ক্রিকেট-ফুটবলের দেশে বাস্কেটবল নিয়ে মাথাব্যথা নেই কারোর। কিভাবে খেলা হয়, কোথায় খেলা হয় এসব নিয়ে আদৌ কেউ ভাবিত নয়।
এই খেলাটা নিয়ে যদি কারোর এতটুকুও আগ্রহ থাকত তাহলে সাগর যোশী, বরুণ পিল্লাই, সত্যেন্দ্র সিং ও যোগেশ কুমার আগরওয়ালের নামগুলো বাংলার ঘরে ঘরে ঢুকে পড়ত। ঘটনাচক্রে এই চারজনই গত জুলাই মাসে বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত জাতীয় বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়নশিপে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা ছিনিয়ে এনেছেন বাংলার হয়ে।
এখানেই এঁদের গল্প শেষ নয়, গত ৫-৬ অগাস্ট শ্রীলঙ্কায় সাউথ এশিয়ান বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়নশিপে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে এলেন বরুণ, সাগররা। সত্যেন্দ্র ও যোগেশ পাসপোর্ট সমস্যায় দ্বীপরাষ্ট্রে যেতে পারেননি। তাঁদের পরিবর্তে বাংলা থেকেই মনপ্রীত সিং এবং সৌরভ সিনহা গিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: মেসিকে সেরা বলা অ্যাকোস্টার ভারতীয় ফুটবল নিয়ে ধারণাই নেই
বাস্কেটবলকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্যই খেলার ফর্ম্যাটে এসেছে পরিবর্তন। গত বছরই ফিবা (ফেডারেশন অফ ইন্টারন্যাশনাল বাস্কেটবল এসোসিয়েশন) নিয়ে এসেছে থ্রি এক্স থ্রি (৩x৩) সংস্করণ। আসন্ন এশিয়ান গেমসেও থাকছে এই নয়া নিয়মের বাস্কেটবল।
এখানে প্রতি দলে তিন জন করে খেলোয়াড় থাকবেন, একজন পরিবর্ত। হাফ কোর্টে হবে ম্যাচ। ১০ মিনিটেই ফয়সলা খেলার। এমনিতে বাস্কেটবল ৪০ মিনিটের খেলা। ফুল কোর্টে খেলা হয়। পাঁচজন কোর্টে থাকেন এবং সাতজন থাকেন বিকল্প।
বেঙ্গালুরুতে সাগররা এই প্রথম জাতীয় থ্রি এক্স থ্রি চ্যাম্পিয়নশিপ খেললেন। আর যেহেতু বাংলা চ্যাম্পিয়ন, সেহেতু তারাই সরাসরি টিম ইন্ডিয়া হয়ে শ্রীলঙ্কায় খেলার যোগ্যতা অর্জন করল। এটাই নির্বাচনের পদ্ধতি। জাতীয় চ্যাম্পিয়নরা অটোমেটিক চয়েস হিসেবে দেশের হয়ে খেলবে। শ্রীলঙ্কায় ভারত পাঁচ নম্বরে শেষ করেছিল। ভারত ও শ্রীলঙ্কা ছাড়াও বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, নেপাল এবং আফগানিস্তান অংশগ্রহণ করে এই টুর্নামেন্টে।
শুক্রবার ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশন মাঠে অনুষ্ঠিত হল ইন্ডিয়ান স্কুল বাস্কেটবল লিগের কলকাতা সংস্করণ। এখানেই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ধরা দিলেন বাংলার তথা টিম ইন্ডিয়ার সাগর যোশী। বরুণ এবং সাগরকে এদিন রাজ্য সংস্থার পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
ভারতে বাস্কেটবল খেলার গ্রহণযোগ্যতা না থাকার কারণগুলো সাগর খোলাখুলি বললেন এদিন। তাঁর কথায়, "জানেন, বাস্কেটবল কিন্তু ভবিষ্যতে ভীষণ জনপ্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। কিন্তু আমাদের পরিকাঠামো নেই, প্রচার নেই, পয়সা নেই। দেশের হয়ে খেলি, শুধু বিদেশ সফরের সময় যাতায়াত আর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে, কিন্তু একজন পেশাদার খেলোয়াড়ের কাছে টাকাটাও বড় ব্যাপার।"
আরও পড়ুন: এশিয়াডে নীরাজ বইবেন দেশের পতাকা
টিভি সম্প্রচারের ইস্যুতে সাগরের সংযোজন, "বাস্কেটবল কোথায় খেলা হয়, কখন হয়, কেউ জানতেই পারে না। এটা তো দেখানোই হয় না কোথাও। ২০১৩-১৭ পর্যন্ত টেন স্পোর্টসে ইউনাইটেড বাস্কেটবল আল্যায়েন্স দেখানো হতো। তখন কিন্তু অনেকে দেখেছেন। এখন তো কিছুই হয় না।"
সাগর মনে করছেন, থ্রি এক্স থ্রি এই খেলাকে আরও বেশি জনপ্রিয় করবে। মানুষের আগ্রহ বাড়বে বলেই মত। শ্রীলঙ্কা থেকে ফিরে একটাই আক্ষেপ সাগরের। তিনি বলছেন, "জানেন, আমরা খুব ভাল খেলেছিলাম। এক পয়েন্টের জন্য হেরেছিলাম শেষ দু'টো ম্যাচে। শ্রীলঙ্কা যদি ঘরের সমর্থন না পেত আর রেফারিং সঠিক হলে আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়ে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে পারতাম।"