকেট নিয়ে থামলেন।
হাসারাঙ্গা ব্যাট হাতে ৩৬ করার পরে বল হাতেও নিলেন ৩টে উইকেট।
টসে জিতে প্ৰথমে শ্রীলঙ্কাকে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিল পাকিস্তান। নাসিম শাহ, হ্যারিস রউফদের সামনে প্ৰথম থেকেই বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল লঙ্কানরা। পাওয়ার প্লে-র মধ্যেই ৩৬/৩ হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। সেখান থেকে একসময় ৫৮/৫ হয়ে যাওয়ার পরে ভাবা হয়েছিল ম্যাচ কার্যত একপেশে হতে চলেছে।
সেখান থেকে চলতি টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা কামব্যাক ইনিংস উপহার দিয়ে যান ভানুকা রাজাপক্ষে (৪৫ বলে ৭১)। প্ৰথমে হাসারাঙ্গার সঙ্গে ৫৮ রানের পার্টনারশিপে দলকে প্রাথমিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেন।
আরও পড়ুন: ভারতের ড্রেসিংরুমে বাজানো যাবে না মিউজিক, বেনজির পরিস্থিতিতে বড় অনুরোধ টিম ইন্ডিয়া ক্যাম্পে
তারপরে করুনরত্নের সঙ্গে সপ্তম উইকেটে আরও ৫৪ রান যোগ করে দলকে ১৭০-এ পৌঁছে দেন। পাল্টা দেওয়ার বিষ্ফোরক ইনিংসে রাজাপক্ষে হাফডজন বাউন্ডারির সঙ্গে তিনটে ওভার বাউন্ডারিও হাঁকান। হাসারাঙ্গাও ২১ বলে ৩৬ রান করে বুঝিয়ে দেন কেন এই মুহূর্তে তিনি টি২০-র অন্যতম সেরা পারফর্মার!
কয়েক মাস আগেই ইংল্যান্ডের হেড কোচের পদ থেকে অপসারিত হতে হয়েছিল। সেই ক্রিস সিলভারউডই কোচ হিসেবে আট বছর পর চ্যাম্পিয়ন করলেন শ্রীলঙ্কাকে। রূপকথার প্রত্যাবর্তন তো মাঠের বাইরেও!