Advertisment

ক্রাইস্টচার্চ সন্ত্রাস হামলা: 'তামিম-মুশফিকুর বলেছিল দৌড়িও না, বাসের ভেতরে থাক'

গত শুক্রবারের ঘটনা। নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ কেঁপে গিয়েছিল সন্ত্রাস হামলায়। জঙ্গিদের এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৯ জন। আর এই মর্মান্তিক ঘটনায় অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
https://indianexpress.com/article/sports/cricket/christchurch-mosque-shooting-there-was-fear-and-panic-tamim-mushfiqur-were-shouting-dont-run-stay-inside-the-bus-5630988/

ক্রাইস্টচার্চ সন্ত্রাস হামাল: 'তামিম-মুশফিকুর বলেছিল দৌড়িও না, বাসের ভেতরে থাক'

গত শুক্রবারের ঘটনা। নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ কেঁপে গিয়েছিল সন্ত্রাস হামলায়। জঙ্গিদের এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৯ জন। আর এই মর্মান্তিক ঘটনায় অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। নিউজিল্যান্ডে সফররত ছিলেন তাঁরা। এই ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও আতঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি তামিল ইকবাল, মুশফিকুর রহিমরা। ভয়াবহতা এখনও আচ্ছন্ন করে রেখেছে তাঁদের। রবিবারই বাংলাদেশে ফিরেছে টিম বাংলাদেশ। আপাতত সেদেশের বোর্ড তাঁদের সাময়িক ছুটি দিয়েছে নিজেদের তরতাজা করার জন্য। 

Advertisment

সেদিন জঙ্গিরা যখন ধ্বংসলীলা চালাচ্ছিল তখন তামিম ছিলেন টিম বাসে। যে দু’টি মসজিদে জঙ্গিরা গুলিবর্ষণ করেছিল সেখানেই নমাজ পাঠের জন্য গিয়েছিলেন পদ্মাপারের দেশের ক্রিকেটাররা। সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন তামিমরা। হেগলে ওভাল স্টেডিয়ামের নিকটবর্তী মসজিদ আল নুরে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। আর এই জঙ্গি হামলার ঘটনার ফুটেজ টিভিতে দেখেই ছলছল করে উঠেছিল তামিমের চোখ। অথচ এক সপ্তাহ আগে এই মসজিদেই তামিম গিয়েছিলেন প্রার্থনা করার জন্য়। ওই মসজিদে সেরকম জায়গা না-থাকায় সেখানে মানুষের ভিড় হয়ে যায়। তিনি ঠিক ওখানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। যেখানে গুলি চলেছিল সেদিন।

আরও পড়ুন: ‘মনে হচ্ছে যেন সিনেমা দেখছি, রক্তাক্ত হয়ে মানুষ মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসছে’

তামিমদের দলেই রয়েছেন ভারতীয় ভিডিও অ্যানালিস্ট শ্রীনিবাস চন্দ্রশেখরন। গত জানুয়ারিতেই তিনি বাংলাদেশ দলে যোগ দিয়েছেন। অতীতে বাংলাদেশ প্রিমিয়র লিগে কাজ করেছেন। আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদেও ছিলেন তিনি। শ্রীনিবাস ওই নারকীয় বাস যন্ত্রণার কথা ভুলতে পারছেন না। শ্রীনিবাস জানিয়েছেন তাঁরা যখন সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেন যে, বাস ছেড়ে মসজিদের পার্কিং লটের সামনে আসবেন তখনই দলের এক খেলোয়াড় খালেদ আহমেদের দিকে চোখ যায় তাঁর। খালেদ পাঞ্জাবি পরেছিলেন। তখন শ্রীনিবাস নিজের জ্যাকেটটি খুলে আহমেদকে পরার জন্য বলেন। শ্রীনিবাস বলছেন, “আমি টি-শার্ট পরেছিলাম। আমি ভয় পাচ্ছিলাম, বন্দুকবাজ যদি খালেদকে পাঞ্জাবিতে দেখে গুলি চালায়, সেজন্য মনে হয়েছিল ওর জ্যাকেট পরাটাই ঠিক হবে।”

তামিম এবং রিয়াদ মাহমুদুল্লাহ বাসের সামনেই বসেছিলেন। তাঁরা সবটাই দেখতে পারছিলেন। শ্রীনিবাস বলছেন তামিম চিৎকার করে বলেছিলেন, “সবাই বাসের মেঝেতে শুয়ে পড়।” শ্রীনিবাস সাধারণত বাসের পিছনের দিকে  ডানদিকের জানলার ধারে বসেন। তিনিই আচমকাই এক মহিলাকে দেখেন হাঁটতে হাঁটতে পড়ে যেতে। শ্রীনিবাস বলছেন, “আমি ভেবেছিলাম তিনি সম্ভবত অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। আমরা তখনই বাস থামিয়ে তাঁকে সাহায্য়ের জন্য এগিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু তখনই দেখি একটা বাচ্চা ছেলে তাঁকে তুলে ধরেছে, মহিলার শরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। আমি তখনই ভাবি কিছু একটা ঘটছে। আর সেসময় তামিম চেঁচিয়ে বলে সবাইকে বাসের মেঝেতে শুয়ে পড়তে।”

মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে শ্রীনিবাস চন্দ্রশেখরন মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে শ্রীনিবাস চন্দ্রশেখরন

শ্রীনিবাস মুম্বইতে থাকেন। রবিবার রাতেই পরিবারের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছে। ঘটনার দু’দিন পরেও বাংলাদেশের কোনও খেলোয়াড় ভাল করে ঘুমোতে পারেননি। ঘটনার রাতে ক্যাপ্টেনের ঘরেই সবাই ভোর চারটে থেকে পাঁচটা পর্যন্ত জেগেছিলেন। কেউ নিজের ঘরে থাকেননি। শ্রীনিবাস বলছেন, “আমরা যদি একা থাকতাম, তাহলে ওই সন্ত্রাসের ঘটনা আমাদের মাথায় আরও চেপে বসত। ফলে আমরা একসঙ্গে থাকাটাই শ্রেয় মনে করেছিলাম।” শ্রীনিবাস বলছেন, কেউ কল্পনাও করতে পারেননি যে, নিউজিল্যান্ডের মতো একটা জায়গায় এরকম সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটতে পারে। তামিম বাসের মেঝেতে শুয়েই ক্রিকইনফোর সাংবাদিক মহম্মদ ইসলামকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু মহম্মদ ভাবেন তামিম তাঁর সঙ্গে মজা করছেন। তামিম তাঁকে আবার ফোন করে বলেন, “আওয়াজটা শুনতে পারছ?”

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের পাশেই বিরাট, ক্রাইস্টচার্চের ঘটনায় তিনি মর্মাহত

শ্রীনিবাস বলছেন, তাঁরা ভেবেছিলেন যে, বাসের পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাবেন। এই প্রসঙ্গে তাঁর সংযোজন, “৫০-৬০ জন মানুষ পাগলের মতো  দৌড়াচ্ছিল। কিন্তু আমরা জানতাম না, কতজন হামলাকারী রয়েছে। আমরা যদি পালাতে গিয়ে তাদের সামনেই পড়ে যাই!” তামিমদের বাসটা নড়ারও জায়গা ছিল না। কারণ পার্কিং লটে সামনে আর পিছনে অনেক গাড়িই ছিল। তখনই সবাই বাসে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

সেদিন সাংবাদিক বৈঠকও কোনও কারণবশত ১০ মিনিট দেরিতেই হয়েছিল। শ্রীনিবাস জানিয়েছেন এটাই দৈবক্রমে তাঁদের খেলোয়াড়দের সেই যাত্রায় বাঁচিয়ে দিয়েছিল। তাঁরা ড্রেসিংরুমেই ফুটবল খেলেছিলেন। মাহমদুল্লাহর জন্য় তাঁরা অপেক্ষা করছিলেন। সাংবাদিক বৈঠকে প্রচুর প্রশ্ন করা হয়েছিল বলেই ধন্যবাদ জানাচ্ছেন তিনি। শ্রীনিবাস বলছেন সেঅর্থে এখন তিনি পুরো ঘটনা আর মনে করতে চাইছেন না। সেই ভয় আর আতঙ্কে আর ফিরতে চান না তিনি। তবু শ্রীনিবাসের তামিম আর মুশফিকুরের একটা কথাই কানে বাজছে। তাঁরা বলেছিলেন, “দৌড়িও না, বাসের ভেতরে থাক।”

সেদিন দলের ১৮ জন খেলোয়াড় মসজিদে গিয়েছিলেন। শুধুমাত্র শ্রীনিবাস এবং সৌম্য সরকার ভেবেছিলেন যে, খেলোয়াড়দের পৌঁছে দিয়ে তাঁরা একটা ট্যাক্সি ধরে হোটেলে চলে আসবেন। শ্রীনিবাস নিউজিল্যান্ড দলের সবাইকে ধন্যবাদ দিয়েছেন এভাবে তাঁদের পাশে থাকার জন্য়। এমনকি তিনি জানান যে, তামিম এবং মুশফিকুরের সঙ্গে রস টেলর কথা বলেন। কেন উইলিয়ামসন টেক্সট করে জানান যে, তাঁরা সবরকম সাহায্য়ের জন্য প্রস্তুত। পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক শহিদ আফ্রিদিও ফোন করে তাঁদের খবর নেন। এমনকি বিশ্বের বহু খেলোয়াড়ই ফোন করে আর টেক্সট মেসেজের মাধ্যমেই তাঁদের খবর নিয়েছেন।

Read the full story in English

New Zealand Bangladesh
Advertisment