পেটানো ইস্পাত কঠিন চেহারা। চুল ছোট করে ছাঁটা। ইউটিউব খুলে কোনও ফুটবল-প্রেমী যদি ব্রাজিল দলের অনুশীলন লক্ষ্য করেন, দেখা মেলে ভদ্রলোকের। নেইমার, দানি আলভেজদের অনুশীলনের সময় বেশ কর্তৃত্ব নিয়ে ভদ্রলোক চলাফেরা করেন। রাশভারী চেহারায় কখনও তারকা ফুটবলারদের সেটপিস তদারকি করেন, কখনও আবার নিভৃতে হেড কোচ তিতে-র সঙ্গে পরামর্শ সারেন।
ভিডিও প্র্যাকটিস করান কিবু! স্প্যানিশ ‘গুরু’-র অনুশীলন-রহস্য ফাঁস তারকা ছাত্রের
দ্বিতীয়জন আবার ব্রাজিলের জাতীয় দলের সঙ্গে ফুটবল প্রশাসনের মেলবন্ধনের কাজ করেন। কদাচিৎ দেখা যায় ফুটবল মাঠে। তবে ব্রাজিলিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের কর্পোরেট দুনিয়ার তিনি অন্যতম মুখ।
প্রথম জন সিলভিনহো। আর দ্বিতীয় ব্যক্তি এডু গ্যাসপার। কলকাতার সঙ্গে ভালমতো কানেকশন রয়েছে এই দুই ভদ্রলোকের। ব্রাজিলের জাতীয় দলের সহকারী কোচ সিলভিনহো এবং কো অর্ডিনেটর এডু গ্যাসপার আসলে ডগলাস দ্য সিলভা-র ঘনিষ্ট বন্ধু। রবিবার সকালেই শহরের তিন প্রধানে খেলে যাওয়া তারকা 'ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা'-য় ফাঁস করলেন এই তথ্য।
বর্তমানে ব্রাজিলের সাও পাওলো থেকে জন্মদিনের দিন ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তনী ডগলাস জানালেন, "আমার সঙ্গে প্রায়ই কথা হয় সিলভিনহো-র। কোপা জিততে ও মরিয়া। এই টুর্নামেন্টের পরেই হো (এই নামেই ডাকেন বন্ধুকে) জাতীয় দল ছেড়ে দিচ্ছে।" ব্রাজিল ছেড়ে ডগলাসের বন্ধু উড়ে যাচ্ছেন ফ্রান্সে। সেখানেই লিঁয় দলের হেড কোচের দায়িত্ব সামলাবেন তিনি।
আর বন্ধু গ্যাসপার আবার আর্সেনালের কর্পোরেট কমিউনিকেশনের চাকরি পেয়েছেন কিছুদিন আগেই। ব্রাজিল ছেড়ে গানার্সদের সংসারের অংশ হয়ে যাচ্ছেন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের এই কর্তা।
১৯৯৩ সালে এসসি করিন্থিয়ান্স পাওলিস্তায় ডগলাস ও সিলভিনহো একসঙ্গে মাঠ মাতাতেন। দু-জনেই ছিলেন সম্ভবনাময় তরুণ। একসঙ্গে খেলেছেন একবছর। করিন্থিয়ান্সে ডগলাস খেলতেন ডিফেন্সে। আর সিলভিনহো ছিলেন অ্যাটাকিং লেফট ব্যাক। অনেকটা মার্সেলোর ধাঁচের। তার পরে অবশ্য বাঁক নেয় দু-জনের বন্ধুত্বের অভিযান। ডগলাস পাড়ি জমান পেলের ক্লাব স্যান্টোসে। অন্যদিকে, করিন্থিয়ান্সে-ই থেকে যান সিলভিনহো।
১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯! পাঁচ বছর করিন্থিয়ান্সের হয়ে খেলেছেন ৪৫ বছরের প্রাক্তনী। তারপরে বিশ্বের তাবড় তাবড় ক্লাবের জার্সিতে মুগ্ধ করেছেন তিনি। আর্সেনাল, সেল্টা ভিগো, বার্সেলোনা, ম্যান সিটি! আর্সেনালে প্রথম ব্রাজিলীয় ফুটবলার হিসেবে সই করেছিলেন তিনি। সিলভিনহো-র ইপিএল থেকে লা লিগা- ইউরোপে টানা এগারো বছরের কেরিয়ার তাঁকে তুলে দিয়েছে অবিশ্বাস্য উচ্চতায়।
