Advertisment

কলকাতায় বাড়ির বন্দোবস্ত করে দিক রাজ্য সরকার, আবেদন স্বপ্না বর্মণের

জায়ান্ট স্ক্রিনে নিজের পারফরম্যান্স দেখে কখনও হেসে ফেলছেন তো কখনও লজ্জায় মুখ ঢাকছেন। করতালির শব্দব্রহ্মে মাঝে মাঝে চমকেও যাচ্ছেন। সল্টলেক সাই-এর চেনা চৌহদ্দিতটাই আজ অচেনা লাগছে স্বপ্না বর্মণের।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Swapna Burman

স্বপ্নার ‘বিশেষ’ জুতো নিয়ে কী বললেন কোচ সুভাষ!

জায়ান্ট স্ক্রিনে নিজের পারফরম্যান্স দেখে কখনও হেসে ফেলছেন তো কখনও লজ্জায় মুখ ঢাকছেন। করতালির শব্দব্রহ্মে মাঝে মাঝে চমকেও যাচ্ছেন। সল্টলেক সাই-এর চেনা চৌহদ্দিতটাই আজ অচেনা লাগছে স্বপ্না বর্মনের। এই সেই স্বপ্না যে, গত ২৯ অগাস্ট  প্রথম ভারতীয় হিসেবে এশিয়ান গেমসে হেপ্টাথলনে সোনা জিতে ইতিহাস লিখেছিলেন। জলপাইগুড়ির বছর একুশের মেয়েই রাজ্যের পাঠ্য়পুস্তকে কন্যাশ্রী বিভাগে ঠাঁই পেয়েছে। তাঁর অ্য়াথলেটিক জীবনের লড়াই বর্ণিত হচ্ছে অষ্টম শ্রেণির স্বাস্থ্য ও শারীরশিক্ষার বইয়ে। বাংলা তথা দেশের গর্ব আজ স্বপ্না।

Advertisment

Swapna burman রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও রাজ্য অলিম্পিক সংস্থার সভাপতি অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে স্বপ্না বর্মণ।

ইন্দোনেশিয়া থেকে শুক্রবারই দুপুরে কলকাতায় ফিরেছেন তিনি। ফেরার পর থেকেই শুধু দু’চোখে অপার বিস্ময় তাঁর। কলকাতা বিমানবন্দরের ডোমেস্টিক টার্মিনালের যে গেট দিয়ে অতীতে তিনি বহুবার একাকী হেঁটে গিয়েছেন আজ সেখানেই তাঁর জন্য শয়ে শয়ে মানুষ। ‘সোনার মেয়ে’র বীরাঙ্গনা সম্মাননায় ফুলেদের মিছিল।

রাজ্যের ক্রীড়া মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, রাজ্য অলিম্পিক সংস্থার সভাপতি অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় ও বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সচিব স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন বিমানবন্দরের বাইরে। এসেছিল সাই-এর প্রতিনিধি দল। পুস্পস্তবকের অভ্যর্থনা দিলেন তাঁরা। কলকাতার চারুচন্দ্র কলেজে পড়েন স্বপ্না। কলেজের অধ্যাপক থেকে পড়ুয়া, সবাই ছুটে এসেছেন স্বপ্নাকে স্বাগত জানাতে। এসবের মাঝেই স্বপ্না...স্বপ্না..ডাক। তখন থেকেই যেন ঘোরের মধ্যে স্বপ্না। ভাবতেও পারেননি তিনি যে, তাঁর অপেক্ষায় রাজকীয় মৌতাত। হয়তো ভুলেই গিয়েছিলেন যে, তাঁর শরীর ভাল নেই। ধুম জ্বর। দমদম থেকে গাড়ি চেপে সোজা চলে এলেন সাই-তে। এখানেই তাঁর জন্য প্রস্তুত ছিল সংবর্ধনার মঞ্চ।

আরও পড়ুন: এশিয়াডে ‘সোনা’র ইতিহাস লিখলেন বাংলার স্বপ্না বর্মণ

Swapna Burman সাই-তে সংবর্ধনা নিচ্ছেন স্বপ্না বর্মণ।

স্বপ্নার চোখে মুখে আজও এশিয়ান গেমসের সোনা জয়ের তৃপ্তি দিনের আলোর মতো পরিস্কার। বলছেন, “ভারতের হয়ে সোনা পাওয়ার মুহূর্তটা অত্যন্ত গর্বের।” স্বপ্না দৌড়তে দৌড়তেই বুঝে গিয়েছিলেন যে, সোনা তিনিই পাচ্ছেন। বছর একুশের কন্যা এ প্রসঙ্গে বললেন, “৮০০ মিটারে যখন চিনা প্রতিদ্বন্দ্বী আমার সঙ্গেই ছিল, তখনই বুঝেছিলাম সোনা পাবই।”

