ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলায় মাস তিনেক আগে জানানো হয়েছিল, শতবর্ষের প্রাক্কালে গাঁটছড়া ছিন্ন হতে পারে ইস্টবেঙ্গলে। সেই প্রতিবেদনকে সত্যি প্রমাণ করেই যেন শতবর্ষে বিচ্ছেদের রিংটোন বেজে গেল লাল-হলুদ তাঁবুতে। রবিবারেই শীর্ষ কর্তা ইনভেস্টর কোয়েসকে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ শানিয়েছিলেন ক্লাব তাঁবুতে। তারপরের দিনেই ফাটল আরও চওড়া। একাধিক প্রচারমাধ্যমে ঝাঁঝালো বিবৃতি দেন কোয়েস কর্তা অজিত আইজ্যাকও। রাতের দিকে জানা যায়, তিনি নাকি নিজের বক্তব্য থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। আপাতত শান্তির বার্তা দিচ্ছেন তিনি। যা নিয়ে গোটা দিনে নাটকীয় উত্থান পতন।
ঘটনার ট্যুইস্ট সোমবারেই। ইস্টবেঙ্গলের দুই শীর্ষ কর্তা বেঙ্গালুরু ছুটে গেলেন সকালে। সেখানে গিয়েই দুই কর্তা একপ্রস্থ বৈঠক সারলেন প্রাক্তন স্পনসর কিংফিশারের সঙ্গে। জানা গিয়েছে, মূলত, ১ তারিখে শতবর্ষের অনুষ্ঠানের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে গিয়েছিলেন তাঁরা। তবে ১ নয় অগস্টের ১৩ তারিখে শহরে ইস্টবেঙ্গলের অনুষ্ঠানে পা রাখছেন কিংফিশার কর্তারা। সেখানে ফের একবার বৈঠকের সম্ভবনা রয়েছে। সূত্রের খবর, নিয়মমাফিক আমন্ত্রণ পর্বের পাশাপাশি ক্লাবের বর্তমান বিনিয়োগ গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘাত নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
আরও পড়ুন শতবর্ষের আগেই কী ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেক’ ইস্টবেঙ্গল-কোয়েসের, জল্পনা তুঙ্গে
লজ্জা! গোষ্ঠ পালের অমূল্য পদক ‘হারিয়েছে’ মোহনবাগান!
হাবাসের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান ইস্টবেঙ্গল কোচের! শতবর্ষের আবহেই চমক ময়দানে
একান্তভাবে ফোনালাপে আবার কোয়েস গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান আবার জানিয়ে দিলেন, শতবর্ষের পরেই এই নিয়ে যা বলার জানাবেন তিনি। তারপরেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, তাহলে সরকারিভাবে সংযুক্তি ছিন্ন হওয়ার বার্তা দেবেন তিনি? গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের জন্য অবশ্য প্রস্তুত ইস্টবেঙ্গল-ও। শীর্ষ কর্তা শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানিয়ে দেন, ওরা যদি যেতে চায়, যাক! কোনও সমস্যা হবে না। তিনি জানালেন, "বর্তমানে ক্লাবের সবাই শতবর্ষ নিয়ে ব্যস্ত। তবে ওরা যদি যেতে চায়, যাক। তখন দেখা যাবে।"
এদিকে, জানা গিয়েছে, কিংফিশারই একমাত্র নয়। ইস্টবেঙ্গল কর্তারা আলোচনা শুরু করেছেন বেশ কিছু সংস্থার সঙ্গে। কিছু সংস্থা ইনভেস্টর, কিছু আবার স্পনসর হওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে কর্তারা ঠিক করেছেন, যে সংস্থা ক্লাবে বেশি পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে পারবে, তাঁদের সঙ্গেই এগোনো হবে। ইস্টবেঙ্গলে ইনভেস্টর কিংবা স্পনসর হওয়ার মূল শর্তই থাকছে, ভাল দল গঠন করে আইএসএল-এ খেলতে হবে।
শতবর্ষের আবহে অপরিসীম তিক্ততা প্রকাশ্যে এলেও, মানসিকভাবে সন্ধি-বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল বহু আগেই। গত বছরে কোয়েসকে ইনভেস্টর করে আনার পরে বারেবারেই বিভিন্ন ইস্যুতে লেগে গিয়েছে দু-পক্ষের। দল গঠন হোক বা ফেডারেশন কাপে না খেলার সিদ্ধান্ত, আইএসএল না খেলে ক্লাব জোটের সঙ্গে হাত মেলানো কিংবা ডুরান্ড কাপে যুব দল খেলানোর উদ্যোগ- প্রায় প্রতিটি পদক্ষেপেই ক্লাব কর্তাদের অন্ধকারে রেখে একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কোয়েস কর্তারা।
চলতি মরশুমে দল গঠনের কাজে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে ইস্টবেঙ্গল। মোহনবাগান যেখানে সীমিত সামর্থ্যে ভাল দল গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে, সেখানে দলের একাধিক তারকা ছেড়ে গিয়েছেন লাল-হলুদ সংসার। ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের অভিযোগ, তাঁদের পরামর্শ কানেই তোলেন নি কোয়েসের তরফে দলগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তা। জবি জাস্টিন আগেই ছেড়ে গিয়েছিলেন। তার দেখানো পথেই মোহনবাগানের জার্সি গায়ে চাপিয়েছেন চুলোভা। জনি অ্যাকোস্টাকে রিলিজ করে দেওয়ার নেপথ্যেও আঙুল উঠেছে কোয়েস কর্তাদের দিকে।
সবমিলিয়ে কোয়েস কী শতবর্ষের পরেই সরকারিভাবে নিজেদের বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত জানাবে, সেটাই নিয়ে জোর জল্পনা শুরু!