আছে অর্থাভাব, নেই পরিকাঠামো, আছে ভালোবাসা

আনুষ্ঠানিক উৎসবের মোড়কেও কোথাও যেন ফুটে উঠল এ রাজ্যে বাস্কেটবলের দৈন্য। সিনিয়র খেলোয়াড় থেকে সংগঠনের সাধারণ সচিবের কথায় তা কার্যত স্পষ্ট।

আনুষ্ঠানিক উৎসবের মোড়কেও কোথাও যেন ফুটে উঠল এ রাজ্যে বাস্কেটবলের দৈন্য। সিনিয়র খেলোয়াড় থেকে সংগঠনের সাধারণ সচিবের কথায় তা কার্যত স্পষ্ট।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Varun Pillai practice

প্র্যাকটিসে বরুণ পিল্লাই। ছবি-শুভপম সাহা।

তিলোত্তমায় এখন প্রাক-শীতের আমেজ। এখানে ফুটবলে এখন আই-লিগ, আইএসএল। ক্রিকেট মানে রঞ্জি ট্রফি। এসবের মাঝেই শহরে উষ্ণতার পারদে তারতম্য ঘটানোর চেষ্টায় ‘আদার স্পোর্টস’ বা অনান্য খেলা।

Advertisment

শনিবার থেকে কলকাতায় শুরু হয়েছে সিনিয়র রাজ্য বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়নশিপ। এই টুর্নামেন্টের সৌজন্যে মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পাশের তাঁবুতে আগামী ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকবে ভরা বসন্ত। গুটিকয়েক সংবাদমাধ্যম আর হাতে গোনা মানুষের আনাগোনা স্পষ্টত বুঝিয়ে দেয় যে, রাজ্যে ভলিবল বা বাস্কেটবলের মতো খেলাগুলো সত্যিই আজ ব্রাত্য। কোথাও একটা 'করতে হয় তাই করা' মনোভাব প্রকাশ পায়।

পুরুষদের ১৭টি ও মহিলাদের ১৩টি দল নিয়েই ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশনের (ডব্লিউবিবিএ) মাঠে চলবে এবারের ৩৮তম  সিনিয়র রাজ্য বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়নশিপ। ইভেন্টের উদ্বোধনের দিন অর্থাৎ গতকাল, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাও ঢুঁ মেরে আসে সেখানে। আনুষ্ঠানিক উৎসবের মোড়কেও কোথাও যেন ফুটে উঠল এ রাজ্যে বাস্কেটবলের দৈন্য। সিনিয়র খেলোয়াড় থেকে সংগঠনের সাধারণ সচিবের কথায় তা কার্যত স্পষ্ট। এ শহর তথা রাজ্যের সিনিয়র খেলোয়াড় বরুণ পিল্লাই খেলছেন এই টুর্নামেন্টে। বাস্কেটবলের নয়া সংস্করণ থ্রিএক্সথ্রি চ্যাম্পিয়নশিপে দেশেরও প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। এছাড়াও একাধিক জাতীয় স্তরেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি। কোর্টে হাসিমুখে প্র্যাকটিস দেখে বোঝা যায়নি, মানুষটার ভেতরে এতটা ক্ষোভ রয়েছে।

আরও পড়ুন: বাস্কেটবল খেলি ভালোবেসে, বললেন টিম ইন্ডিয়ার সাগর যোশী

Advertisment

Varun Pillai প্র্যাকটিসের ফাঁকে বরুণ পিল্লাই। ছবি: শুভপম সাহা

কথা বলতে শুরু করে চোয়াল শক্ত হয়ে গেল তাঁর। বরুণ বলছেন, "বাংলায় বাস্কেটবল নিয়ে কারোর কোনও আগ্রহই নেই। আমাদের পরিকাঠামো অত্যন্ত খারাপ। নেই বললেই চলে। সারা পৃথিবী যেখানে উডেন কোর্টে প্র্যাকটিস করছে, আমরা করছি হার্ড কোর্টে। যেখানে চোটের সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি। অন্তত পক্ষে পাঁচ-ছ’টা ইন্ডোর কোর্ট থাকা দরকার। ক্লাবগুলোও নিজেদের উদ্যেগে সেভাবে টুর্নামেন্টই করে না।" প্রায় এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে নিজেই প্রশ্ন জুড়ে দিলেন, "বলতে পারবেন, তরুণ প্রজন্মের জন্য ক’টা কোচিং ক্যাম্প হয় এখানে? সারা বছর এখানে এই একটাই ইভেন্ট। রেড রোডের ধারে এরকম একটা জায়গায় ক’টা লোক আসবে খেলা দেখতে? আর টাইমিংটাই বা কী!"

