শুধু সিনিয়র দল নয়, রিজার্ভ দল নিয়েও এবার কোমর বেঁধে নামছে ইমামি ইস্টবেঙ্গল। ৪৮ ঘন্টা আগেই লাল-হলুদ শিবিরের তরফে চার কেরালা ফুটবলারকে সই করানো হয়েছিল রিজার্ভ দলে। অতুল উন্নিকৃষ্ণন, আদিল অমলের মত সন্তোষে খেলা ডিফেন্ডারকে যেমন সই করিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল, তেমন বিষ্ণু টিএম-এর মত ফরোয়ার্ডের পাশাপাশি মহম্মদ নিশাদের মত তরুণ গোলকিপারকে নিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল।
সেই রিজার্ভ দলের গোলকিপার কোচ হিসাবেই এবার নিয়ে আসা হল ময়দানি ফুটবলের পরিচিত মুখ সংগ্রাম মুখোপাধ্যায়কে। যিনি নিজের সময়ে দেশের সেরার সেরা গোলকিপার ছিলেন।
কাঁচরাপাড়ার সংগ্রাম বেড়ে উঠেছিলেন দারিদ্র্যকে সঙ্গী করে। ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান- দুই ক্লাবেই পাঁচ বছর করে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে ৪০ বছরের তারকার। খেলেছেন প্রয়াগ ইউনাইটেডেও।
পেনাল্টি শ্যুট আউট স্পেশ্যালিস্ট হিসাবে নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন। একের পর এক ম্যাচে সংগ্রামের গ্লাভস পেনাল্টি শ্যুট আউটের ভাগ্য নির্ধারণ করে দিয়েছে কলকাতা ময়দান তো বটেই ভারতীয় ফুটবলে। আইএফএ শিল্ড থেকে ফেডারেশন কাপ- একাধিকবার সংগ্রামের গ্লাভস শিরোপা এনে দিয়েছে বা ট্রফি জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে দিয়েছে সবুজ মেরুন শিবিরকে। ২০০৩-এই যেমন। মোহনবাগানের আইএফএ শিল্ড জয়ের পিছনে ছিল সংগ্রামের হাত। ঠিক তার পরের বছরেই ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে শিল্ডের ফাইনালে পৌঁছেছিল মোহনবাগান। সেই বছরেও নেপথ্যে সংগ্রামের দুর্ধর্ষ গোলকিপিং।
তবে সংগ্রামের ফুটবল কেরিয়ারের সেরা কৃতিত্ব ২০০৬-এর ফেডারেশন কাপ। মোহনবাগানকে কার্যত একার হাতে ট্রফি জিতিয়েছিলেন তিনি। কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনালে এবং ফাইনালে শ্যুট আউটে পরপর তিন ম্যাচে বাগানকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন।
আরও পড়ুন: কলকাতা ছাড়লেন মোহনবাগানে খেলা বিদেশি! এবার আইলিগ মাতাবেন আইজলের জার্সিতে
প্রবল অনুমান ক্ষমতা, রিফ্লেক্স সংগ্রামকে বাকিদের থেকে অনেকটাই আলাদা করে দিয়েছিল। বয়স বাড়লেও সেই দক্ষতায় মরচে পড়েনি সংগ্রামের। ২০০৮-২০১০'এ করিম বেঞ্চারিফার জমানাতেও পেনাল্টি শ্যুট আউট স্পেশ্যালিস্ট হিসাবে সংগ্রাম মুখোপাধ্যায় নিজের সুনাম অক্ষুন্ন রাখেন। ২০০৯/১০ সিজনে সংগ্রাম প্ৰথম একাদশে জায়গা খুঁইয়েছিলেন শিল্টন পাল উল্কার গতিতে উঠে আসায়। তবে তাতেও সংগ্রাম মাতিয়ে দিয়েছিলেন ২০০৯-এ শিল্ডের সেমিফাইনালে। প্ৰথম একাদশে না থাকলেও পরিবর্ত হিসাবে নেমে পেনাল্টি শ্যুট আউটে প্রয়াগ ইউনাইটেডকে হারিয়ে দলকে ফাইনালে পৌঁছতে সাহায্য করেন। স্ট্যানলি রোজারিওর মোহনবাগানকেও সংগ্রাম জেতান ২০১০-এ ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে ডেম্পোর বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন: দুঃসংবাদ ময়দানে! কলকাতা লিগে এবার ডার্বি হচ্ছে না
২০০৮-এ অলিভার কানের বিদায়ী ম্যাচে ঐতিহাসিক যুবভারতীতে মোহনবাগান বনাম বায়ার্ন মিউনিখ ম্যাচেও সংগ্রাম ছিলেন সবুজ মেরুন তেকাঠির নীচে। ম্যাচের পর সংগ্রাম এবং কানের হ্যান্ডশেকের পর জাতীয় মিডিয়ায় শিরোনাম হয়েছিল 'যখন ভারত এবং বিশ্বের সেরা পাশাপাশি দাঁড়ান…'।
কলকাতা ময়দানের কিংবদন্তি এই গোলকিপার শেষ খেলেছেন সাদার্ন সমিতির হয়ে। কলকাতা লিগে। কলকাতার লাল-হলুদেই কোচিং জীবন শুরু করতে চলেছেন এলজি কাপ জয়ী তারকা।
ইস্টবেঙ্গলের নতুন রিজার্ভ দলকে আগামীর জন্য প্রস্তুত করতে পারবেন তিনি, সেটাই এখন দেখার।