স্বপ্নার লড়াইয়ের গল্প এখন বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছে। জলপাইগুড়িতে নিজেদের জমি-বাড়ি নেই স্বপ্নাদের। জলপাইগুড়ির পাতকাটা পঞ্চায়েত সমিতির কালিয়াগঞ্জ ঘোষ পাড়ায় বানিয়ে দেওয়া ঘরেই থাকে তাঁর পরিবার। বাড়িতে বাবা পঞ্চানন বর্মণ, মা বাসনা ও দাদা অসিত। মা চা বাগানের শ্রমিক ছিলেন। আট বছর আগে স্বপ্নার বাবার ব্রেন স্টোক হয়, তারপর দেখা স্বামীর দেখভাল করার জন্য বাসনা কাজ ছেড়ে দেন। স্বপ্নার বড় দিদি চন্দনার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। পবিত্র স্বপ্নার বড় দাদা। তিনি রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। যদিও স্বপ্নাদের সঙ্গে থাকেন না। অন্যত্র পরিবার নিয়ে বাস তাঁর। অসিতও রাজমিস্ত্রী পেশায়।

আরও পড়ুন: Asian Games 2018: কেন স্বপ্না থুতনিতে চওড়া স্ট্র্যাপ লাগিয়ে ট্র্যাকে নামলেন!

স্বপ্না বলছেন, “জানেন কখনও মা-বাবা ভাবেনি যে মেয়ে দেশের পতাকা গায়ে জড়িয়ে এশিয়ান গেমসের ট্র্যাকে দৌড়বে। ভেবেছিল ভাই-বোনের মধ্যে কেউ যদি একটা চাকরি পায়, তাহলেই অনেক।”  আর এখন রাজ্য সরকার থেকে চাকরির আশ্বাস ছাড়াও স্বপ্নার কাছে আরও অনেক চাকরির প্রস্তাব আসছে। যদিও স্বপ্না এই মুহূর্তে চাকরির কথা ভাবছেন না। বললেন, “আমি শুনেছি যে রাজ্য সরকার আমার ও ভাইয়ের চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আমার কাছে অনেক চাকরির প্রস্তাবই এসেছে। কিন্তু আমি এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি কোনও।” সরকারে কাছে শুধু একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই চেয়েছেন স্বপ্না। বললেন, “আসলে সাই ছাড়া কলকাতায় আমার তো থাকার কোনও জায়গা নেই, খুব ভাল হয়ে যদি এই সাই-এর আশেপাশে সল্টলেকেই যদি একটা বাড়ি বা ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা হয়, তো খুব ভাল হয়।” অন্যদিকে জলপাইগুড়িতে তৃণমূল সাংসদ বিজয় চন্দ্র বর্মণ স্বপ্নার পরিবারকে বাড়ি করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

swapna burman স্বপ্না বর্মণ

২০২০ টোকিও অলিম্পিকেই পাখির চোখ স্বপ্নার। বলছেন, “যে কোনও অ্যাথলিটই অলিম্পিকে পদক জিততে চায়। আমিও তাঁর ব্যতিক্রম নই। আমার লক্ষ্য ৬,৩০০ পয়েন্ট স্কোর করা। তার জন্য় আরও অনেক শৃঙ্খলাবদ্ধ হতে হবে।” যদিও সবার আগে স্বপ্না চান মুম্বইতে গিয়ে চোট-আঘাত সারিয়ে সম্পূর্ণ ফিট হয়ে যেতে। তারপর ট্রেনিং শুরু করতে। 

আরও পড়ুন:  Asian Games 2018: সংবর্ধনা তো বুঝলাম, কিন্তু টাকা-পয়সা? প্রশ্ন স্বপ্নার ইনচার্জ কল্যাণ চৌধুরির

প্রায় এক বছর জলপাইগুড়িতে নিজের বাড়িতে যাননি স্বপ্না। আগামী নভেম্বরেই বাড়িতে গিয়ে মা-বাবার সঙ্গে দেখা করতে চান। বললেন, “জানেন, বাড়িতে এখন ভিড় লেগে থাকে। অনেকে আসছে। যেদিন সোনা পেয়ে মা-কে ফোন করেছিলাম। মা বলেছিল, আমি ঠিক আছি কি না! আসলে অনেক চোট-আঘাত নিয়েই ট্র্যাকে নেমেছিলাম তো। আমি বাড়ি যেতে চাই। খুব বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে।” স্বপ্না বলছেন তিনি চান নিজের রাগটাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে। জলদি রেগে যান তিনি। আর রেগে গেলেই কান্নাকাটি করেন। আপাতত এটাই শুধরাতে চাইছেন।

Swapna Burman স্বপ্না বর্মণের সঙ্গে সোমা বিশ্বাস

এদিন স্বপ্নার পাশেই ছিলেন দেশের আরেক কৃতী হেপ্টাথলিস্ট সোমা বিশ্বাস। এশিয়ান গেমসে জোড়া রুপো রয়েছে তাঁর। স্বপ্নার প্রয়োজনে দিদির মতোই মেন্টর হিসেবে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিও দিলেন তিনি।এদিন স্বপ্না ছাড়াও এশিয়াডে অংশ নেওয়া সাই-এর (পূর্বাঞ্চল) জিমন্যাস্ট প্রণতি দাস ও প্রণতি নায়েক, রোয়ার সংযুক্তা ডুং ডুং ও ভারতের হ্যান্ডবল গোলকিপার নীনা সীলকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

Advertisment