বাস্কেটবলের বর্তমান চিত্রটাও তুলে ধরলেন বরুণ। জানালেন, "আজ বাস্কেটবলের থ্রিএক্সথ্রি অন্যান্য দেশগুলিতে অত্যন্ত জনপ্রিয়। আমাদের ভারতে তো স্বীকৃতিই নেই খেলার।" বাস্কেটবলের জীর্ণ দশা কাটানোর একটাই দাওয়াই বাতলেছেন বরুণ। বলছেন বিজ্ঞাপন, স্পনসর আর মার্কেটিং বদলে দিতে পারে বাস্কেটেবলের চিত্রটা।

ডব্লিউবিবিএ-এর সাধারণ সচিব গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় টুর্নামেন্টের ফাঁকেই কথা বললেন। বরুণের অভিযোগগুলির সঙ্গে তিনি সম্পূর্ণ সহমত না হলেও, উড়িয়ে দিতেও পারলেন না। পরিকাঠামোর প্রশ্নে গৌতমবাবুর মত, "একেবারে কিছু না থাকেল থ্রিএক্সথ্রি-তে বাংলা চ্যাম্পিয়ন হতে পারত না। তবে কোর্টের প্রসঙ্গে কয়েকটা কথা বলতে চাই। উডেন কোর্ট করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ করার সময় এই উডেন কোর্টের ভাড়া বাবদ প্রতিদিন দেড় লক্ষ টাকা দিয়েছি। অনেকদিন ধরে ভাবছি একটা অল ওয়েদার সিন্থেটিক কোর্ট বসাব। দাম ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা। আগে ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র কোনও পয়সা নিত না, এখন প্রতিদিন ১০-১২ হাজার টাকা লাগে। সত্যি বলতে, আমাদের পয়সা নেই। প্রচুর খরচ। হাতে টাকা থাকলে মানুষ ভবিষ্যতের কথা ভাবতে পারে। রাজ্য সরকারের কাছে ৫ লক্ষ টাকা পেয়েছি। তা দিয়ে রাজ্যস্তরের টুর্নামেন্ট করেছি। খেলোয়াড়দের থাকা-খাওয়ার খরচও রয়েছে তার মধ্যে। সেটাও বিরাট অঙ্কের। বিভিন্ন জায়গা থেকে প্লেয়াররা আসে।"

Gautam Ganguly ওয়েস্টবেঙ্গল বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সচিব গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: শুভপম সাহা

তাহলে কি আগামী দিনে বাংলায় বাস্কেটবলের পরিকাঠামো বদলাবে না? কী ভাবছে ডব্লিউবিবিএ? গৌতমবাবুর জবাব, "আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি বাস্কেটবলের জন্য। খুব তাড়াতাড়ি বয়সভিত্তিক কোচিং ক্যাম্প শুরু করব। এক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা ইউএসএ আর ইউকে-র কোচেদের সঙ্গে লিঙ্কআপ করেছে। ফলে ওঁরাই এসে এখানে কোচিং করাবেন। এছাড়াও এনবিএ-র কর্মসূচিও রয়েছে। এভাবেই এগিয়ে যাব। স্পনসরদের সঙ্গে কথাবার্তা হচ্ছে। এই চ্যাম্পিয়নশিপও স্পনসর ছাড়া করতে পারতাম না। এখানেও প্রায় লাখ পাঁচেক টাকা খরচ আছে।"

এই মুহূর্তে বাস্কেটবলের যা পরিস্থিতি তাতে খেলোয়াড়দের চাপা অসন্তোষ যেমন বিদ্যমান, ঠিক তেমনই কর্মকর্তাদেরও ভাল করার প্রচেষ্টাও কিন্তু দৃশ্যমান। অন্তত কথায় তা স্পষ্ট। ভবিষ্যতে বাংলায় এই খেলার চেহারা কিছুটা হলেও বদলাবে বলে আশা করা যায়।