অন্যদিকে, ডগলাস চলে এসেছেন ভারতে। ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে মিথ হয়ে গিয়েছেন। জিতেছেন ঐতিহ্যশালী আশিয়ান কাপ। সেইসঙ্গে দুর্ধর্ষ পারফরম্যান্সে জিতে নিয়েছেন সমর্থকদের হৃদয়-ও। যাইহোক, চেনা পথ বদলে গেলেও সম্পর্ক অটুট রয়ে গিয়েছে দু-জনের, ২৬ বছর পরেও। বিশ্বের যেখানেই যান না কেন দু-জনে, যোগাযোগ রয়ে গিয়েছে মুঠোফোনে।
ক্লাব পর্যায়ে উত্তুঙ্গ সাফল্য সিলভিনহো-কে জাতীয় দলের হয়েও খেলার সুযোগ করে দিয়েছিল। প্রবাদপ্রতিম মারিও জাগালোর কোচিংয়েই রাশিয়ার বিরুদ্ধে হলুদ জার্সিতে আত্মপ্রকাশ তাঁর। তবে রবার্তো কার্লোসের আবির্ভাবে আন্তর্জাতিক স্তরে ৪টের বেশি ম্যাচ খেলা হয়নি। নিজের ভবিষ্যত বুঝতে পেরেই ফুটবল কেরিয়ারকে আলবিদা বলে দেন তিনি।
তারপরে কোচিংয়ে ইন্টার মিলান, কোরিন্থিয়ান্স, ক্রুজেইরো, ব্রাজিলের ডাগ আউটে তাঁকে দেখা গিয়েছে সহকারি হিসেবে। তবে 'সহকারী' তকমা ঘুচে যাচ্ছে শীঘ্রই। লিগা ওয়ানে অলিম্পিক লিঁয়ের দায়িত্ব নেওয়ার আগে ব্রাজিলের অনুর্ধ্ব-২৩ দলেরও হেড কোচ হচ্ছেন তিনি। রাশিয়া বিশ্বকাপেও কোচ তিতে-র সহকারি ছিলেন তিনি।
এডু গ্যাসপারের সঙ্গেও ডগলাসের মোলাকাত কোরিয়িন্থান্সে। অনুর্ধ্ব-২০ পর্যায়ে যখন খেলতেন লাল-হলুদের তারকা, সেই সময়েই সেই ক্লাবে অনুর্ধ্ব-১৫ স্কোয়াডের মাঝমাঠ সামলাতেন এডু গ্যাসপার।
ডগলাস দ্য সিলভা রবিবার সকালে হোয়্যাটসঅ্যাপে বলছিলেন, হো সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফুটবল খেলার পরে এখন প্রতিষ্ঠিত কোচ। তবে আমাকে এখনও ভোলেনি। মাঝেমধ্যেই দেখা-সাক্ষাৎ হয়। কিছুদিন আগে ফোনে কথা হল।" 'ব্যক্তিগত আলাপচারিতা', তা-ই হলুদ-হলুদের কিংবদন্তি ডিফেন্ডার মুখ খুললেন না ফোনালাপের বিষয়ে। তবে জানালেন, "সিলভিনহো আমাকে বারবার বলছিল এই টুর্নামেন্ট জিততেই হবে। নেইমারদের জন্য অনুশীলনেও অভিনবত্ব এনেছেন তিতের পরামর্শে।"
তবে ডার্বিতে একটিও ম্যাচ না হারা কিংবদন্তি জানাচ্ছেন, "এডু-র সঙ্গে এখন তেমন আর যোগাযোগ নেই। তবে দেখা হলে কথা হয়।"
ব্রাজিল একাদশ এমনিতে ঝড় তুলে দিয়েছে। প্রশ্ন তুলে দিয়েছে ডগলাস কোস্তা, বিস্ময় বালক ভিনিসিয়াস জুনিয়র, মার্সেলো, লুকাস মৌরা কিংবা লিভারপুলের জার্সিতে চলতি মরশুমে দুর্ধর্ষ ফর্মে থাকা ফাবিনহো-র না থাকা! বিশ্বজোড়া সমালোচনার মুখে কী বলছেন তিতের সহকারী? ডগলাস শুধু জানালেন, ব্রাজিলের জাতীয় দলে সুনির্দিষ্ট প্রোটোকল রয়েছে। স্কোয়াডের কেউ দল নির্বাচন নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে পারেন না!
ডগলাসের দুই বন্ধু-ই প্রাক্তন হয়ে যাচ্ছেন নেইমারদের সংসারে। কোপা-র সবুজ মাঠে নেইমাররা দুই অভিভাবকের জন্য চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিদায়ী সংবর্ধনা দিতে প্রস্তুত! শুধু নিজের দেশ নয়, বন্ধুদের জন্য ড্রয়িংরুমে বসে গলা ফাটাবেন ডগলাস-ও! এই কোপা ডগলাসের জন্য সত্যিই অন্যরকম।