-রবিউল ইসলাম বিদ্যুৎ, ঢাকা
সোজা পথে না গিয়ে উল্টোপথে চলা শুরু করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। বিশ্বকাপে ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করে আসা মাহমুদউল্লাহ-র দল ঘরের মাঠে পাকিস্তান সিরিজেও ব্যর্থতার ধারা বজায় রেখেছে। বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড যেখানে বাংলাদেশের সামনে কেঁপেছে এবার উল্টো পাকিস্তানই মাহমুদউল্লাহদের কাঁপাকাঁপি তুলেছে। এরমাঝেই সিরিজ খুঁইয়ে বসেছে বাংলাদেশ। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৪ উইকেটে এবং দ্বিতীয় ম্যাচে মাহমুদউল্লাহরা হেরেছেন আরও বড় ব্যবধানে-৮ উইকেটে।
কেন এমন হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে? কোথায় সমস্যা? সেই সমস্যাটা সাধারণ সমর্থকরা বুঝতে পারলেও টিম ম্যানেজমেন্ট বুঝতে পারছে না। পাকিস্তান সিরিজের জন্য বিশ্বকাপের দল থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে দুই ওপেনার সৌম্য সরকার এবং লিটন দাসকে। অবশ্য তাঁদের পারফরম্যান্সও ছিল যারপনারই হতাশাজনক। ব্যাট বল হাতে নামলেই যেন তাদের থরহরি কম্পন উঠত। বোঝাই যাচ্ছিল লিটন-সৌম্যরা নিজেদের ওপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ নিয়ে ফেলছিলেন। তাই তাদের সাময়িক বিশ্রাম দরকার ছিল।
আরও পড়ুন: ছক্কা খেয়েই মেজাজ গরম! বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানকে মারণ-থ্রো শাহিনের, দেখুন সেই ভিডিও
এ পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু মুশফিকুর রহিমকে বাদ দেওয়ার ব্যাখ্যা মনঃপুত হয়নি কারওরই। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন মুশফিককে পাকিস্তান সিরিজে না খেলার পেছনে টেনে এনেছেন 'বিশ্রাম' তত্ত্বকে। তাঁর যুক্তি, সামনে টানা ম্যাচ রয়েছে- মুশফিক যেন তরতাজা হয়ে ফিরতে পারেন, সেজন্য তাঁকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্বয়ং মুশফিক প্রধান নির্বাচকের যুক্তিকে ছক্কা মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন। মুশফিক সংবাদমাধ্যমের নিকট জানিয়েছেন, তাঁকে প্রধান নির্বাচক ফোন করলে তিনি পাকিস্তান সিরিজের জন্য প্রস্তুত বলে সাফ বলে দেন। তারপরেও মুশফিককে পাকিস্তান সিরিজের জন্য বিবেচনা করা হয়নি। মুশফিক এটাও জানান, এরকমটা যে শুধু তার সঙ্গেই হয়েছে তা নয়। বরং এটি ট্রেন্ডই হয়ে গিয়েছে।
মাশরাফি-তামিম-সাকিবের সঙ্গেও এমন করা হয়েছে। তবে সে যাই হোক, মুশফিক বাংলাদেশ দলের জন্য কতটা অপরিহার্য সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে মাহমুদউল্লাহর দল। টানা দুই ম্যাচ হেরে গিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খুঁইয়েছে বাংলাদেশ। সংবাদমাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দেওয়ার ফল হিসাবে মুশফিককে বিসিবি থেকে পাঠানো হয়েছে কারণ দর্শানোর নোটিশ। তাঁর অপরাধ, কেন ভিতরের কথা সংবাদমাধ্যমকে বলতে গেলেন।
আরও পড়ুন: ২১৯ কিমিতে বোলিং হাসান আলির! তোলপাড় ফেলা গতি বাংলাদেশ ম্যাচে, দেখুন ভিডিও
হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর সঙ্গে সিনিয়র ক্রিকেটারদের দ্বন্দ্বটা আরও আগে থেকেই চলছিল। নিউজিল্যান্ড সিরিজে কোচ হঠাৎ দুই উইকেটকিপার তত্ত্ব সামনে আনলেন। তিনি জানালেন, মুশফিক ও সোহান দুটি করে ম্যাচে কিপিং করবেন। রাগে-ক্ষোভে মুশফিক টি-টোয়েন্টিতে আর উইকেটকিপিংই করবেন না বলে জানিয়ে দিলেন তারপর। এখানেই শেষ নয়, বিশ্বকাপে তামিম ইকবাল থাকবেন কিনা, তা নিয়েও হয়েছে একপ্রস্থ নাটক। ডমিঙ্গো এবং অধিনায়ক চাইছিলেন না লম্বা সময় টি-টোয়েন্টির বাইরে থাকা তামিম দলে থাকুক। কিন্তু অন্যপক্ষ তামিমের অভিজ্ঞতা উপেক্ষা করতে পারছিলেন না। এই দু’পক্ষের মধ্যে যখন রশি টানাটানি তখন সটান তামিম সোস্যাল মিডিয়ায় এক ভিডিও বার্তা দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন।
তামিমের অভিজ্ঞতা যে রাস্তায় কিনতে পাওয়া যায় না সেটা বিশ্বকাপে ভালোভাবেই বুঝেছে বাংলাদেশ দল। লিটন-সৌম্য ব্যর্থতার অবশিষ্ট কিছুই রাখেননি। মোহাম্মদ নাঈমের সঙ্গে ওপেন করবেন কে, তাই খুঁজে পাচ্ছিল না টিম ম্যানেজমেন্ট। একটা ম্যাচে তো সাকিব আল হাসানই ওপেন করে বসলেন। স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে হারে যে বিশ্বকাপ শুরু তার শেষটাও হয়েছে অত্যন্ত বাজে। সুপার টুয়েলভে একটা ম্যাচেও জিততে পারেনি বাংলাদেশ দল। উল্টো হারা ম্যাচে সংবাদমাধ্যমের সামনে গিয়ে তাল কাটিয়ে আবার বিতর্কে জড়িয়েছেন মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকরা।
আরও পড়ুন: ধোনির শহরে রোহিতের জন্য চরম পাগলামি! মাঠেই বেনজির কাণ্ড সমর্থকের, রইল ভিডিও
ক্রিকেটটা কত কষ্টে খেলতে হয় সেটা বোঝাতে গিয়ে টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক পেইনকিলার খাওয়ার কথা বলে বিতর্কে জড়ালেন। মুহূর্তে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছয়লাপ হয়ে গেল মাহমুদউল্লাহর 'পেইনকিলার' নিয়ে খেলার কথা। মুশফিক আবার সমালোচকদের জবাব দিতে গিয়ে মুখটা আয়নায় দেখতে বললেন। বিশ্বকাপ চলাকালীন দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের এমন কথা বলা হজম করতে পারেননি দেশের সমর্থকরা। একে তো বাংলাদেশ একের পর এক হেরেছে, উল্টোদিকে তাদের এমন কথা প্রমাণ করে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা আসলে খেলায় কতটা মনোযোগী ছিলেন?
এর মধ্যেই খবর ছড়িয়ে পড়ে, মুশফিক-ডমিঙ্গো মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে গিয়েছে! বাংলাদেশ থেকে যে চাপ সঙ্গী করে নিয়ে গিয়েছিলেন মুশফিক সেটি থেকে আর বের হাতে পারলেন না। ঘরের মাঠে পাকিস্তান সিরিজে তো তাঁকে বাদই পড়তে হলো। ঢুকল চার নতুন মুখ। যাদের টি-টোয়েন্টিতে অভিষেকই হয়নি। সাইফ হাসান-আকবর আলিদের ভাবা হচ্ছিল টেস্ট ক্রিকেটে। তাঁদেরই কিনা নিয়ে আসা হলো সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে। ওপেন করতে গিয়ে সাইফ দিশা হারিয়ে ফেলেছেন। পাকিস্তানি বোলারদের সামনে নাঈমও ব্যর্থ। বোলাররা ভালো করলেও টপ বা মিডল অর্ডার ব্যাটাররা কোথাও কেউ দাঁড়াতেই পারছেন না।
এই হ-য-ব-র-ল’র জন্য যে টিম ম্যানেজম্যান্টই দায়ী সেটা বুঝতে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন