একদমই ভাল নেই তিনি। তিনি, ভারতীয় ফুটবলের 'বড়ে মিঞা', কলকাতা ময়দানের আদরের মহম্মদ হাবিব। প্রাক্তন ফুটবল-তারকা মহম্মদ হাবিব দুরারোগ্য স্নায়ুর রোগে ভুগছেন। স্মৃতি শক্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে পুরোনো স্মৃতি। কাউকে সেভাবে চিনতেও পারেন না। অসংলগ্ন কথা বলেন। চলাফেরার শক্তিও ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। দিন যত এগোচ্ছে একটু একটু করে 'বড়ে মিঞা' যেন আরও অথর্ব হয়ে পড়ছেন।
অসুস্থ হাবিবের চিকিৎসায় বেশ সমস্যায় পড়েছেন পরিবার। প্রতি মাসে চিকিৎসা খরচ বেড়েই চলেছে। হাবিবের জন্য এবার এগিয়ে এল ইস্টবেঙ্গল ক্লাব। শারীরিক অবস্থার খবর লাল হলুদে আসা মাত্র দরাজহস্ত হল ক্লাব।
আরও পড়ুন: মোহনবাগান থেকে ইস্টবেঙ্গলে! বেঞ্চারিফার স্টাফ যোগ দিলেন লাল-হলুদে
কয়েকদিন আগেই আইএফএ-কে সাহায্য করে শিরোনামে উঠে এসেছিল ইস্টবেঙ্গল। এবার সোনার সময়ের অন্যতম সেরা নক্ষত্রের পাশে দাঁড়াতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করল না ইস্টবেঙ্গল। প্রাথমিক চিকিৎসা খরচ হিসাবে হাবিবের পরিবারকে ১ লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ক্লাবের তরফে।
প্রাথমিক পর্যায়ে এক লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে মহম্মদ হাবিবের পরিবারের কাছে। ভবিষ্যতে আরও অর্থ সাহায্যের জন্য প্রস্তুত ক্লাব। এমনটাই জানানো হয়েছে ক্লাবের পক্ষ থেকে।
ময়দানের এক এবং অনন্য নক্ষত্র মহম্মদ হাবিব। ১৯৬৬ সালে সুদূর হায়দারাবাদ থেকে কলকাতায় এসে যোগ দিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে। তারপর থেকে দীর্ঘ ১৮ বছর তিনি ময়দানে দাপিয়ে খেলেছেন, যার মধ্যে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবেই খেলেছেন ৮ বছর। এই ৮ বছরে তিনি সমস্ত টুর্নামেন্ট মিলিয়ে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে গোল করেছেন ১১৩ টি। ১৯৭০-’৭৪ হাবিব যখন ইস্টবেঙ্গলে, এক হাজার ন’শো বত্রিশ দিন ইস্টবেঙ্গলকে হারাতে পারেনি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগান। লিগ-শিল্ড-ডুরান্ড-রোভার্স মিলিয়ে ওই পাঁচ বছরে জিতেছেন ১৩টা ট্রফি।
আরও পড়ুন: পা ভেঙে কোচিংয়ের স্বপ্ন পূরণ হয়নি! নতুন ভূমিকায় ইস্টবেঙ্গলে প্রত্যাবর্তন মৃদুলের
পাঁচটা ফাইনালে গোল রয়েছে তাঁর। ‘মিস্টার ফাইটার’ বলতে ভারতীয় ফুটবল বরাবর যাঁকে বোঝে, ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ডার্বিতে সেই হাবিবের ১০টা গোল, আর ওই ১০ টাই ইস্টবেঙ্গলের হয়ে মোহনবাগান জালে পাঠানো। বিদেশি ক্লাবগুলোর বিপক্ষে হাবিবের লড়াকু খেলা আজও স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসের পাতায়।
ক্লাবে খেলার পাশাপাশি হাবিব একাধারে ১০ বছর ভারতের জাতীয় দলের হয়ে কৃতিত্বের সাথে খেলেছেন। বাংলার হয়ে সন্তোষ ট্রফিতেও অনেক সাফল্য এনে দিয়েছেন।
১৯৮০ সালে ‘অর্জুন পুরস্কার’ এবং ২০১৫ সালে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের ‘ভারত গৌরব’ সম্মানে সম্মানিতও হয়েছেন মহম্মদ হাবিব। সেই ফুটবলের দুরবস্থা য় মন খারাপ ময়দানের। কঠিন সময়ে পাশে দাঁড়িয়ে অন্য নজির গড়ল ইস্টবেঙ্গল।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন