চলতি মাসের তিন তারিখ সুনীল ছেত্রী ৩৪-এ পা দিয়েছেন। জন্মদিনেই ভারত অধিনায়ককে সবচেয়ে বড় উপহারটা দিয়েছিল এএফসি (এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন)। সুনীলকে ‘এশিয়ান আইকন’ হিসেবে বেছে নিয়েছিল তারা। এহেন সুনীল বৃহস্পতিবার ঝটিকা সফরে এসেছিলেন কলকাতায়। এই শহরের জামাইকে ক্যালকাটা স্পোর্টস জার্নালিস্ট’স ক্লাব বেছে নিয়েছে দেশের সেরা ক্রীড়াব্যক্তিত্ব হিসেবে। এই সম্মান নিতেই এদিন বিকেলে ঘণ্টাখানেকের জন্য মৌলালী যুব কেন্দ্রের স্বামী বিবেকানন্দ অডিটোরিয়ামে হাজির ছিলেন ‘ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাসটিক’।
টিম ইন্ডিয়ার ক্যাপ্টেন ২০০২ সালে সিনিয়র কেরিয়ার শুরু করেছিলেন মোহনবাগানের হয়ে। এরপর ইস্টবেঙ্গলেও খেলেছেন। ফের ফিরেছিলেন সবুজ-মেরুনেও। কিন্তু শেষ ছ’বছর আর কলকাতার কোনও ক্লাবের হয়েই খেলেননি দেশের জার্সিতে গোলের সেঞ্চুরি করা এই ফুটবলার। এদিন পুরস্কার মঞ্চে দাঁড়িয়ে সুনীল বললেন, “কলকাতায় এতগুলো বছর কাটিয়ে এটাই আমার প্রথম ট্রফি।” ইস্টবেঙ্গল-মোহনাবাগানে খেলা সুনীল আরও বলছেন, যে তিনি চান ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান আইএসএল খেলুক। তাঁর সাফ বক্তব্য, শেষ তিন চার বছরে বেঙ্গালুরু এফসি বনাম মোহনবাগানের ম্যাচগুলোই ভারতীয় ফুটবলের সেরা ম্যাচ।
আরও পড়ুন: ফের বর্ষসেরা ফুটবলার সুনীল ছেত্রী
বেঙ্গালুরু এফসি-র হয়ে সদ্যই স্পেন থেকে প্রাক মরসুম প্রস্তুতি সেরে এসেছেন সুনীল। স্প্যানিশ হেভিওয়েট বার্সেলোনা ও ভিয়ারিয়ালের ‘বি’ টিমের বিরুদ্ধে খেলেছেন তাঁরা। বার্সেলোনার ফ্যান সুনীল স্বীকার করে নিলেন যে, বার্সেলোনার ‘বি’ টিম তাঁদের শিখিয়ে দিল কিভাবে ফুটবল খেলতে হয়। ক্যাপ্টেন বললেন, “আমাদের মারাত্মক দৌড় করিয়েছে ওরা। সত্যিই ওদের থেকে শিখলাম কিভাবে ফুটবল খেলতে হয়। আমরা গতিতে পেরে উঠলাম না। ওরা সেরকম ড্রিবল করে না ঠিকই, কিন্তু ওদের পাসিং ফুটবল মারাত্মক। সত্যি বলতে বার্সার এই টিম অন্যতম সেরা। অনেক শেখার আছে। খেলার মানটাই অন্য পর্যায়ের, কোনও তুলনা চলে না’’
