ইস্টবেঙ্গল হোক বা মোহনবাগান। বাঙালি ফুটবলার খুঁজতে দূরবীন দিয়ে দেখতে হয়। স্কোয়াডে একাধিক ফুটবলার রাখা হলেও প্রথম একাদশে খেলেন হাতে গোনা কয়েকজন। দুই প্রধানকে এই বাঙালি-ফ্যাক্টরেই বধ করল পিয়ারলেস। কলকাতা ফুটবলের লেস্টার সিটি বলা হচ্ছে পিয়ারলেস এফসিকে। কয়েক মরশুম আগে প্রিমিয়ার লিগে স্বপ্নের উত্থান যেমন ঘটিয়েছিল লেস্টার সিটি এফসি, তেমনই এবার পিয়ারলেস করে দেখিয়েছে কলকাতা ফুটবলে। গত বারে লিগ জয়ের কাছাকাছি গিয়েও হয়নি। তবে এবারে সুদে আসলে সেই আক্ষেপ পুষিয়ে কলকাতা লিগে 'প্রায়' চ্যাম্পিয়ন পিয়ারলেস এফসি।
আর এই সাফল্যের জন্য পিয়ারলেস কোচ জহর দাস কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাঙালি-কানেকশনকেই। তিনি বলে দিচ্ছেন, "আমার টিমের সাফল্যের নেপথ্যে বঙ্গ ফুটবলাররাই। অরূপ, মনোতোষ চাকলাদার, অভিনব বাগ, ফুলচাঁদ হেমব্রম, পঙ্কজ মৌলা, অনিল কিস্কুরা ভিন রাজ্যের ফুটবলারের থেকে কোনও অংশে কম নয়। বরং এবারের টুর্নামেন্টে ওরা দেখিয়ে দিয়েছে, অন্যান্য ফুটবলারদের থেকেও ভাল পারফরম্যান্স মেলে ধরতে পারে ওঁরা।"
পাশাপাশি জহর দাস জোর দিয়েছেন যুব ফুটবলারদের তুলে আনার প্রসঙ্গও। তিনি দুই ক্লাবের কর্তাদেরই খোঁচা দিয়ে বলে দিয়েছেন, "বাঙালি ফুটবলারদের ব্রাত্য করেই বড় ক্লাবের কর্তারা টিম তৈরি করেছেন। ওরা তো ছোট ক্লাবের খেলা দেখেনই না। ওদের টাকা-পয়সা আছে, পরিকাঠামো আছে, কিন্তু ভাল ফুটবলার বাছার ক্ষমতা নেই।" আইজলে যুব ফুটবলার তুলে আনতে খালিদ জামিল জমানায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন জহর দাস। চুলোভা তাঁরই আবিষ্কার মনে করিয়ে দিয়ে পিয়ারলেস বস জানাচ্ছেন, "চুলোভাকে আমিই আইজলে তৈরি করেছিলাম। ওর থেকেও ভাল বাঙালি সাইড ব্যাক তুলে আনা সম্ভব। ছোট ক্লাবে অনেক ভাল সাইড ব্যাক রয়েছে।"
টুর্নামেন্টে একই সঙ্গে পিয়ারলেসের কাছে এবার আটকে গিয়েছেন দুই প্রধানের দুই স্প্যানিশ কোচ। কিবু ভিকুনার মোহনবাগান যেমন টুর্নামেন্ট শুরুর ম্যাচেই ক্রোমার জোড়া গোলে বিধ্বস্ত হয়েছেন, তেমন আলেহান্দ্রো মেনেন্ডেজের ইস্টবেঙ্গলকে থামিয়ে দিয়েছে পিয়ারলেস। নেপথ্যে সেই ক্রোমা। দুই বড় ক্লাবের বাতিল ক্রোমাই টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা। ১২টি গোল করে এবারের লিগে একাই রাজত্ব্য করেছেন খেপুড়ে ক্রোমা। পিয়ারলেস কোচ জহর দাস বলছেন, "বড় দলগুলির বিদেশিদের টেকনিক্যাল কিছু সমস্যা রয়েছে। এক্ষেত্রে ছোট দলগুলি কিন্তু দেখিয়ে দিচ্ছে, কামো, ক্রোমার মতো ফুটবলারদের কীভাবে ব্যবহার করতে হয়।"
খাতায় কলমে এখনও চ্যাম্পিয়ন নয় পিয়ারলেস। ইস্টবেঙ্গল শেষ ম্যাচে কাস্টমসকে ৭-০ গোলে পরাজিত করলেই চ্যাম্পিয়ন আরও একবার লাল-হলুদ। তবে ভেস্তে যাওয়া ম্যাচ কবে হবে, তা নিয়ে এখনও ময়দানে গুঞ্জন। আইএফএ-র তরফে ইস্টবেঙ্গল-কাস্টমস ম্যাচ ৩ তারিখে আয়োজন করা হলেও লাল-হলুদ কোচ-ফুটবলাররা আপাতত ছুটিতে চলে গিয়েছেন। চাপান উতোর চলছে এখনও। ঘটনা যাই হোক, জহর দাসের হাত ধরে বাঙালি থিওরিতেই যে এবার 'চ্যাম্পিয়ন' পিয়ারলেস, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।