শুরুটা সেই ১২ বছর বয়স থেকে। চেতলার রাখী সংঘের মাঠে ছোট বাচ্চাদের খেলতে দেখে তাঁরও ইচ্ছা হয়েছিল বাস্কেটবল খেলার। আজ সেই ছোট্ট মধু কুমারী বছর বাইশের তরুণী। অপর্ণা ঘোষের পর বাংলার দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক মহিলা বাস্কেটবল খেলোয়াড়।
পূর্ব রেলের হয়ে সিনিয়র রাজ্য বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়েছেন মধু। গতকাল অর্থাৎ শনিবার, ময়দানের ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশনের মাঠে শুরু হয়েছে এই টুর্নামেন্টের ৩৮তম আসর। চলবে আগামী ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। কোর্টে নামার আগে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে সাক্ষাৎকার দিলেন মধু। চলতি বছর কমনওয়েলথ গেমসে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে এসেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: আছে অর্থাভাব, নেই পরিকাঠামো, আছে ভালোবাসা
এখনও পর্যন্ত কোনগুলোকে কেরিয়ারের সেরা মুহূর্ত হিসেবে বাছবেন?
অনেক আছে। প্রথমেই বলব ২০১১ সালে ইউথ ইন্ডিয়া ফিবা এশিয়া কাপ, চিনে হয়েছিল সেবার। আমরা ফিফথ হয়েছিলাম। এর পরের বছর মালয়েশিয়ায় জুনিয়র ইন্ডিয়া ফিবা এশিয়া কাপ খেললাম। অবশ্যই থাকবে এ বছর দেশের জার্সিতে কমনওয়েলথ গেমস ও এশিয়ান গেমস। ন্যাশনালেও বহুবার খেলেছি। ফেড কাপ তো রয়েছেই।
ভারতে মেয়েদের বাস্কেটবলের ছবিটা ঠিক কীরকম?
সত্যি বলতে আগের থেকে অনেক ভাল হয়েছে। মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। আমি বাইরে থেকে দেশে ফিরে বুঝতে পারছি, একটা জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে। আইপিএল, আইএসএল-এর মতো বাস্কেটবলের লিগ হচ্ছে ভারতে। কিন্তু সেটা ছেলেদের। ভবিষ্যতে মেয়েদের জন্যও এরকম একটা লিগ চালু হবে বলেই আমি আশাবাদী। তখন মেয়েদের কাছে আরও জনপ্রিয় হবে খেলাটা।
চলছে মেয়েদের খেলা। ছবি: শুভপম সাহা
বাস্কেটবলের পরিকাঠামো বদলানোর জন্য কী কী প্রয়োজন?
আরও ভাল কোচেদের প্রয়োজন আমাদের। তার সঙ্গে অবশ্যই স্পনসরশিপটাও খুব বড় ফ্যাক্টর। আপনাকে বলব শিবা ম্যাগনের কথাটা লিখুন। আমাদের সিনিয়র মহিলা দলের কোচ উনি। আজ ওঁর সমর্থন ছাড়া এই জায়গায় আমরা আসতে পারতাম না। পরিবারের মতোই উনি আমাদের সাপোর্ট করেন।
ডোপিংয়ের ব্যাপারে আপনারা কতটা সতর্ক থাকেন?
দেখুন সাই (স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া)-তে আমাদের ঠিক যা যা খেতে দেওয়া হয়, বা যা ওষুধ দেওয়া হয়, তার বাইরে আমরা কিছু করি না। সাইয়ের গাইডলাইন আমরা খুব কঠোরভাবে মেনে চলি। ডোপিংয়ের জন্য অনেকের কেরিয়ার শেষ হয়ে যায়। সেটা আমাদের মাথায় থাকে।
ছোট থেকেই খেলছেন, এর মধ্যে পড়াশোনাটা কিভাবে সামলালেন?
আমি এইট পর্যন্ত কলকাতায় পড়াশোনা করেছি। তারপর নাইন থেকে টুয়েলভ পর্যন্ত দিল্লির মর্ডান হাই স্কুলে পড়ে ফুল স্কলারশিপ পেয়েছি। জানেন, এই স্কুলেই কিন্তু গৌতম গম্ভীর পড়েছেন। এখন ইগনু থেকে সোসিওলজি নিয়ে বিএ করছি।
ম্যাচে নামার আগে নিজেকে ঝালিয়ে নিচ্ছেন মধু কুমারী। ছবি: শুভপম সাহা
এর পর কোন টুর্নামেন্টের জন্য তৈরি হচ্ছেন?
আগামী বছর ন্যাশনালে খেলব। কিন্তু আমার টার্গেট ২০১৯ ফিবা এশিয়া কাপ। ওখানে ভাল পারফর্ম করতে চাই।
আগামীর জন্য কোনও পরিকল্পনা?
জানেন, অনেক জায়গায় ছোট ছোট বাচ্চারা আমার কাছে আসে। ওরা বলে দিদি, আমাদের বাস্কেটবল খেলা শেখাও। ইচ্ছে করে ওদের শেখাতে। কিন্তু আমার হাতে তো সময়ই নেই। পারলে ভবিষ্যতে ওদের কোচিং করাবো।