কয়েকদিন আগেই ঋদ্ধিমান সাহা বিষ্ফোরকভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন, বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকে দলের রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল, বোর্ড সভাপতি হয়েও নির্বাচনের ক্ষেত্রে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা বলার এক্তিয়ার রয়েছে কিনা।
বোর্ডের সংবিধান অনুযায়ী, বোর্ড সভাপতি কখনই নির্বাচনের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। জাতীয় দল নির্বাচনের জন্য নির্বাচক মন্ডলীর কথাই শেষ কথা। নির্বাচনী বৈঠকে একমাত্র উপস্থিত থাকতে পারেন সচিব। যিনি আহ্বায়কের ভূমিকা পালন করে থাকেন। তবে নির্বাচনের ক্ষেত্রে তিনিও নিজের মতামত রাখতে পারেন না।
আরও পড়ুন: মোহনবাগানের জার্সিতে ব্যাটে ঝড় তোলেন কোহলি! বিরাটের বাঙালি কোচ এখনও সুখ-স্মৃতিতে ডুবে
তবে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তরফে সৌরভ-জমানার তিন জন প্রাক্তন এবং বর্তমান নির্বাচকের সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল, যাঁরা স্পষ্ট জানাচ্ছেন, এক্তিয়ার বহির্ভূতভাবে সৌরভ নির্বাচক কমিটির বৈঠকে উপস্থিত থেকেছেন। ২০১৯ সালে দায়িত্ব পাওয়ার পরে প্রত্যেক নির্বাচক কমিটির বৈঠকে হাজির থেকেছেন তিনি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে দু-জন নির্বাচক সাফ জানাচ্ছেন, বৈঠকে সৌরভের মতামত অগ্রাহ্য কেউই করতে পারেন না, তাঁর ব্যক্তিত্ব এবং পদের কথা ভেবে। একজন আরও বিষ্ফোরকভাবে জানাচ্ছেন, সৌরভের উপস্থিতি কার্যত তাঁদের সামনে প্রহসন নিয়ে হাজির হত। "অনেকেই সৌরভের উপস্থিতিতে অস্বস্তি অনুভব করেন। নিজের স্বাধীন মতামত প্রকাশও করতে পারেন না।" নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্বাচক এমনটাই জানাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: জিমন্যাস্টিক ছেড়ে দিয়েছেন রিও মাতানো দীপা! সাসপেন্ড হতেই বিরাট ঘোষণা কোচ নন্দীর
বোর্ড সভাপতি হয়ে সৌরভ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা কোহলিকে ওয়ানডের নেতৃত্ব থেকে ছেঁটে ফেলা হোক বা তিন ফরম্যাটেই রোহিতকে নেতৃত্বে আনা।
বাদ পড়ার পরেই বিষ্ফোরক ভঙ্গিতে কিছুদিন আগে সংবাদমাধ্যমে বলে দিয়েছেন, “নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘাড়ে ব্যথা নিয়ে ৬১ করে দিলাম। সেই জন্যই হারা-জেতার ম্যাচে আমরা জয়ের জায়গায় চলে যায় দল। সেখানে দাদিও আমাকে জানিয়েছিলেন, যতদিন আমি আছি, তোকে চিন্তা করতে হবে না। সেটা শোনার পর মানসিকভাবে উদ্বুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।”
আরও পড়ুন: কোহলির সংবর্ধনা মঞ্চে অনুষ্কা কেন! বেনজির বিতর্কে দগ্ধ ঐতিহাসিক টেস্ট
এরপরেই নাকি মোহভঙ্গ হয় তারকার। “তবে সাউথ আফ্রিকায় পুরোটাই যখন উল্টো হল, তখন শকড তো হবই। একটা সিরিজে কী এমন ঘটল যে হয় আমার বয়স বেড়ে গেল, নাহলে কী এমন হল। দাদি বলার পরেও বাদ পড়লে শকড তো হবই।”
জাতীয় দলের নির্বাচন নিয়ে কীভাবে বোর্ড সভাপতি কাউকে আশ্বস্ত করতে পারেন, ঋদ্ধিমানের খোলামেলা বক্তব্যের পরেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। এবার সেই বিতর্কে আরও ঘি ঢাললেন বোর্ডের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই প্রাক্তন এবং বর্তমান নির্বাচক।
১১৩ টেস্ট এবং ৩১১ ওয়ানডে খেলা বোর্ড সভাপতির সামনে কার্যত নির্বাক শ্রোতার ভূমিকা পালন করতে হয় নির্বাচকদের, এমন অভিযোগই উঠে আসছে।
নির্বাচক কমিটিতে সৌরভের সদম্ভ উপস্থিতি প্ৰথম নজরে আসে ২০১৯-এর অক্টোবরে। যেদিন তিনি বোর্ড সভাপতি নির্বাচিত হন, তারপরের দিনেই সৌরভ টুইট করেন, "সিনিয়র নির্বাচক কমিটিতে এদিন সকলের হাসিমুখ। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আসন্ন টি২০ এবং টেস্ট সিরিজের দল ঘোষিত হল।"
সেই ছবিতে সৌরভকে দেখা গিয়েছিল তৎকালীন নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান এমএসকে প্রসাদ, বোর্ড সচিব জয় শাহ, তখনকার অধিনায়ক বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা এবং বাকি নির্বাচকরা।
আরও পড়ুন: পোল্যান্ড বর্ডার পেরোতে পারব কিনা জানি না! আতঙ্কের ভিডিওয় EXCLUSIVE ইউক্রেন ফিজিও
কিছুদিন আগেই সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পরে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েন সৌরভ। যদিও তিনি পাল্টা বলেন, "সকলকে স্পষ্ট করে জানাতে চাই, এই ছবি নির্বাচক কমিটির বৈঠকের নয়। কাউকে কৈফিয়ত দেওয়ার কিছু নেই। কোনও যুক্তিহীন অভিযোগের জবাব দিয়ে তাকে মান্যতাও দেব না। আমি বোর্ডের প্রেসিডেন্ট। একজন বোর্ড সভাপতির যা কর্তব্য, সেটাই করছি। জাতীয় দলের হয়ে ৪২৪ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছি। এটা সকলকে মনে করে দেওয়া বোধহয় খুব খারাপ হবে না। তাই নয় কী?"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তরফে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করা হলেও, তার জবাব দেননি মহারাজ।