স্টিফেন কনস্ট্যানটাইনের কোচিংয়ে সুনীলরা তৈরি হচ্ছেন এএফসি এশিয়ান কাপের জন্য। ২০১১-র থেকে ২০১৯-এর প্রস্তুতি অনেক ভাল বলেই জানিয়েছেন সুনীল। বললেন, “আমরা প্রচুর কঠোর পরিশ্রম করছি এই টুর্নামেন্টের জন্য। আমরা প্রস্তুত।” এশিয়ান কাপ অনুষ্ঠিত হবে জানুয়ারিতে। তার আগে বাংলাদেশে রয়েছে সাফ কাপ। অতীতে সুনীলের ক্যাপ্টেনসিতেই ভারত সাফ কাপ জিতেছে। শোনা যাচ্ছিল, আগামী মাসে সাফ কাপে সুনীল নাও খেলতে পারেন। এদিন সুনীল বলছেন, “আমি এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি। অনেকবার এই টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছি। কোচ চাইছেন জুনিয়ররা এই টুর্নামেন্টে সুযোগ পাক। আমিও সেটাই চাই।”
সদ্যই স্পেনের মাটিতে ইতিহাস লিখেছে ভারতের অনূর্ধ্ব-২০ ফুটবল দল। কোটিফ কাপে তারা দশ জনে খেলেও হারিয়েছে ছ’বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্তিনাকে। সুনীল বলছেন, নিঃসন্দেহে এই জয় বড়। আর্জেন্তিনাকে হারানো রীতিমতো কৃতিত্বের। সুনীল যদিও বলছেন তিনি অনূর্ধ্ব-২০ দলটার খেলা খুব একটা দেখেননি। কিন্তু তাঁর চোখে অনূর্ধ্ব-১৬ দলটা দুর্দান্ত। সুনীলের সংযোজন, “এই টিমটাকে ধরে রাখতে হবে। ওরা দুরন্ত খেলছে। দেশের জার্সি না পরলে মনে হবে এটা কোনও আন্তর্জাতিক দল।”
সুনীলের চোখে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত রাশিয়া বিশ্বকাপ এত ভাল হওয়ার কারণ একটাই। টিম স্ট্র্যাটেজি আর গেম প্ল্যানে ভরসা। সুনীল মুগ্ধ হয়েছেন ফ্রান্স, ক্রোয়েশিয়া ও ইংল্যান্ডের খেলা দেখে।
আরও পড়ুন: ৩৪ বছর পর প্রতিশোধ, মেসির দেশকে ফুটবলে হারিয়ে ইতিহাস ভারতের
সদ্যই ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ভারত ৯৭ থেকে এক ধাপ এগিয়ে ৯৬ নম্বরে উঠে এসেছে। জর্জিয়ার সঙ্গে যুগ্ম ভাবে ৯৬ নম্বরে রয়েছে ভারত। ‘ইএলও’ নামে র্যাঙ্কিংয়ের নতুন সিস্টেমে এখন থেকে প্রত্যেক ম্যাচের পারফরম্যান্সেই বদলে যাবে র্যাঙ্কিং। সুনীল র্যাঙ্কিংয়ের সমীকরণ নিয়ে ভাবতে চাইছেন না। শুধু ভাল খেলার ওপরেই ফোকাস করতে চান। অন্যদিকে এশিয়ান গেমসে ভারতের অংশগ্রহণ করতে না-পারা নিয়েও কথা বললেন তিনি। বলটা সরকারের কোর্টেই ঠেলে দিলেন। জানালেন, “কিভাবে খেলা হবে, বা কিসের ভিত্তিতে খেলা হবে সেগুলো সরকার ঠিক করুক। কিন্তু কেউ তো নিশ্চিত করে বলতে পারে না যে, খেললেই পদক আসবে। শুধু এটা বলতে পারি খেলার সুযোগটা পাওয়া উচিত। তবেই না পদকের সম্ভাবনা আসবে।”
আরও পড়ুন: পদকের আশা নেই, সুনীলদের এশিয়াডে পাঠাতে চায় না আইওএ, খরচ দিতে রাজি ফেডারেশন
সুনীল এ কথাও জানিয়ে দিলেন, সাংবাদিকরা খেলা দেখে যেটা লেখা দরকার সেটাই লিখুন। বিরাট কোহলিকে নিয়ে লিখলেও, ভাল বা খারাপ, যেটা বলা দরকার সেটাই বলুন তাঁরা। ক্রীড়াসাংবাদিকরা খেলার একটা বিরাট অঙ্গ বলেই মত তাঁর।